Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে যেই সিদ্ধান্ত প্রয়োজন নেয়া হবে : নোবিপ্রবি ভিসি

জানুয়ারি ১১, ২০২১, ০৮:১০ পিএম


শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে যেই সিদ্ধান্ত প্রয়োজন নেয়া হবে : নোবিপ্রবি ভিসি

নোয়াখালী জেলার সোনাপুর থেকে দক্ষিণে ২০০৬ সালের ২২ জুন যাত্রা শুরু করে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে আট হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর জন্য আছেন তিন শতাধিক শিক্ষক ও চার শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। আরো আছে ছয়টি অনুষদ, দুটি ইনস্টিটিউট ও ২৮টি বিভাগ। সমপ্রতি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও বিভিন্ন সমস্যা ও শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবনা নিয়ে ভিসি প্রফেসর ড. দিদার-উল-আলমের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতে কথা বলেছেন আমার সংবাদের নোবিপ্রবি প্রতিনিধি মাইনুদ্দিন পাঠান

আমার সংবাদ : গত দেড় বছরে বিশ্ববিদ্যালয়কে কতটা গবেষণামুখী করতে পেরেছেন এবং এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালনে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রতি আপনার অনুভূতি কি?

ভিসি : বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ইনস্ট্রুমেন্টের তুলনায় শিক্ষার্থীরা গবেষণায় অনেক এগিয়ে আছে। তবে ডিপার্টমেন্টের ল্যাবগুলো আরও উন্নয়ন করার পরিকল্পনা চলছে। তাহলে শিক্ষার্থীরা গবেষণায় আরও এগিয়ে যাবে। আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে এখনো গবেষণা করি এবং গবেষণাকে ভালোবাসি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক আন্তরিক। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও সকল কার্যক্রম সুন্দরভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।

আমার সংবাদ :  দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সেশন জটের আশঙ্কায় ছিলো সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এখন শিক্ষার্থীদের সেশনজট থেকে মুক্তি দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে কি?

ভিসি:  আমরা শিক্ষার্থীদেরকে অনলাইনে তাদের কোর্স সম্পন্ন করেছি। যেকোনো ডিপার্টমেন্ট চাইলে সেমিস্টার দিতে পারবে সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এ ছাড়া ক্যাম্পাস খোলার পর দুই সেমিস্টারও একসাথে দিতে পারবে। মোট কথা, শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে যেই সিদ্ধান্ত প্রয়োজন আমরা সেই সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত।

আমার সংবাদ :  দীর্ঘদিন সালাম হল বন্ধ থাকায় অতি দ্রুত সালাম হল সংস্কার ও চালু করার দাবি শিক্ষার্থীদের। সেই সাথে ছেলেদের জন্য নতুন হল নির্মাণের দাবিও তুলেছে শিক্ষার্থীরা। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে কি-না। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু হলে কখন থেকে শিক্ষার্থীরা উঠতে পারবে?

ভিসি : কিছু সমস্যার কারণে সালাম সংস্কার কার্যক্রম খুব ধীরে এগোচ্ছে। একই সাথে হলের কয়েকটি কাজ চলছে সংস্কার, ফার্নিচার ও বিদ্যুতের কাজ। আশা করি ক্যাম্পাস খুললেই হল চালু করা সম্ভব হবে। নতুন হল করার বিষয়ে পরিকল্পনা আছে। ক্যাম্পাস খুললে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। বঙ্গবন্ধু হলের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর হল চালু হবে এবং শিক্ষার্থীরা নিয়মানুযায়ী হলে উঠবে।

আমার সংবাদ : হলের ডাইনিংগুলোতে খাবারের মান অত্যন্ত নিম্নমানের এবং দামও বেশি। ভর্তুকি বরাদ্দ করার দাবি তুলেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি ভাবছে?

