Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে রুদ্ধশ্বাস জয় পাকিস্তানের

মার্চ ১, ২০১৫, ১২:৩২ পিএম


জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে রুদ্ধশ্বাস জয় পাকিস্তানের



পাকিস্তান জিম্বাবুয়েকে দিয়েছে ২৩৬ রানের জয়ের টার্গেট। খুব অসাধ্য কিছু নয়। ক্রিকেট রোমাঞ্চের অনেকটাই দেখালো জিম্বাবুয়ে।
একবার জিম্বাবুয়ের দিকে, আরেকবার পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকে পড়লো ম্যাচ। শেষ পর্যন্ত সেই প্রবাদ বাক্যটাই সত্য হলো। শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। সেই শেষটা ভালো করলো পাকিস্তান জিম্বাবুয়েকে ২০ রানে হারিয়ে। ২১৫ রানে অল আউট জিম্বাবুয়ে ২ বল বাকি থাকতে টানা দুই হারের পর একটি জয় নিয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের টিকিয়ে রাখলো পাকিস্তান।

৮ উইকেট হারানোর পর জিম্বাবুয়ের চিগুম্বুরা ও পানিয়াঙ্গারা জুটির ওপর বর্তালো ম্যাচ জয়ের দায়িত্ব। তখন জিততে ৬২ বলে ৬৮ রান দরকার তাদের। মিসবাহ তার বোলারদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বল করাচ্ছেন। তাতে নিয়মিত একেকটা বিরতিতে সাফল্য আসছে। কিন্তু এই দুইয়ের হাতে নিরাপদ ছিল না পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত হিসেবটা দাঁড়ালো ১২ বলে ২৮ রানের। ৪৯তম ওভারে এই ম্যাচে দুরন্ত পারফর্ম করা ফাস্ট বোলার ইরফান ৪ রান দিলেন। শেষ ওভারে আর জিম্বাবুয়ের ভালো হলো না। শেষ ভালোয় আলোকিত হয়ে নাটকীয় এক জয় পেল পাকিস্তান। সেই সাথে স্বস্তি আসলো তাদের শিবিরে।

ইরফান এদিন প্রথম দুই উইকেট নিয়ে পাকিস্তানি বোলারদের সামনে উদাহরণ দেখালেন। সেই পথে হাটলো পাকিস্তানের অন্য তিন পেসার সোহেল, ওয়াহাব ও রাহাত আলি। এর মাঝে তৃতীয় উইকেটে মাসাকাদজা ও বেন্ড্রন টেলর গড়লেন ৫২ রানের জুটি। বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন তারা। ফিরতি স্পেলে মাসাকদাজাকে (২৯) ফিরিয়ে দিয়ে ম্যাচে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আনেন ইরফান। এরপর টেলর-উইলিয়ামস মিলে ৫৪ রানের জুটি দিলেন। তাতে ম্যাচ আবার জিম্বাবুয়ের দিকে ঝুঁকে পড়লো। নার্ভের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখলেন পাকিস্তানি বোলাররা। টেলরকে (৫০) ফিরিয়ে দিয়ে ওয়াহাব আবার ফেরালেন পাকিস্তানকে। আর ৩৭তম ওভারে এই ওয়াহাবই হানলেন জোড়া আঘাত। আরভিন (৩৫) ও মুপারিয়াকে (০) বিদায় করে ম্যাচটা নিয়ে এলেন পাকিস্তানের নি্যন্ত্রণে। সেখান থেকে ম্যাচটা জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন চিগুম্বুরা (৩৫) ও পানিয়াঙ্গারা (১০)। শেষ পর্যন্ত আর তা হয়নি। ক্যারিয়ার সেরা বল করেছেন ইরফান। ৩০ রানে ৪ উইকেট তার। আর ব্যাটিংয়ে ফিফটির পর বল হাতে ৪৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ওয়াহাব হয়েছেন ম্যাচের সেরা। পাকিস্তানকে বড় বিপদ থেকে মুক্ত করায় ওয়াহাবের ভূমিকাটাই যে সবচেয়ে বেশি!    

মিসবাহ-উল হকের ক্যারিয়ারে কোনো সেঞ্চুরি নেই। আর এবারের বিশ্বকাপে দলকে বাঁচানোর গুরুতর এক দায়িত্ব তার। ব্যাটিংয়ে ভালো করতে পারছে না পাকিস্তান। সে কারণে যথেষ্ট সমালোচনা বিদ্ধ করছে মিসবাহ ও তার দলকে। জিম্বাবুয়ের মতো দলের বিপক্ষেও পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের গল্পটা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতারই হয়ে রইলো। মিসবাহ একাকী যোদ্ধার মতো যুদ্ধ করলেন। তারপর হার মানলেন ৭৩ রানে গিয়ে। সেঞ্চুরির সুবাস পেয়েছিলেন। কিন্তু এই ইনিংসের সেরা বোলার চাতারার কাছে হার মানতে হলো বর্ষীয়ান মিসবাহকে। ১২১ বলে ৭৩ রানের যে ইনিংসটি খেলেছেন তাতে ৩টি মাত্র চার। এটি একজন ক্রিকেট শ্রমিকের ব্যাট করার গল্পও বটে। সেই শ্রমিক যার ঘামে লেখা হয় দলের লড়ার গল্প। লেখা হয় লড়ার মতো একটু পুঁজি গড়ার গল্প। সেই সাথে বোলার ওয়াহাব রিয়াজের অপরাজিত ৫৪ রান পাকিস্তানের মেরুদণ্ডটা কিছুটা সোজা রেখেছে। ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৩৫ রান করতে পেরেছে পাকিস্তান।
দুই ওপেনার নাসির জামসেদ ও আহমেদ শেহজাদ দলের ৪ রানের মধ্যে নেই। পেসার চাতারার বলে দুজনকেই ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয়েছে।

