Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

আগামী বাজেট ৩ লাখ কোটি টাকার

এপ্রিল ৫, ২০১৫, ১০:২৪ এএম


আগামী বাজেট ৩ লাখ কোটি টাকার

 আগামী অর্থবছরের বাজেট তিন লাখ কোটি টাকার নিচে থাকবে? নাকি তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে? অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাথায় এখন এই দুই অঙ্কই বেশি ঘুরপাক খাচ্ছে।

এত দিন পর্যন্ত প্রাথমিক হিসাব-নিকাশ করে দেখা গিয়েছিল আগামী ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার তিন লাখ কোটি টাকার নিচে রাখাই সম্ভব হবে। আর সেটি করা গেলে অন্যান্য বছরের বাজেটের অঙ্কের সাথে এর একটি ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।

কিন্তু রাজনৈতিক অভিলাষকে প্রাধান্য দিয়ে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বেশ ‘চাপাচাপি’ করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে সমুদ্রবন্দর নির্মাণ। আর সেটি যদি শেষ পর্যন্ত ঘটে যায় তবে আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছেন বাজেট বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা।

ওপর মহল থেকে বলার চেষ্টা করা হচ্ছে— বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন বাজেটটি হবে সরকারের জন্য ‘যারপরনাই’ গুরুত্বপূর্ণ। বাস্তবায়ন করা যাক বা না যাক অথবা বাস্তবায়নযোগ্য হোক না নাই হোক, অন্ততপক্ষে গোটা তিনেক বড় প্রকল্প এই বাজেটে ঢুকিয়ে দেয়া হবে যাতে করে জনগণের কাছে দৃশ্যমান হয় এই সরকার ২০১৯ সাল পর্যন্ত থাকলে তাদের জন্য মঙ্গলই হবে! প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য টাকা কোথা থেকে আসবে তার কোনো ‘বালাই’ নেই, কিন্তু দেখাতে হবে এগুলোর বিপরীতে ‘হাজার হাজার কোটি’ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তাতে যদি বাজেটের আকার তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় তাতে কারই বা কী আসে যায়। বলার চেষ্টা করা হচ্ছে, বাজেট ঘাটতি নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এটি ৫ ভাগ (জিডিপি) ছাড়িয়ে গেলে ‘তাতে কার কীবা আসে যায়’!

আর তিন লাখ কোটি বা তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া বাজেটটিই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী জুন মাসের ৪ তারিখে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করার জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত আগামী অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা।

তবে আগামী এডিপির আকার ৯০ হাজার কোটি টাকায় ‘ঠেলে’ দেয়ারও চেষ্টা তদবির চলছে। এডিপিতে রাখা হচ্ছে অনেক ‘জনতুষ্টিকর’ প্রকল্প, সেখানে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে রাখা হবে, আবার অনেক প্রকল্প থাকবে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত। আগামী অর্থবছরে মোট রাজস্ব প্রাপ্তির প্রাক্কলন করা হচ্ছে দুই লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা।

এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতায় প্রাপ্তি নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৭৬ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা রয়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা।

প্রতি বছর ঋণের সুদব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। আগামী অর্থবছরেও তার কোনো ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাবে না। চলতি অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধের মাত্রা নির্ধারণ করা রয়েছে ২৯ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা। সেটি আগামী অর্থবছরে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ‘ছুঁই ছুঁই’ করবে বলে জানা গেছে।

তবে ইতোমধ্যে চলতি অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সুদ পরিশোধেই ব্যয় হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। সেটি আগামী কয় মাসে ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধেই ব্যয় করতে হবে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ।

ভর্তুকি কমছে তেলের দাম কমার কারণে। কিন্তু অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতা খাতে। কারণ আগামী অর্থবছর থেকে সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাদের জন্য নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য বাজেটে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখা হচ্ছে।

অন্য দিকে, বিশ্বব্যাংক ইঙ্গিত দিয়েছে তারা আগামী অর্থবছরে সরকারকে বাজেট সহায়তা বাবদ কোনো অর্থ দেবে না।

আশা করা হচ্ছিল, সংস্থাটির কাছ থেকে ৫০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে। বাজেট বাস্তবায়নে অর্থ সংস্থান করাই হবে আগামীতে সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

সেটা আমাদের বর্ষীয়ান অর্থমন্ত্রী কিভাবে ম্যানেজ করবেন তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো খানিকটা সময়। তবে অভিজ্ঞতা বলে ঘাটতি পূরণের জন্য তাকে এবারো ব্যাংকিং খাত ও সঞ্চয়পত্রের দিকেই বেশি ঝুঁকতে হবে।