Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

তবুও লাভে ব্যাংক এশিয়া: যোগ্য নেতৃত্বে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সেবা

জাহাঙ্গীর আলম

জানুয়ারি ১৬, ২০২১, ০৭:০৫ পিএম


তবুও লাভে ব্যাংক এশিয়া: যোগ্য নেতৃত্বে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সেবা

বিদায়ী বছরে চীন থেকে আসা করোনা ভাইরাসে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও আঘাত করে। সরকার এর প্রকোপ ঠেকাতে ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। এতে অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়ে। অনেক ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়।

ফলে বিদায়ী বছরে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় অনেক ব্যাংকই লাভের মুখ দেখেনি। তার মধ্যেও ব্যাংক এশিয়া লাভের জায়গা করে নিয়েছে। সারা দেশে সব ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংক সেবা পৌঁছে দিয়ে এজেন্ট ব্যাংকিয়ের সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছা সম্ভব হয়েছে।

শীর্ষ ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ, ব্যাংক খাতের শীর্ষ নির্বাহীদের নেতৃত্বে পরিচালনা পর্ষদের সহযোগিতায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের যোগ্য নেতৃত্বেই তিন দশকের ব্যবধানে এই অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

সার্বিক ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আরফান আলী আমার সংবাদকে জানান, করোনার কারণে গত বছর বিনিয়োগ ও ঋণ বিতরণে পজেটিভ অবস্থানে পৌঁছা যায়নি।

তবে রেমিটেন্সের ভালো প্রবাহে করোনাকালে টিকে থাকার জায়গা করে নিয়েছে ব্যাংক এশিয়া। এতকিছুর পরও লাভে আসা সম্ভব হয়েছে। এটাই সন্তুষ্টির জায়গা। বিদায়ী বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চলতি বছরে ক্ষুদ্র ব্যবসায় (স্মল বিজনেস) বেশি নজর দেয়া হবে বলে জানান তিনি। যাতে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা যায়। ডিজিটাল ব্যাংক চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যাতে একেবারে নতুন প্রজন্মকে ঘরে সেবা দেয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, ডেডিকেটেড সার্ভিস এবং উদ্ভাবনী প্রডাক্টের মাধ্যমে গ্রাহকের সম্পূর্ণ সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে এবং দারিদ্র্যবিমোচনে তাৎপর্যপূর্ণভাবে অবদান রাখতে পারবে।   

নতুন উদ্যোগ ডিজিটাল ব্যাংক : সময়ের পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে আরও ডিজিটালাইজড হতে চায় ব্যাংক এশিয়া। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বে ১৯৯৯ সালে যাত্রা করা ব্যাংকে পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন দেশের অর্থনীতিবিদ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর থেকে বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী। তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা, এমডির নেতৃত্বে এবং কর্মকর্তাদের আন্তরিকতায় এগিয়ে যাচ্ছে তিন দশকের এই ব্যাংকটি।

এ ব্যাপারে এমডি বলেন, প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে একেবারে তরুণ প্রজন্মকে আরও সহজ সেবা দিতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ বিশেষ নতুন প্রজন্মের আর্থিক চাহিদা পূরণে ‘ডিজিটাল ব্যাংক’ চালু করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করা হয়েছে। আরফান আলী বলেন, ২০০০ সালের পর জন্ম নেয়া নতুন প্রজন্ম অনলাইননির্ভর।

এছাড়া করোনা ভাইরাসে আমরা শিখেছি, গ্রাহকদের কী কী সেবা ঘরে বসে দেয়া যেতে পারে। তাই নতুন এই উদ্যোগ। এর মাধ্যমে ২০ থেকে ২২ বছরের তরুণরা ঘরে বসে বিভিন্ন সেবা নিতে পারবে। ডিজিটাল ব্যাংক যুক্ত থাকবে ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ অব বাংলাদেশের (এনপিএসবি) সঙ্গে।