এরপর সহযোদ্ধা তরুণ হারিস সোহেলের সাথে মিসবাহর ধীরগতির ব্যাটিংয়ের গল্প লেখা হয়েছে। দুজন মিলে জিম্বাবুয়ের বোলারদের যেন বিশ্বের সেরা বোলার বানিয়ে দিয়েছেন! তেমনটাই মনে হয়েছে। হঠাৎ করে স্কোরের দিকে তাকিয়ে যে কেউ মনে করতে পারতো যে রঙিন পোশাকে টেস্টের খেলা হচ্ছে গ্যাবায়। এটা বিশ্বকাপের একটি ম্যাচ, পাকিস্তান খেলছে জিম্বাবুয়ের সাথে তা কেইবা মানতে চাইতো! স্কোরকার্ড যে সেই কথা বলে না। দুজন মিলে প্রতিরোধের গল্প লিখতে গিয়ে এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে ধীরগতির ব্যাটিংয়ের গল্প লিখেছেন। ৫৪ রানের জুটি গড়েছেন মিসবাহ আর হারিস। খেলেছেন ১৬.২ ওভার। তার মানে ৯৮ বল খেলেছেন দুজন মিলে।
আর পাকিস্তানের স্কোরের হালটা একবার দেখুন। ৫ ওভারে ২ উইকেটে ৫ রান। ১০ ওভারে ১৪। ১৫ ওভারে ৩৩। ২০ ওভারে ৫৮। ২৫ ওভারে ৭৭ রানে ৩ উইকেট। এই হলো পাকিস্তানের প্রথম ২৫ ওভারের শ্রীহীন ব্যাটিংয়ের চিত্র।

হারিস ৪৪ বলে ২৭ রান করে ফিরে যাবার পর উমর আকমল এসে এক প্রান্তে কিছুটা গতির সঞ্চার করেছিলেন। চতুর্থ উইকেটে তাতে মিসবাহ এর সাথে ৬৯ রানের জুটি হয়েছে। জোড়া আঘাতে ইনিংসের মাঝপথে আবার পাকিস্তানকে বিপদে ফেলেছেন স্পিনার শন উইলিয়ামস। তিনি উমরকে (৪২ বলে ৩৩) ফিরিয়ে দেবার ওভারেই শহীদ আফ্রিদিকে শিকার করেছেন। জন্মদিনে ২ বলে ডাক মেরে ফিরেছেন আফ্রিদি। ব্যর্থতা তার দলের প্রয়োজনে দাঁড়াতে না পারার।

এই জোড়া আঘাতের পর শোয়েব মাকসুদ আর মিসবাহ জুটি বেধেছেন। মাকসুদ ২১ রান করেছেন। পরে ওয়াহাবের সাথে ৪৭ রানের জুটি হয়েছে মিসবাহর। বলার মতো রানই এসেছে ৩৫ থেকে ৪৫ ওভারে। এই ১০ ওভারে ৫৭ রান করেছে পাকিস্তান। ওয়াহাব শেষটায় দলকে টেনে নিয়ে গেছেন। ৪৬ বলে অপরাজিত ৫৪ রান করে দলকে লড়ার মতো একটা পুঁজি দিয়েছেন। ৬টি চার ও একটি ছক্কা মেরেছেন তিনি। বোলার ওয়াহাব ফিফটি করে সেই সাথে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের কি লজ্জাটাই না দিলেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ২৩৫/৭ (জামশেদ ১, শেহজাদ ০, হারিস ২৭, মিসবাহ ৭৩, আকমল ৩৩, আফ্রিদি ০, মাকসুদ ২১, ওয়াহাব ৫৪*, সোহেল ৬*; চাটারা ৩/৩৫, উইলিয়ামস ২/৪৮, রাজা ১/৩৪, মুপারিওয়া ১/৩৬)

জিম্বাবুয়ে: ৪৯.৪ (চিবাবা ৯, রাজা ৮, মাসাকাদজা ২৯, টেইলর ৫০, উইলিয়ামস ৩৩, আরভিন ১৪, মায়ার ৮, চিগুম্বুরা ৩৫, মুপারিওয়া ০, পানিয়াঙ্গারা ১০, চাটারা ০*; ইরফান ৪/৩০, ওয়াহাব ৪/৪৫, রাহাত ১/৩৭)

ম্যাচ সেরা: ওয়াহাব রিয়াজ।