ভিসি : হলের ভর্তুকির জন্য সরকার থেকে আলাদা বাজেট দেয়া হয়। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হবে যাতে ডাইনিংগুলোতে ভর্তুকির ব্যবস্থা করা হয়।

আমার সংবাদ : অন্যান্য ভার্সিটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য জিমনেশিয়াম, মুক্তমঞ্চ, টিএসসি ও সুইমিং পুল থাকলেও আমাদের নেই। এ ব্যাপারে প্রশাসনের বক্তব্য কি?

ভিসি : জিমনেসিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দরকার আছে। জিমনেসিয়াম এর বিষয়ে একটি এপ্লিকেশন সাবমিট করা হয়েছে অনুমোদন পেলেই আমরা কাজ শুরু করবো। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে যেসকল ঝোপঝাড় রয়েছে সেগুলো পরিষ্কার করে মুক্তমঞ্চ ও টিএসসি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা আমরা ইতোমধ্যে করেছি।

আমার সংবাদ : লাইব্রেরিতে নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে বই ও রিসোর্স। ই-লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার দাবিও তুলেছে শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে আপনাদের কোনো পরিকল্পনা আছে কি-না?

ভিসি : লাইব্রেরিতে আগের থেকে পর্যাপ্ত বই এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্যও আরও প্রয়োজন হলে আমরা চেষ্টা করবো। ই-লাইব্রেরির বিষয়ে শিক্ষার্থীরা সাইবার সেন্টার বরাবর আবেদন করলে আশা করি সাইবার সেন্টার এটা নিয়ে কাজ করবে।

আমার সংবাদ : পর্যাপ্ত সংখ্যক ক্লাসরুমের সংকটে ভুগছে অনেক ডিপার্টমেন্ট। এক্ষেত্রে একাডেমিক ভবন-৩ চালু হলে হয়তো এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। কবে নাগাদ শেষ হতে পারে একাডেমিক ভবন-৩ এর কাজ?

ভিসি : ঠিকাদারিজনিত কিছু কারণে একাডেমিক ভবন-৩ এর কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় নির্মাণকাজ সম্পন্ন হতে আরও সময় লাগবে। তবে এক্ষেত্রে যে তিনতলা সম্পন্ন হয়েছে সেটাকে ঠিক করে ক্লাস রুমের জন্য প্রস্তুত করা হলে শিক্ষার্থীরা ক্লাস কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে।

আমার সংবাদ : ল্যাব নির্ভর অনেক ডিপার্টমেন্ট গুলোতে দেখা যায় যে, ভালো মানের ল্যাব নেই। তাই ল্যাব প্রতিষ্ঠা ও ল্যাবের মান বৃদ্ধি করার দাবি শিক্ষার্থীদের। এ বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

ভিসি : কোন কোন ডিপার্টমেন্টে ল্যাব প্রয়োজন এবং কোন ডিপার্টমেন্টে ল্যাবের মানোন্নয়ন প্রয়োজন সবগুলো তথ্য আমরা সংগ্রহ করে তালিকা তৈরি করেছি। খুব শিগগিরই আমরা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করবো।

আমার সংবাদ : বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়না স্বরূপ। তাই সমস্ত তথ্য ওয়েবসাইটে যথাযথভাবে তুলে ধরা অত্যন্ত প্রয়োজন। সেই সাথে উন্নয়নও জরুরি। এ বিষয়টি আপনারা কিভাবে দেখছেন?

ভিসি : ওয়েবসাইটের বিষয়টি সম্পর্কে আমি ভালোভাবে অবগত নই। শিক্ষার্থীরা যাতে নিয়মিত সংবাদ, শিক্ষার্থীদের সফলতা, গবেষণা এবং শিক্ষক শিক্ষার্থীদের গবেষণাপত্র দেখতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে।

আমার সংবাদ : মুসলিম ছেলেরা মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকলেও প্রতিটি ভবনে মেয়েদের  নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা নেই। তাই মেয়েদের জন্য নামাজের জায়গার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। বিষয়টি নিয়ে আপনার মতামত কি?