এর মাধ্যমে ডিজিটাল ব্যাংকের গ্রাহকরা সহজেই অন্য ব্যাংকের বিভিন্ন সেবাও নিতে পারবেন। এক কথায় কমপ্লিট ব্যাংকিং সেবার সুযোগ করা হবে ডিজিটাল ব্যাংকে। এটা চালু করা হলে কাউকে আর শাখায় যেতে হবে না। ঘরে বসেই সব সেবা পাবে গ্রাহকরা।

সূত্র মতে, এটি হবে ব্যাংক এশিয়ার একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। যার ৫১ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার হবে ব্যাংকটি। বাকি শেয়ারের অংশীদার বিদেশি প্রযুক্তিবিদ, প্রতিষ্ঠান ও লেনদেন প্রতিষ্ঠান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন দিলে নতুন ধারার এ ব্যাংক চালু করতে চায় ব্যাংক এশিয়া।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সিঙ্গাপুর, হংকংসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ডিজিটাল ব্যাংক খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনুমোদন পেলে আমরাও অল্প সময়ের মধ্যে সবাইকে এই সেবার আওতায় আনতে পারবো। ডিজিটাল ব্যাংকে হিসাব খুললে পাসপোর্ট মাশুলসহ বিভিন্ন পরিষেবা বিল, টাকা স্থানান্তর, কেনাকাটার মতো বিভিন্ন সেবায় যুক্ত হওয়া যাবে।

সব ইউনিয়নে এজেন্ট ব্যাংকিং : সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নরসহ অভিজ্ঞ পরিচালকের সহযোগিতা তথা ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পর্ষদের আদর্শের ছায়ায় মো. আরফান আলী দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে ডিজিটাল বাংলাদেশে অংশীদার হতেও আপ্রাণ চেষ্টা করছেন ব্যাংক এশিয়ায়।

১৯৯৯ সালের নভেম্বরে যাত্রা করা ব্যাংকটির শুরু থেকেই অর্থাৎ ১৯৯৯ সালে তিনি অ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। আর ১৯৯১ সালে এবি ব্যাংকে প্রবিশনালী অফিসার হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন।

তাই দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে সরকারের ভিশন এগিয়ে নিতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় একটি নতুন, শক্তিশালী ব্যাংকিংয়ে ব্যস্ত তিনি। ব্যাংক এশিয়া ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং যাত্রা শুরু করে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে এ সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নানা দিকে, বিচিত্র আঙিকে শাখা মেলতে শুরু করেছে। সময় এবং দূরত্বের ব্যবধান ঘুচিয়ে এ সেবা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে হূদয়গ্রাহী হয়ে উঠছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আউটলেট দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৬০০টি। ৬৪ জেলার ৪৯২ উপজেলার ৪০৬৮ ইউনিয়নে এই সেবা পৌঁছে গেছে। ৯১ শতাংশ সেবা পল্লীতে পৌঁছে গেছে। ৬১ শতাংশ গ্রাহকই হচ্ছে নারী।

৩৬ লাখ কাস্টমার করা সম্ভব হয়েছে অল্প সময়ের মধ্যে। বর্তমানে দুই হাজারেরও বেশি ডিজিটাল পোস্ট অফিসে এই সেবা যুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। সাড়ে আট হাজার পোস্ট অফিসেই এই সেবা দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

শুধু তাই নয়, মাইক্রো মার্চেন্ট চ্যানেলের মাধ্যমেও (দোকান) প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ব্যাংক এশিয়া। ১১ হাজারেরও বেশি এই চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা তুলে ইচ্ছামতো পণ্য কেনার সুযোগ পাচ্ছেন গ্রাহকরা।

এ ব্যাপারে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বাস্তবতাকে আমলে নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা দিতে এজেন্ট ব্যাংকিংকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সারা দেশে এর সেবা দেয়া হচ্ছে। এর সুফলও পাচ্ছে দেশের মানুষ। করোনাকালে শাখায় না গিয়েও অল্প সময়ে টাকা তুলতে পারছে গ্রাহক।

আমারসংবাদ/এআই