Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

আটকা মাধ্যমিকের উপবৃত্তি কার্যক্রম

আসাদুজ্জামান আজম 

জানুয়ারি ১২, ২০২১, ০৮:৩০ পিএম


আটকা মাধ্যমিকের উপবৃত্তি কার্যক্রম

মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের আওতায় ‘সমন্বিত উপবৃত্তি প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটির মাধ্যমে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতকপর্যায়ের প্রায় ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেয়া হবে। এজন্য উপবৃত্তি পাওয়া যোগ্য সব শিক্ষার্থীর নতুন করে ডাটা এন্ট্রি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরতদের অবহেলার কারণে ডাটা এন্ট্রি কার্যক্রম চলছে ঢিলেঢালা। দুই দফা চিঠি দিয়েও আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

সূত্র মতে, আগে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতকপর্যায়ের শিক্ষার্থীদের চারটি প্রকল্পের মাধ্যমে এ উপবৃত্তি দেয়া হতো। এতে নানা দুর্নীতি, শিক্ষার্থী বাছাইয়ে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া অবলম্বনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। এরপর ‘সমন্বিত উপবৃত্তি প্রকল্প’ নামে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। নতুন প্রকল্পে সমন্বিত উপবৃত্তি দিতে আলাদা একটি সার্ভার করে সব যোগ্য শিক্ষার্থীর তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে। সেজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে উপবৃত্তি পাবে এমন যোগ্য শিক্ষার্থীদের তথ্য চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। গত চার মাসে দুই দফা সময় বাড়িয়েও প্রয়োজনীয় তথ্য না মেলায় এবার কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার সেকেন্ডারি অ্যাডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের স্কিমে কড়া নির্দেশনা পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে, তথ্য না পাঠানোর কারণে কোনো শিক্ষার্থী যদি উপবৃত্তি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয় তবে তার দায়ভার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান এবং উপজেলা-থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিতে হবে। চিঠিতে বলা হয়, গত বছর ১৪ অক্টোবর শিক্ষার্থীদের মোবাইলে অ্যাকাউন্ট খোলা এবং যোগ্য শিক্ষার্থীদের তথ্য ডাটা এন্ট্রি করার প্রথম নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় তথ্য না পাওয়ায় আরও দুই দফা সময় বাড়ানোর পরও সাড়া মিলছে না। এবার তৃতীয় দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে। নতুন সময় অনুযায়ী আগামী ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের তথ্য মাউশিতে পাঠানো যাবে। এর মধ্যে যদি শিক্ষার্থীর তথ্য না পাওয়া যায় তবে এর দায়ভার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান, থানা-উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে নিতে হবে। প্রকল্পের স্কিম পরিচালক শরীফ মোর্তজা স্বাক্ষরিত অন্য একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির আওতায় ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণি এবং ২০২০ সালে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীর তথ্য এন্ট্রি সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য শ্রেণির পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষার্থীর তথ্যে গরমিল : সমন্বিত উপবৃত্তি প্রকল্পের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ে প্রায় এক লাখ ৬৫ হাজার ৮১০ জন এবং উপজেলা-থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে প্রায় তিন লাখ ৮৭ হাজার ৭১ জন শিক্ষার্থীর তথ্য পাওয়ার পর তা না পাঠিয়ে অপেক্ষমাণ রেখেছে। কি কারণে এসব তথ্য সংগ্রহ করেও পাঠানো হচ্ছে না তা জানতে গিয়ে রীতিমত হতবাক হয়ে গেছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠানের পাঠানোর তথ্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীর আসল তথ্যের মিল পাওয়া যাচ্ছে না। এবার যেহেতু জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিলিয়ে ডাটা এন্ট্রি হচ্ছে তাই কোনো ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও থানা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা। প্রকল্প থেকে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে, তথ্য পেয়েও পেন্ডিং রাখা সরকারি বিধি অনুযায়ী অপরাধের মধ্যে পড়ে।

তাই যোগ্য শিক্ষার্থীদের তথ্য আগামী ১৬ জানুয়ারির মধ্যে অবশ্যই পাঠাতে হবে। একই সঙ্গে অযোগ্য শিক্ষার্থীর তথ্য যদি থাকে সেটা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেরত পাঠাতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অযোগ্য, ডাবল এন্ট্রি, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ইত্যাদি কারণে অতিরিক্ত এন্ট্রি করা শিক্ষার্থীর তথ্য সার্ভার থেকে বাতিল করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে কোনো যোগ্য শিক্ষার্থীর তথ্য না পাঠালে কোনো শিক্ষার্থী যদি উপবৃত্তি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয় তবে তার দায়ভার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান এবং উপজেলা-থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিতে হবে।

এ ব্যাপারে সেকেন্ডারি অ্যাডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের স্কিম পরিচালক শরীফ মোর্তজা বলেন, প্রায় ছয় মাসের উপবৃত্তি বকেয়া হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের তথ্য না পাওয়ায় উপবৃত্তি দেয়া যাচ্ছে না। এ কারণে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও থানা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কড়াভাবে চিঠি দিয়েছি। তারপরও যারা কাজের অবহেলা করবে তাদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উপবৃত্তি দেয়া হতো। এতে রাষ্ট্রীয় খরচ বেশি হওয়ার পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা, শিক্ষার্থী তথ্যের ভুলসহ নানা ধরনের সমস্যা হতো। পরে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় উপবৃত্তি যোগ্য সব শিক্ষার্থীর তথ্য এক ছাতার নিচে নিয়ে আসা হবে। সে জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে সমন্বিত উপবৃত্তি কার্যক্রম শুরু হয়। একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্নপর্যায়ে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ভাতা সরাসরি শিক্ষার্থীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর জন্য তথ্য হালনাগাদের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর গত বছর ২২ মে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এরপর দুই দফা সময় বাড়িয়েও যোগ্য শিক্ষার্থীদের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান, থানা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের এ কড়া বার্তা পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে একজন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি নিশ্চিত করতে আরও অন্তত এক মাস সময় বাড়িয়ে দেয়া হোক। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মোবাইলে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষক ও আমাদের।

আমারসংবাদ/জেআই