ভিসি : মেয়েদের নামাজ আদায়ের জন্য কেন্দ্রীয় মসজিদের সাথেই নামাজের জায়গা করা হবে যাতে সকল মেয়েরা সেখানে নামাজ পড়তে পারে।

আমার সংবাদ : পরীক্ষার সময় আবাসিক হল খোলা না হলে পরীক্ষায় অংশ নেয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার হবে। এক্ষেত্রে হল খুলে দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষ নিয়েছে কি?

ভিসি : সরকারি সিদ্ধান্ত আসার আগে আপাতত হল খোলা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের মেসে থেকেই পরীক্ষা দিতে হবে।

আমার সংবাদ : নোবিপ্রবির মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে যথেষ্ট অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা, নেই প্রয়োজনীয় মেডিসিন ও পুরুষ চিকিৎসক। মেডিকেল সেন্টারে একজন সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দেয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের। বিষয়টি কতটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে প্রশাসন?

ভিসি : নিয়োগ চালু হলে মেডিকেল সেন্টারে পুরুষ চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে। এছাড়া যেহেতু শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা ব্যাবস্থা নিয়ে অভিযোগ তুলেছে আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবো। আর সাইকোলজিস্ট নিয়োগের বিষয়ে আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

আমার সংবাদ : নোবিপ্রবি কেন্দ্রীয় মাঠ এর উন্নয়ন এবং পাশাপাশি বাস্কেটবল গ্রাউন্ড এর উন্নয়নেও নজর দেয়ার অনুরোধ শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের এই দাবি পূরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনোরকম সহযোগিতা করবে কি?

ভিসি : কেন্দ্রীয় মাঠ উন্নয়নের বিষয়ে অনেক আগেই পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আমি নিজেই একজন স্পোর্টস ম্যান এবং ছাত্রজীবনে এগুলোর সাথে জড়িত ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসকল জায়গা অপ্রয়োজনীয়ভাবে পড়ে আছে সেগুলোকে পরিষ্কার করে প্লে-গ্রাউন্ড করার জন্য কাজ করার পরিকল্পনা আছে।

আমার সংবাদ : গত সমাবর্তনের আগে নতুন করে তৈরি হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় টু সোনাপুর রোড। কিন্তু দু’বছর হতে না হতেই রাস্তাটি তার আগের রূপ ধারণ করেছে যার অবস্থা দিনে দিনে করুণ হচ্ছে। এই বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিভাবে দেখছে?

ভিসি : এই রোডটি নিয়ে এলজিডি ও সড়ক জনপথের সাথে কথা চলছে। বর্তমানে রোডটি এলজিডির অধীনে আছে এটিকে সড়ক জনপথে হস্তান্তর করার চেষ্টা চলছে। সড়ক জনপথের অধীনে গেলে ফোর লেনে কাজ হবে আর যদি এলজিডির অধীনেই থাকে তাহলে রোডটি সংস্কার করা হবে। তারপরও আমি বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করবো। 

আমার সংবাদ : কৃষি ডিপার্টমেন্টকে ফ্যাকাল্টি করার দাবি জানিয়েছে অনেক শিক্ষার্থী এবিষয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি-না?

ভিসি: এখন পর্যন্ত কৃষি বিভাগকে ফ্যাকাল্টি করার বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নেয়া হয়নি।

আমার সংবাদ : শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলার আছে?

ভিসি : দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা থেকে দূরে আছে। আমরা অনলাইনে চেষ্টা করেছি কিন্তু অনলাইনে তো আর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মতো ক্লাস নেয়া সম্ভব না। তারপরও আমরা অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছি, কোর্স সম্পন্ন করেছি। ইতোমধ্যে পরীক্ষাও নেয়া শুরু করেছি। শিক্ষার্থীরা যাতে লেখাপড়ার সাথে সম্পৃক্ততা বজায় রাখে সেদিকে খেয়াল রাখার অনুরোধ রইলো।

আমারসংবাদ/জেআই