Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

স্বল্পসময়ে সফল ঢাকা দক্ষিণ সিটি

নুর মোহাম্মদ মিঠু

জানুয়ারি ১৩, ২০২১, ০৮:৫৫ পিএম


স্বল্পসময়ে সফল ঢাকা দক্ষিণ সিটি

ঢাকাবাসীর মৌলিক চাহিদার মধ্যে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া মশার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্যব্যবস্থাপনা, নর্দমা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যেই সফলতার জানান দিয়েছেন দুর্যোগকালীন সময়ে দায়িত্ব গ্রহণ করা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। দায়িত্ব গ্রহণ করেই মেয়র তাপস অনেক কিছুই শূন্য থেকে শুরু করলেও নাগরিক সুবিধায় প্রাধান্য দেয়ায় পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় সার্বিক কার্যক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে ডিএসসিসি।

করোনা মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়ন, প্রয়োগ ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ে বিবেচনা, একইসাথে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমেও সর্বোচ্চ নজর দেয়ার পাশাপাশি ডিএসসিসির পুরো কার্যক্রমকেই ঢেলে সাজিয়েছেন তিনি। বছরব্যাপী সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম হাতে নেয়ায় চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর প্রকোপে নগরীতে ঘটেনি প্রাণহানির ঘটনা। আর এটাই মেয়র তাপসের দায়িত্ব গ্রহণের পর বড় সফলতা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নগরবাসীর দ্বিতীয় মৌলিকসেবা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও অগ্রাধিকার দিয়েছেন মেয়র তাপস। একমাত্র শহর ঢাকা, যে শহরের যেখানে-সেখানে উন্মুক্তভাবে ফেলা হয় বর্জ্য। দায়িত্ব গ্রহণ করেই অগ্রাধিকারভিত্তিতে ডিএসসিসির প্রত্যেক ওয়ার্ডকেই ইতোমধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মধ্যে এনেছেন তিনি। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডেও থাকবে বর্জ্য রাখার একটি করে স্থান। কোন কোন জায়গায় বর্জ্য রাখা হবে, সেই এলাকাও নির্ধারণ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকেন্দ্র স্থাপন করেছেন তিনি। যেখানে ডিএসসিসির দীর্ঘ ৫০ বছরে মাত্র ২৪টি বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকেন্দ্র ছিলো, সেখানে মেয়র তাপস দায়িত্ব গ্রহণ করে ৭৫টি ওয়ার্ডে একটি করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকেন্দ্র স্থাপন করেছেন। বর্তমানে রাতের মধ্যেই নগরীর বর্জ্য অপসারণ হচ্ছে। পূর্বের মতো এখন আর সকালে কাজে বের হয়ে নগরবাসী রাস্তায় ময়লা দেখবে না বলে জানায় ডিএসসিসিসংশ্লিষ্টরা।

তৃতীয়ত. প্রতি মাসেই দুবার নগরীর নর্দমাগুলো পরিষ্কার করছে ডিএসসিসি। মাসের ১ তারিখ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত সকল ওয়ার্ডভিত্তিক লোক নিয়োগ করা হয়েছে, আবার ১৬ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমও চলছে, যেন পানি বা ময়লা আটকে না থাকে। আর এটা নিশ্চিতের মধ্য দিয়েই মশার প্রজনন ঠেকাতেও সক্ষম হবে মেয়র তাপসের নেতৃত্বাধীন ডিএসসিসি। এছাড়া যেসব জলাশয় সিটি কর্পোরেশনের আওতায় রয়েছে, সেগুলোও পরিষ্কার করে হাঁস ও তেলাপিয়া মাছচাষ করছে ডিএসসিসি। মাসে একবার পানি প্রবাহের জন্যও জাল টানা হচ্ছে। এভাবেই সমন্বিত বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় এগিয়ে যাচ্ছে ডিএসসিসি।

