Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

শিক্ষাঙ্গনে যৌন হয়রানি....!

মে ১৩, ২০১৫, ০৭:০০ এএম


শিক্ষাঙ্গনে যৌন হয়রানি....!

 দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠকে বলা হয় ‘বিশ্ববিদ্যালয়’। যা অনেকেই চেনে ইউনিভার্সিটি হিসেবে। অশিক্ষিত বা রিক্সাওয়ালারা ভাল চেনে ভার্সিটি বললে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। এই নন্দিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টিত হয় ১৯২১ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৮, ৬৯ এর গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা পরবর্তীতে হয়েছে দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি। অনেকেই হয়েছেন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী। অনেকেই হয়েছেন রাষ্ট্রদুত থেকে নামি দামী শিক্ষক। দেশকে মেধাশুন্য করার লক্ষে পাক বাহিনীর পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে সর্বপ্রথম হত্যা করা হয়।

 শিক্ষকের পবীত্র রক্তে ধোয়া পতাকার নীচে বসে সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অবিরাম করে চলেছে ছাত্রী নিপীড়ন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ বছরে ২০ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে য়ৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ তদন্তে গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। কিন্তু অদ্যাবধি কোন তদন্তই আলোর মুখ দেখেনি। হয়নি দোষী শিক্ষকদের বিচার। ফাইল চাপা পড়তে পড়তে তা তলিয়ে গেছে আটলান্টিক সাগরে। জানা গেছে ২০১০ সাল থেকে  দেশের এই শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে ২০ জনেরও বেশী শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। এরমধ্যে আরবী বিভাগের অধ্যাপক টিএম ফকরুদ্দিনকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করার দাবিতে গত ৮ই এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য হন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।


২০১২ সালের ১৫ই অক্টোবর ছাত্রীর সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায়। কিন্তু মজার ব্যাপার সে ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও আজ পর্যন্ত সেই কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। ২০১৪ সালে ১৫ই সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যতত্ব বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে একই ভিাগের এক ছাত্রী অভিযোগ দায়ের করেন। সাময়িকভাবে ঐ শিক্ষককে বরখাস্ত করা হলেও তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি আজও। একইভাবে ২০১০ সালে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের তৎকালীন চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন, ২০১১ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এমরান হোসেন, উর্দু বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. মাহমুদুল হাসান ও সহকারী অধ্যাপক ইসরাফিল, ফারসি ভাষা সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক মুহিত আল রশিদ, ২০১২ সালে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুর রহমান এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও আজোবধি তদন্তের প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।

 ২০০৯ সালের ১৪ ই মে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি করার নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। এর ৫ বছর পর ২০১৪ সালে ঢাবিতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠন করা হয়েছে। অধ্যাপক নাসরিন আহমাদকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটির সদস্যরা জানান  এখনো পর্যন্ত কোন মেয়ে যৌন হয়রানি হয়েছে বলে অভিযোগ দেয়নি। তবে এই কমিটি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পহেলা বৈশাখে সংঘটিত যৌন নিপীড়নের উপর কাজ  করছেন। প্রিয় পাঠক, এখানেই শেষ নয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেও শিক্ষকরা সন্ত্রাসীর ভুমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অনেক ছাত্রীর অভিযোগ তারা নিজেদের শিক্ষকের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। একসময় এ বিষয়টি খুব একটা প্রকাশ হতোনা। কিন্তু বর্তমানে মেয়েরা সচেতন হওয়ায় নিকৃষ্ট এবং দুঃখজনক ঘটনাগুলো প্রকাশ পাচ্ছে। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্বেও এবং প্রতিরোধ বিষয়ক সেল গঠিত হলেও তা সম্পূর্ণ নিষ্ক্রীয়। দুশ্চরিত্রবান শিক্ষকেরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে পুরো ঘটনাকে ধামা চাপা দিয়ে দিচ্ছেন।

যার ফলে শিক্ষকদের মধ্যেও যৌন হয়রানির প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকেই আছেন মুখ বুজে নিজের ভবিষ্যৎ এবং উচ্চ শিক্ষার ডিগ্রী নেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে শিক্ষক কেন এমন হবে? কী করে সম্ভব একজন শিক্ষক হয়ে নিজের মেয়ের বয়সের কাউকে যৌন হয়রানি করা। বিবেকের কাছে ঐ লম্পট শিক্ষক কি কখনও প্রতারিত হয়না? শিক্ষক কর্তৃক যৌন নিপিড়নের বিচার আজ পর্যন্ত তেমন হয়নি বিধায় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বাঁধন একসময় ছাত্রদের দ্বারা চরমভাবে লাঞ্ছিত হন। এবার আরো ভয়ঙ্কর ক্ষমতা দেখালো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। দিনে দুপুরে বিবস্ত্র করে লাঞ্ছিত  করে এক নিরীহ ছাত্রীকে। যৌন হয়রানি শিক্ষকদের একটি প্রিয় সাবজেক্ট হওয়ায় সে বিষয়ে সারা দেশ উথাল-পাতাল হলেও দেশের কোন শিক্ষক বা কোন শিক্ষিকা এ ব্যাপারে কোন প্রতিবাদ করেনি।  দেশে অনেক বড় বড় রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংগঠন তেমন কোন প্রতিবাদ করেনি যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে।


এ ছাড়া স্কুলের শিক্ষকরাও মেতে উঠেছে নারকীয় এই যৌন হয়রানি, নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণের মত জঘন্য কাজে। সমাজ আজ বড় অনিরাপদ আমাদের মা, বোন, মেয়েদের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকাকেও নির্যাতন সহ যৌন হয়রানি করতে একজন ছাত্র দ্বিধাবোধ করছে না। চারিদিকে হায়েনারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি মানুষের  নেই কোন আস্থা। কারণ তারাও নারী নির্যাতন সহ যৌন হয়রানিতে কম যাচ্ছে না। নারীরা যেন গৃহবন্ধী হয়ে পড়েছে। সকলেই নারীর কথা বলে নারী অধিকারের কথা বলে কিন্তু বাস্তবে তার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। ধর্ষণ বেড়েছে গাণিতিক হারে। কোন ধর্ষকের বিচারে শাস্তি না হয়ে বেকসুর খালাস পেয়ে যাচ্ছে। আইন কোন অপরাধীর পায়ে পরাতে পারছেনা কোন শিকল। কোন পথে হাটছে আমাদের সমাজ তা আমরা জানিনা। সভ্য সমাজ যেন গৃহবন্ধী হয়ে পড়েছে। মুক্তি চাই এ মুহুর্তে অস্থির সমাজ থেকে।