Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪,

বেসরকারি টিকা আমদানিতে নৈরাজ্যের শঙ্কা

মাহমুদুল হাসান

জানুয়ারি ১৫, ২০২১, ০৬:৩৫ পিএম


বেসরকারি টিকা আমদানিতে নৈরাজ্যের শঙ্কা

করোনা প্রতিরোধে টিকা প্রয়োগের পথে গোটা বিশ্ব। অনেক দেশ গেলো বছরের শেষদিকেই টিকা প্রয়োগ শুরু করেছে। বাংলাদেশও এ দৌড়ে পিছিয়ে নেই। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে আসার কথা রয়েছে। এরপর আগামী মাসের শুরু থেকে সারা দেশে প্রথম ধাপে প্রায় অর্ধকোটি টিকা প্রয়োগ করা হবে।

যদিও টিকা আমদানি নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছে। দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনা ও আশ্বাস শেষে বাংলাদেশে টিকা আমদানির পথ সুগম হয়েছে। এর মধ্যেই শুরু হয়েছে বেসরকারি উদ্যোগে টিকা আমদানির গুঞ্জন। সে গুঞ্জন এখন সত্য হওয়ার পথে। রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দূতাবাস তাদের কর্মী ও নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য টিকা আমদানি করতে চায়। পিছিয়ে নেই দেশি-বিদেশি বেসরকারি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানও। ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের জন্য টিকা আমদানিবিষয়ক আগ্রহের কথা সরকারকে জানিয়েছে।

সরকারও বেসরকারিভাবে টিকা আমদানি বিষয়ে গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছে। সরকারের টিকা আমদানি সহযোগী বেক্সিমকো ফার্মা বাণিজ্যিকভাবে টিকা আমদানির ঘোষণা দিয়েছে। এতে প্রতিডোজের দাম পড়বে ১৩ দশমিক ২৭ ডলার বা এক হাজার ১২৫ টাকা। বেক্সিমকো ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কিনবে আট ডলারে। শুরু থেকেই টিকা আমদানির প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা উঠেছে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ফর্মুলায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি কোভিশিল্ড টিকা কোভ্যাক্সের সহযোগিতায় তৈরি একটি টিকা। যা অলাভজনকভাবে বিশ্বের মানুষকে সরবরাহের কথা। কিন্তু সে শর্ত মানছে না ভারত। সেরাম ইনস্টিটিউট ভারতকে দুই ডলারে টিকা দিলেও বাংলাদেশকে ৪৭ শতাংশ বেশি দামে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এরমধ্যে এক ডলার বেক্সিমকোকে বাড়তি দিতে হবে। এসব নিয়েই চারদিকে প্রশ্ন উঠেছে।

যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম ও বেক্সিমকো ফার্মার পরিচালক সাংসদ নাজমুল হাসান পাপন আশ্বস্ত করেছেন ভারতের সমপরিমাণ দামেই বাংলাদেশ করোনা ভাইরাসের টিকা পাবে। বেক্সিমকোর এক ডলার বিষয়ে তারা শুল্ক, ট্যাক্স ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচের জন্য ব্যয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, কোনো দেশ যদি করোনার ভ্যাকসিনের দাম বেশি বলে, তবে অন্য দেশ থেকে আনার চেষ্টা করা হবে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ সরকারের টিকাদানে সাফল্য রয়েছে। করোনা মোকাবিলায়ও বেশ ভালো সামর্থ্যের পরিচয় দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভারতের বিকল্প টিকার বাজার খুঁজে দেশের নাগরিকদের সরকারি উদ্যোগে টিকা প্রয়োগই সমীচীন হবে। নয়তো করোনা নমুনা পরীক্ষা ও টিকিৎসার নামে রিজেন্ট-জেকেজিকাণ্ডের মতো ভুয়া টিকা প্রয়োগ হতে পারে।

এছাড়াও করোনার টিকা আমদানি, সংরক্ষণ ও প্রয়োগে কিছু বাড়তি নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয় রয়েছে। যার সক্ষমতা একমাত্র সরকারেরই রয়েছে। এসব আলোচনা সমালোচনার মধ্যেই সরকার বেসরকারি খাতে টিকা আমদানি ও প্রয়োগ বিষয়ে একটি নীতিমালা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা. রশীদ ই মাহবুব বলেন, সরকারের উদ্যোগকে ত্বরান্বিত করতে সবসময়ই বেসরকারি উদ্যোগ সহযোগিতা করে। করোনার টিকা আমদানি ও প্রয়োগে সরকারের এককভাবে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে। এজন্য বেসরকারিভাবে কেউ এগিয়ে এলে নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ।

তবে মহামারি মোকাবিলার এ মুহূর্তে কেউ যাতে সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে কিংবা জিম্মি করে ব্যবসা না করতে পারে সেটি সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। টিকা আমদানি থেকে প্রয়োগ প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের মনিটরিং থাকতে হবে। নয়তো দেশে রিজেন্ট-জেকেজির মতো অন্য প্রতারকরা করোনার টিকার নামে নকল টিকা প্রয়োগ করতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার বলেন, কোভ্যাক্সের গবেষণা ও উন্নয়ন সুবিধা থেকে আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা তৈরি হচ্ছে। কোভ্যাক্সের সহায়তায় যেকোনো টিকা তৈরি হলে তা গ্লোবাল পাবলিক গুড হিসেবে গণ্য হবে। একেবারে বাণিজ্যিকীকরণ করা হবে না। কোভ্যাক্স বাংলাদেশের ১৬ কোটি ৪০ লাখ জনসংখ্যার সবার জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার ২০ শতাংশ সরবরাহ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কোভ্যাক্সের লক্ষ্য ন্যূনতম খরচে টিকার ন্যায়সংগত বিতরণ নিশ্চিত করা। তাহলে বেক্সিমকো ফার্মাকে বাংলাদেশে করোনার টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের একমাত্র অধিকার দেয়া সেরাম ইনস্টিটিউটের পক্ষে কতটা নৈতিক? সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকার একটি ডোজ স্থানীয়ভাবে ২ মার্কিন ডলারে বিক্রি করা হবে। সেই টিকাই বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিক্রি করা হবে প্রতি ডোজ প্রায় ৫ ডলারে। কিন্তু কেন? এর যুক্তি কী? বিশ্বব্যাপী মহামারি চলাকালে টিকার দামের এই বৈষম্য কতটা নৈতিক?

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সরকারিভাবে টিকা প্রদান শুরুর পর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দেশের বড় বড় বেসরকারি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোকেও শর্ত সাপেক্ষে টিকা প্রদানের অনুমোদন দেয়া হবে। টিকা প্রয়োগে অনিয়ম যাতে না হয় সেজন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কঠোরভাবে মনিটরিং করবে। এছাড়াও টিকাসংক্রান্ত সকল তথ্য মানুষকে জানাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়মিত বুলেটিন প্রচার করবে। সুস্থভাবে টিকা প্রদানে প্রায় ৪২ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

আমারসংবাদ/জেআই