রেলওয়ের নানা অব্যবস্থাপনায় কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন সেজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে- গাইতে গাইতে একাই প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন।
এর আগে গত এপ্রিলে এই শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের আধুনিকায়নের দাবিতে অনশন করেন।
রনি টানা ৯ দিন ধরে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে চলেছেন। এই শিক্ষার্থী বলছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তার অহিংস আন্দোলন চলবে।
রনি গত জুন মাসে রেলের টিকিট কিনতে গিয়ে পদে পদে হয়রানির শিকার হন। এরপর ৭ জুলাই থেকে ছয়টি দাবিতে কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান শুরু করেন। ঈদের দিনেও তিনি ছিলেন অবস্থান কর্মসূচিতে।
মহিউদ্দিন রনি বলেন, গত ১৩ জুন রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের আসন বুক করার চেষ্টা করলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা কাটা নিলেও তিনি ট্রেনের আসন পাননি।
টাকা নেওয়ার বিষয়ে কোনো ডকুমেন্ট না দেওয়ায় তিনি সেদিন কমলাপুর স্টেশনের সার্ভার কক্ষে অভিযোগ জানালে সেখান থেকে 'সিস্টেম ফেইল' করার কথা বলা হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে টাকা না পেলে আবার যেতে বলা হয়। এভাবেই তার হয়রানির শুরু।
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে দুইবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। কিন্তু সেখান থেকে তাকে শুনানির জন্য ডাকা হয়নি। তারপর তিনি অহিংস আন্দোলন শুরু করেন।
এই অবস্থান কর্মসূচি চালাতে গিয়ে তাকে হুমকি পেতে হচ্ছে জানিয়ে বলেন, ৮ জুলাই কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার তার কাছে এসেছিলেন, দাবিগুলো শুনে একমত হয়েছেন।
কিন্তু জানিয়ে দিয়েছেন, এগুলো তার পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এগুলো পূরণ করতে পারে। এরপরই তাকে হয়রানি শুরু হয়। পুলিশ এসে তাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি পুলিশকে ফুল দিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানান।
রনি বলেন, রেলকর্মীরা তার সামনে এসে ঠাট্টা করছেন, বিদ্রুপ করছেন। কিন্তু তাতে তিনি দমে যাবেন না। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত স্টেশনেই অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন।
পকেটের টাকা খরচ করে এখানেই খাচ্ছেন, স্টেশনের মসজিদের ওয়াসরুম ব্যবহার করছেন। দুই থেকে তিন দিন পর গোসল করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে যাচ্ছেন। তার এই কর্মসূচিতে অনেকেই সংহতি জানাচ্ছেন।
রনির দাবিগুলো হলো- অনলাইনে টিকিট কেনায় হয়রানি বন্ধ করে তদন্ত করতে হবে, হয়রানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করতে হবে, অনলাইন-অফলাইনে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে, ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ অন্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক মনিটর করতে হবে, শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেল সেবার মান বাড়াতে হবে এবং ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে রনির এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফেডারেশন। শুক্রবার ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি মো. ফয়েজউল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল সংহতি জানিয়ে যৌথ বিবৃতিতে রনির দাবিগুলোর সঙ্গে সংহতি জানান।
একই সঙ্গে এ অবস্থান কর্মসূচিতে রেলওয়ে এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা ও হুমকির নিন্দা জানান তারা।
আমারসংবাদ/টিএইচ