Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকারীদের ছাড় নেই: নাছির

মে ২৭, ২০১৫, ০১:৪৪ পিএম


রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকারীদের ছাড় নেই: নাছির

রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকারীদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিরোধে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতাও কামনা করেছেন তিনি। বুধবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। আসন্ন রমজান উপলক্ষে অত্যাবশ্যকীয় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

সচেতনতার মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা যায় উল্লেখ করে আ জ ম নাছির বলেন, ‘প্রশাসন কিংবা সরকারের একার পক্ষে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমদানিকারক থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত সকলের মধ্যে একটি সমন্বয় থাকতে হবে। আর কোন ব্যবসায়ীরা কৃত্রিমভাবে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করছে সেটি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে কোন ছাড় নেই। আমি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবো। ’

রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকারীরা বিকৃত মানসিকতার অধিকারী উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করে লাভ করবে সেটি স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে বা কোন অনুষ্ঠানকে পুঁজি করে যারা সারা বছরের মুনাফা এক মাসে করতে চায় তারা বিকৃত মানসিকতার লোক। তাই সবার আগে নিজের মন মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে।  দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। ’ আ জ ম নাছির বলেন, বাজার মনিটরিং করার জন্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কয়েকটি টিম কাজ করবে। এছাড়া বিভিন্ন বাজারে সিটি কর্পোরেশন থেকে মূল্য তালিকা দেওয়া হবে।  বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সিটি কর্পোরেশন সমন্বয় করে কাজ করবে। এছাড়া রমজান মাসে যাতে সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত বাজারগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে সেজন্য পরিচ্ছন্ন বিভাগ দিনরাত কাজ করবে বলে জানান তিনি।

দ্রব্যমূল্য রোধে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলরদের কাজ করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, কাউন্সিলররা যদি সঠিকভাবে কাজ না করেন তবে উন্নয়ন কাজের জন্য কোন বরাদ্দ দেওয়া হবে না। আপনারা আমার কাছে আটকানো। ভালভাবে কাজ করলে বরাদ্দও ভাল পাবেন। তাই রমজানে জনগণের সেবা করুন।  আপনাদের পাওনা ঠিকভাবে পেয়ে যাবেন। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্যবসায়ীদের অবদান অপরিসীম। দেশের পাশাপাশি জনগণের কথাও চিন্তা করতে হবে।  কম লাভ করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা প্রয়োজন। এছাড়া যারা খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মেশায় বা ওজনে কম দেয় তাদের সর্তক হওয়া প্রয়োজন এবং এ অবৈধ পথ পরিহার করা জরুরী। সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘কিছু ব্যবসায়ীর প্রবণতা আছে সারা বছর যা লাভ করিনা কেন রমজান মাসে অধিক লাভ করতেই হবে।  রোজার সময় বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ানো উচিত নয়।  এছাড়া রোজার সময় খাদ্যে-তেলে ভেজাল মেশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এ অবস্থা পরিহার না করলে আইন প্রয়োগ করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা প্রশাসক বলেন, ইতিমধ্যে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধে দুইটি টিম কাজ করছে। রমজানের পূর্বে আরও চারটিসহ মোট ছয়টি টিম কাজ করবে।  বাজার মনিটরিং এর পাশাপাশি তারা খাদ্যে ভেজাল মেশানো হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখবে। প্রমাণ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়ে জেল জরিমানা করবে। এছাড়া টিসিবির কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে বলে জানান তিনি। ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, আপনাদের প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে। তাই আমরা খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করিনা। যাতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোন প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি না হয়। তাই ব্যবসায়ীরাও আমাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের মূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। এছাড়া কাঁচা বাজারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।
মতবিনিময় সভায় চিটাগাং চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ব্যবসায়ীদের মাঝে সৎভাবে ব্যবসা করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অধিক মুনাফা আদায় করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

ব্যবসায়ীদের তিন টাকা লাভ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তিন টাকা লাভ করলে সেটি ক্রেতাদের ওপর চাপ হয় না। কিন্তু যখন ১০ টাকা কিংবা এর অধিক লাভ করবেন তখন তা ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। এছাড়া পণ্য পরিবহনে হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি নিয়েও সমালোচনা করেন চেম্বার সভাপতি। তিনি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধে কিছু পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, হাইওয়ে পুলিশ পথে পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। জোর করে চাঁদা আদায় করে। এ অবস্থা থেকে ব্যবসায়ীরা মুক্তি চায়। এছাড়া বন্দরে খাদ্য পণ্যগুলো দ্রুত খালাস করার ব্যবস্থা করা জরুরী। ভেজাল ও ফরমালিন রোধে প্রশাসনকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। মাহবুব আলম বলেন, প্রত্যেক বছরের মতো এ বছরও চেম্বারের পক্ষ থেকে একটি কো অর্ডিনেশন সেল তৈরি করা হবে। ছয়টি গাড়ীর মাধ্যমে ১০টি পয়েন্টে কম দামে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা হবে। এক্ষেত্রে চেম্বারের মতো সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। মতবিনিময় সভায় নগর পুলিশের উপ কমিশনার কামরুল আমিন, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. শহীদুল্লাহ, বিজিবির উপ অধিনায়ক মেজর তানভীর মাহমুদ, চিটাগাং চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমেদ, আমদানিকারক আবুল বশর চৌধুরী, চেম্বারের পরিচালক ছগির আহমেদ, ক্যাব এর সভাপতি এসএম নাজের হোসেন, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ছালামত আলী, রেস্তোঁরা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন তালুকদার, টিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।