সংশ্লিষ্টার বলছেন, আগে যেখানে নগরীর অনেক ওয়ার্ডেই রাতে বাতি জ্বলতো না, নগরবাসীর চতুর্থ এই মৌলিক সেবাটিও ইতোমধ্যেই নিশ্চিত করেছেন মেয়র তাপস। বর্তমানে ডিএসসিসির আওতাধীন সব জায়গাতেই রাতে বাতি জ্বলছে, শুধু তাই নয়— নষ্ট হয়ে গেলেও এক ঘণ্টার মধ্যেই নতুন বা ঠিক করে দেয়া হচ্ছে। মেয়র তাপস দায়িত্ব গ্রহণের পর ইতোমধ্যে এই চারটি নাগরিক সেবাই নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে ডিএসসিসি। এককথায় বলতে গেলে- মশক নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নর্দমা পরিষ্কার এবং রাতে পাড়া-মহল্লাসহ সব সড়কেই এখন বাতি জ্বলছে। সামগ্রিকভাবে ঢাকাকে কোন জায়গায় নিয়ে যেতে চায়, কত জনসংখ্যা আছে, সে জনসংখ্যাকে কীভাবে বিন্যাস করা হবে, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা কীভাবে নিশ্চিত করবে— এসব বিষয়ে এর আগে কোনোদিন কোনো পরিকল্পনা কেউ প্রণয়ন না করলেও এ লক্ষেই আগামী ৩০ বছরমেয়াদি একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছেন মেয়র তাপস। খ্যাতনামা অনেক স্থপতি, নগরবিদও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসছেন। পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজও ইতোমধ্যে আরম্ভ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। 

এছাড়া পাঁচটি রূপরেখা দিয়েছিলেন মেয়র তাপস। তার অন্যতম একটি সচল ঢাকা। সেখানে নগরীর যানজট নিরসনে গণপরিবহন সুশৃঙ্খল ব্যবস্থায় আনার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি। যানজট, জলাবদ্ধতা, রাস্তা সংস্কার— এগুলো একটু বৃহৎ ব্যাপার হলেও যে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন হচ্ছে, সেই পরিকল্পনার আওতায় কাজও শুরু করেছে ডিএসসিসি। ধীরগতির যানবাহন— রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, ঘোড়ার গাড়িকে নিবন্ধনের মাধ্যমে শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনার কাজও শুরু হয়ে গেছে। এছাড়া মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন হলেই বলা যাবে- নগরীর কোন সড়ক শুধু হেঁটে চলার, কোন সড়কে ধীরগতির যানবাহন চলবে, আর কোন সড়কে অন্য গাড়ি চলবে। মহাপরিকল্পনার আওতায় একটা পর্যায়ে এ কাজও সম্ভব বলে বলছে ডিএসসিসি সংশ্লিষ্টরা। আরেকটি কাজ আরম্ভ করেছে ডিএসসিসি যেটি- প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকও আরম্ভ করেছিলেন, বাস রুট র্যাশনালাইজেশন। যত্রতত্র বাসরুটগুলো দেয়া আছে, যেখানে কোনো সমন্বয় নেই। আনিসুল হকের যে রূপরেখা ছিলো, সেটার আওতায়ই কাজ শুরু করেছে ডিএসসিসি। ঢাকা শহরে যে বাসগুলো চলে, সেসব বাসের জন্য কোনো টার্মিনাল নেই। যে টার্মিনালগুলো রয়েছে, সেগুলো আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল। শহরের বাসগুলো কোথায় থাকবে, কোথায় যাবে, এর ন্যূনতম কোনো পরিকল্পনা নেই। সিটি টার্মিনাল না হলে এই বাসগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, এমনকি রাখার জায়গা না হলে শৃঙ্খলায়ও আনা যাবে না। সেই জায়গাতেও জোরালো ভিত্তিতে নজর দিয়েছেন মেয়র তাপস।

এ সমস্যার সুরাহাও তিনি করতে পারবেন বলে আশাবাদী ডিএসসিসির একটি সূত্র বলছে, ঢাকাবাসীকে ধীরে ধীরে এর সুফল দিতে পারবে মেয়র তাপসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ডিএসসিসি।

এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকার খালগুলোর কয়েকটি নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রকল্প প্রণয়ন করেছেন মেয়র তাপস। যার মাধ্যমে খালগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রেখে নিজেদের পরিচালনায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চান তিনি। তার সাথে সাথে নান্দনিক পরিবেশও সৃষ্টি করতে চান তিনি। যেন ঢাকাবাসীর উপভোগের জায়গা হয়, সঠিকভাবে যেন পানি নিষ্কাশন হয়। দখল হওয়ার পরও যেসব খাল রয়েছে সেগুলোকেও সঠিকভাবে পরিচালিত, রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলে পানি নিষ্কাশনে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন মেয়র তাপস। জিরানি খাল, মান্ডা খাল, শ্যামপুর খাল, কালুনগর খাল, তালতলার একটি খাল আছে, যেটি প্রায় দখল হয়ে যাচ্ছে এবং ধোলাই খাল নিয়েও একটি প্রকল্প তৈরি করেছেন মেয়র তাপস। স্থানীয় সরকারের কাছে পরিকল্পনা প্রেরণের পর নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ফেলেই সেই খালগুলোও রক্ষণাবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করবে ডিএসসিসি।

আমারসংবাদ/জেআই