Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

চিন্তাহীন নতুনরা

তির্থক আহসান রুবেল

জানুয়ারি ১০, ২০২১, ১২:০০ পিএম


চিন্তাহীন নতুনরা

চলচ্চিত্র নির্মাণের হার দিন দিন তলানিতে ঠেকেছে। গত বছর মাত্র ১৮টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। এরমধ্যে ১০ টি ছবিই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে নামে মাত্র। এই অবস্থায় বেশিরভাগ শিল্পীই রয়েছেন বেকারের তালিকায়। 

বিষয়টি নিয়ে নির্মাতারা চিন্তিত হলেও উঠতি অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তেমন মাখা ব্যথা নেই। তারা আগের মতোই জীবন-যাপন করছেন। মনে করছেন সময় পাল্টাবে। আবার আগের মতো ব্যস্ততা ফিরে আসবে। আসলে কি তাই? চলচ্চিত্রে যে দিন গেছে সেদিন কি আর ফিরে আসে! 

‘আমি যখন সহকারি পরিচালক ছিলাম তখন বছরে ছবি নির্মাণ হতো শতাধিক। মুক্তি পেত ৯০টার মতো। যখন পরিচালক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলাম তখন ছবি নির্মাণ হতো ৮০টির মতো। মুক্তি পেত ৭০টির মতো। আর এখন তো বলার মতো ছবি মুক্তি পায় ১০টি। এখন সুদিন ফিরিয়ে আনতে হলে সবাই মিলে চেষ্টা করতে হবে। কেউ হাল ছেড়ে দিলে, দায়িত্ব ভুলে গেলে হলো না। 

অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অনেকের সঙ্গে ওঠা বসা করেন। তাদের অনেক-ফ্যান ফলোয়ার। তারা চেষ্টা করলে অনেক প্রযোজক আনতে পারেন। এখন তারা যদি ইন্ডাস্ট্রির কথা না ভেবে শুধু নিজের কথা ভাবেন তাহলে আর কি করা’- বলছিলেন পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন। 

করোনার এই দুঃসময়ে হাতে গোনা দু-একটা ছবির শুটিং হয়েছে। পুরো বছর জুড়ে মাহিয়া মাহি মাত্র একটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। সেটা নিয়ে দারুণ আফসোস তার। বলেন, ‘নায়ক-নায়িকাদের গ্ল্যামার খুব কম সময় পর্যন্ত থাকে। দশ থেকে পনের বছর আবেদন থাকে তাদের। এই সময়টা কাজে না লাগাতে পারলে তারা মূল্যহীন হয়ে পড়ে। আমার তো এরমধ্যে আট বছর হয়ে গেল। বাকি সময়টা আর বেকার কাটাতে চাই না। একের পর এক ছবি করে যেতে চাই। যেন সবাই আমাকে মনে রাখে।’

মাহির মতো অন্যরা যদি বিষয়টি বুঝতেন তাহলে আফসোস থাকতো না তারকা গড়ার কারিগর সোহানুর রহমান সোহানের। 

[media type="image" fid="105117" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

তিনি বলেন, এখনকার ছেলে-মেয়েরা কাজের চেয়ে সেলফি তুলতে বেশি ব্যস্ত। অনেক ছেলে-মেয়ে দেখি প্রতিদিন হেলায় ফেলায় সময় কাটাচ্ছে। নির্মাতা হিসেব এটা খুব খারাপ লাগে। তারা বুঝতে পারছে না কি হারাচ্ছে। যখন সংবাদপত্রে বিভিন্ন নায়িকাদের নিয়ে নিউজ পড়ি কষ্ট পাই। জি কে শামীম মামলায় কয়েকজন নায়িকার নাম এসেছে জানার পর থেকে লজ্জায় আছি। আগে একজন শাবানা ম্যাডাম, ববিতা ম্যাডাম, সূচরিতা ম্যাডামকে অনেক কোটিপতি দাওয়াত দিয়ে নিতে পারেনি। আর এখন শুনি মুদি দোকান উদ্বোধন করতেও হাজির হন তারকারা। এছাড়াও শুনেছি অনেক মাদকেও আসক্ত। আমরা আসলে চলচ্চিত্রের খুব বাজে সময়ে আছি। জানি না সামনে কি অপেক্ষা করছে।’

এদিকে উল্লেখ করার মতো সিনেমা না করলেও, নায়ক-নায়িকা তকমা নিয়ে অনেকে প্রায় প্রতি রাতেই নানান পার্টিতে ব্যস্ত থাকেন। কেউ কেউ বলেন, সিনেমার চেয়ে কম সময়ে বেশি আয় নাকি সেসব পার্টিতেই। অনেকে শুধুই মাস্তির জন্য পার্টিতেই ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু যে পরিচয়টার জন্য এই পার্টিতেগুলোতে যাচ্ছেন, সেই পেশাটাকেই করছেন উপেক্ষা। কারণ সেখানে নায়ক বা নায়িকা পরিচয়টাই বিক্রি হয়, মেধার প্রয়োজন হয় না। ফলে ক্যারিয়ার সচেতনতার দরকার পড়ছে না বলে অভিযোগ অনেকের। তবুও সবকিছু মিলিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে হতাশা চললেও, সিনিয়ররা এখনো আশা রাখছেন নতুনদের উপর। যারা হয়ত আনবে নতুন ভোর। কিন্তু নতুনরা কি ভাবছে সেসব! নাকি চিন্তাহীন নতুনেরা।

আমারসংবাদ/জেডআই