Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

বাড়ি তো নয় যেনো পাখির বাসা

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

জানুয়ারি ১৫, ২০২১, ০৭:৫০ পিএম


বাড়ি তো নয় যেনো পাখির বাসা

পল্লীকবি জসীমউদদীন ‘আসমানি’ কবিতায় লিখেছেন—‘আসমানিরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও/রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও/বাড়ি তো নয় পাখির বাসা-ভেন্না পাতার ছানি/একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি/একটুখানি হওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে/তারি তলে আসমানিরা থাকে বছর ভরে।’ কবির এ লেখনির সঙ্গে হুবহু মিল পাওয়া যাবে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের জীবনদাসকাঠি গ্রামে রহিমা বেগমের বাড়িতে গেলে। রহিমা ও আব্দুল মান্নাফ দম্পতির দাম্পত্য জীবনে তিন মেয়ে ও এক ছেলে।

বিষখালী নদীর তীরে বসবাস করার সুবাদে ছোটবেলা থেকে এ দম্পতির একমাত্র পুত্রসন্তান মাছ ধরে সংসারে বাবার সঙ্গে সাহায্য করতো। সেই ছেলেটি ২০ বছর আগে সংসারের বাড়তি উপার্জনের জন্য সাগরে মাছ ধরতে যায়। সেই যে গেলো আর ফিরে এলো না! বয়সের ভারে ন্যুব্জ আব্দুল মান্নাফ (৮০)। স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন না। তিন মেয়েকেই বিয়ে দিয়েছেন। তবে গরিব পরিবারের জামাই তো গরিবই থাকে। জামাইরাও টেনেটুনে সংসার চালায়। ছোট মেয়েটা কাছে থাকে। তার স্বামী বাসচালকের সহকারী।

কখনো  অন্যের বাড়িতে কাজ করে, আবার কখনো রাস্তার পাশে মাটি দেয়ার কাজ করে পরিবারের জন্য একবেলা আহারের চেষ্টা করেন রহিমা বেগম। এই অবস্থায় অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার খরচ মেটোনো অনেক কষ্টসাধ্য বিষয়। ঘরের অবস্থাও অনেক খারাপ। বাতাস এলেই ঘরটি নড়তে থাকে। যেকোনো সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে। বৃষ্টি হলেই ঘরের মধ্যে পানি পড়ে ভিজে যায় সবকিছু। শীতের সময় এলে শীতবস্ত্র ও শীত নিবারণের কোনো গরম কাপড় না থাকায় চটের বস্তা গায়ে দিয়ে ঘুমাতে হয়।

খাবার ব্যবস্থা ও স্বামীর ওষুধের খরচ মেটাতে গেলে অন্যদিকে টাকা খরচের আর কোনো উপায় থাকে না। রাজাপুর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ আল-আমিন বাকলাই বলেন, ‘বুধবার দাপ্তরিক কাজে গিয়েছিলাম জীবনদাসকাঠি। সেখানে দেখা হয় রহিমা বেগমের সঙ্গে। অচল স্বামীকে নিয়ে এই ঘরে বসবাস করেন। আমরা যারা দালান-কোঠা, ইট-পাথরে থেকে শীত আটকাচ্ছি একবারো কি ভাবছি এদের শীত কেমনে কাটছে? আসছে বর্ষাকাল কেমনে কাটবে?’

এ বিষয়ে কথা হলে রাজাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনুজা মণ্ডল বলেন, ‘যাদের সুযোগ আছে এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করার, তাদের উচিত সরাসরি সেই দপ্তরকে জানানো। কারণ, সারা দিনের অফিশিয়ালি ব্যস্ততায় বাড়তি নজর দেয়ার সুযোগ না-ও হতে পারে। সরাসরি জানানোটা অনেক দ্রুততর, সহজ এবং সুবিধাজনক পন্থা বলেই মনে হয়।’

গতকাল শুক্রবার সকালে গালুয়া ইউনিয়নের জীবনদাসকাঠি গ্রামের রহিমা বেগমের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি, নুডলস ও অন্যান্যসহ এক বস্তা খাদ্যপণ্য এবং দুটি কম্বল উপহার দেন রাজাপুর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোক্তার হোসেন। রহিমা বেগম জানান, সকালে রাজাপুরের স্যারে এসে দুটি কম্বল, এক কেজি চাল, এক প্যাকেট ডাল, এক প্যাকেট চিনি, এক প্যাকেট লবণ, দুই প্যাকেট চিড়া ও দুই প্যাকেট নুডলস দিয়ে গেছেন। আর বলেছেন, ঘর আসলে একটি ঘর দেবেন।

ইউএনও মো. মোক্তার হোসেন বলেন, ‘আমি রহিমা বেগমের অসহায় জীবনযাপনের বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা ত্রাণ তহবিল থেকে যতটুকু সম্ভব তার বাড়িতে গিয়ে তাকে সহায়তা করেছি। রহিমা বেগমের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়ে এসেছি। যদি ঘরের জন্য আগে তার আবেদন করা থাকে তাহলে যাচাই করে আর না থাকলে নতুন করে আবেদন করিয়ে পরবর্তীতে সরকারি ঘর বরাদ্দ এলে তাকে একটি ঘর দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’

আমারসংবাদ/জেআই