Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

লাগামহীন তেলের বাজার

জাহাঙ্গীর আলম

জানুয়ারি ১৬, ২০২১, ০৬:৩৫ পিএম


 লাগামহীন তেলের বাজার

পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৬২০ টাকা। দুই লিটার ২৩০ টাকা। বসুন্ধরা সোয়াবিন তেলের এই বাড়তি দাম। তীর, রূপচাঁদারও একই অবস্থা। প্রতিনিয়ত বাড়ছে তেলের দাম। বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকায়। প্রতি কেজি পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। সামনে আরও বাড়তে পারে।

এভাবেই সেয়াবিন তেলের লাগামহীন বাজারের কথা জানান রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জনতা মার্কেটের আক্তার। তিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত ছাড়া তেলের দাম কমবে না বলে ডিলাররা জানিয়েছেন। শুধু আক্তারই নয়, সারা দেশে সব বাজারের একই চিত্র। দফায় দফায় বাড়ছে তেলের দাম। এভাবে তেলের দাম বাড়তে থাকায় অস্বস্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের ভোক্তারা।

শুধু তাই নয়, মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আমদানি নির্ভরতার সুযোগে তেলের বাজার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি হয়ে গেছে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি সরকারের উচিত ভালোভাবে বাজার দেখা, মনিটরিং করা।

গত অক্টোবর মাসে ভোজ্যতেলের দাম অস্বাভাবিক বাড়তে শুরু করলে পাইকারি ব্যবসায়ী, মিল মালিক ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ২১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে মিল মালিকরা তেলের দাম দুই টাকা কমিয়ে সয়াবিন ৯০ টাকা ও পাম তেল ৮০ টাকা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত হয়।

পরে লিটার বা কেজি নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে দুটিতেই বিদ্যমান দাম থেকে দুই টাকা কমানোর কথা জানায় মন্ত্রণালয়। তারপর থেকে কমাতো দূরের কথা বেড়েই যাচ্ছে তেলের দাম। এর বাজার লাগামহীন হয়ে পড়েছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, গত এক মাসে অন্তত তিন দফায় বোতল ও খোলা উভয় ধরনের সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে পাম অয়েলের দামও। বোতলের তেলের তুলনায় খোলা তেলের দাম বাড়ার হার বেশি।

কালশী বাজারের খুচরা তেল বিক্রেতা পিন্টু পাটোয়ারী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের ব্যারেল প্রতি দাম বেড়েছে। এ কারণে সপ্তাহের ব্যবধানে আবার খুচরা বাজারে লিটার প্রতি দুই টাকা থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে।

শীতের মৌসুমে বাজারে কমেছে শ্রমিক, একই সঙ্গে তেলের উৎপাদন কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এ কারণে ভোজ্যতেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। তাই ভোজ্যতেলের দাম আরও বাড়বে।

খুচরা ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ লিটার বোতলের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৫৬০-৬০০ টাকায়। এক লিটার বোতলের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়।

স্বয়ং সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও বাড়তি দামের চিত্র দেখা গেছে। বোতলের তুলনায় খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেশি হারে বৃদ্ধির তথ্যও উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে লুজ সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।

বোতলের পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। লুজ পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ২১ এবং সুপার পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ।

প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, মাসের ব্যবধানে লুজ সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ২৫ এবং বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বোতলের পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম মাসের ব্যবধানে ৭ দশমিক ৪৮ এবং বছরের ব্যবধানে ১৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়েছে। লুজ পাম অয়েলের দাম মাসের ব্যবধানে ১০ দশমিক ৩৮ এবং বছরের ব্যবধানে ২৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়েছে।

তেলের বাড়তি দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মোহাম্মদপুরের দুরুল হুদা এ প্রতিবেদককে বলেন, বাজারে কোনো কিছুর নিয়ন্ত্রণ নেই। যার যা খুশি তাই করছে। ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। পেঁয়াজ, আলুর পর এবার তেলে কারসাজি শুরু হয়েছে। ভোক্তাদের টাকা চলে যাচ্ছে। যেনো কারো কোনো নজরদারি নেই।

ভোজ্যতেলের দামের বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী আশিক বলেন, তেলের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে আমরাও অবাক। যে খোলা সয়াবিন তেল আমরা ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করছিলাম, তা দেখতে দেখতে ১৩০ টাকা হয়েছে। ৪৬০ টাকা বিক্রি করা বোতলের পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল এখন কোম্পানিভেদে ৫৬০-৬০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমরা হিসাব করে দেখেছি এখন খোলা সয়াবিন তেলের থেকে পাঁচ লিটারের বোতল কিনলে ক্রেতাদের খরচ কম পড়ে।

কারণ পাঁচ লিটারের বোতলে সয়াবিল তেলে থাকে চার কেজি ৭০০ গ্রামের মতো। এতে প্রতি কেজি ১৩০ টাকা করে ধরলে পাঁচ লিটারের দাম আসে ৬১০ টাকা। কিছু কিছু কোম্পানির বোতলের সয়াবিন তেল এখন ৫৬০ থেকে ৫৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সার্বিক ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজধানীর পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ গোলাম মাওলা আমার সংবাদকে বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে আমাদের বাজারেও সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে।

ট্যারিফ কমিশনের সাথে আলাপ করে সিটি, রূপচাঁদা, বসুন্ধরাসহ কয়েকটি কোম্পানি সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে ডিলারের মাধ্যমে খুচরাপর্যায়ে বাজারে বিক্রি করে। সয়াবিন পুরোটাই আমদানি নির্ভর। তাই আমাদের তেলের বাজার পাঁচ-সাতটি প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি। তারা দাম বাড়ালে আমরা দাম বাড়াতে বাধ্য হই।

তিনি আরও বলেন, পাইকারিতে এখন সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা কমেছে। আমরা ১০২ টাকা কেজি বিক্রি করছি। ধারাবাহিকভাবে কমবে। খুচরা ব্যবসায়ীরা ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি করছে। এটা কাম্য নয়।

সরকারের উটিত ভালোভাবে বাজার দেখা, মনিটরিং করার। একই সাথে দাম কমাতে ভ্যাট কমারও দাবি জানান তিনি। কারণ হিসেবে এই ব্যবসায়ী বলেন, প্রতি লিটারে সরকারকে ১৮টাকা ভ্যাট ট্যাক্স দিতে হয়।

আমারসংবাদ/এআই