মায়ের জীবন বাঁচাতে কিডনি বিক্রি করতে চায় ছেলে

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২২, ০৮:২১ পিএম

ঢাকার মহাখালী, তেজগাঁও আর গাজীপুর চৌরাস্তার অলিতে গলিতে পোস্টার লাগাচ্ছেন শেরপুরের ছেলে মেহেদী হাসান। ‘পোস্টারে লেখা আছে মায়ের জীবন বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি বিক্রি করতে চাই’। অনেক পরিশ্রম করে লাগানো পোস্টার অনেক সময় অন্যান্য পোস্টারে ঢাকা পড়ে।  মায়ের চিকিৎসা ও ওষুধ বাবদ খরচ যোগান দিতে চাকরির খোঁজে ২২ দিন আগে ঢাকাই আসে মেহেদী। শহর তার বড় অচেনা, কাওকে চেনে না সে, দিনের পর দিন খেয়ে না খেয়ে মহাখালী আর তেজগাঁও ফ্লাইওভারে রাতে ঘুমায় মেহেদী।

এমনই একটি প্রতিবেদন বুধবার (১৯ অক্টোবর) একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, কান্না জড়িত কণ্ঠে মেহেদী বলেন, ঢাকায় ট্রেনে আসছি, টাকা ছিলো না, মায়ের কানের রিং ছিলো এই রিংগুলো আমি বিক্রি করে দিছি। আমি বলেছি মা আমি চাকরি পেলে তোমার রিং, চিকিৎসা হবে আমার জন্য মা দোয়া করো।

একটি চাকরির জন্য কতজনের পা পর্যন্ত ধরেছি কিন্তু হয়নি। এছাড়া যে আর কোন উপায় নেই, মায়ের চিকিৎসার জন্য মাসে ৪ হাজার টাকার ওষুধ লাগে যা গত একমাস ধরে বন্ধ। মাকে ভালো কারার জন্য ঢাকাতে এসছি একটি চাকরি করার জন্য। 
মেহেদী আরো বলেন, আমি প্রত্যেকটি সেক্টোরে গেছি কত দারোয়ানের পা ধরেছি। আমার মা আজ বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ মার ডান হাত প্যারালাইজড হঠাৎ হাতে শক্তি আসে আবার চলে যায়।

মা বলে বাবা আমি কি ভালো হতাম না, তখন খুব কষ্ট হয় যে, মায়ের জন্য কিছুই হয়তোবা করতে পারলাম না। আজকে আমি যদি অসুস্থ হতাম তাহলে মা যেকোন ভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতো। করোনার শুরুর দিকে হঠাৎ মেহেদীর মা প্যারালাইজ হন দেখা দেয় হার্ডের সমস্যা।

২০১৭ সালে মেহেদীর বাবা তার মাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্যত্র সংসার শুরু করলে বাড়ি ছাড়া হয় মেহেদী ও তার মা। তার মা গর্মেন্টেসে কাজ করে সংসারের হাল ধরলেও এখন সে ভার মেহেদীর ওপর পড়েছে।

মেহেদীর মা হেনা বেগম বলেন, মাসে আমার ৪ হাজার টাকার ওষুধ লাগে আমার বুকে ব্যাথা আমি বিরাট অসুস্থ। শেরপুরে তার গ্রামের বাড়ি খোঁজ নিয়ে দেখা যায় টাকার অভাবে সে বাড়ি ভাড়া দিতে পারছিলেন না। এক বছর আগে তার মা তার এক আত্মিয়ের সাথে মেহেদীর বিয়ে দিলেও সেই সংসারও চলছে অনেক কষ্টে।

মেহেদীর স্ত্রী মৌসুমী আক্তার বলেন, তাদের নতুন সংসারে এমনও দিন গেছে যে টানা তিন দিন না খেয়ে থেকেছে, লজ্জার কথা কি বলবো, ঘরে চাল নেই, সবতো বাজার থেকে কিনে আনতে হয়, এখন খাদ্যের অভাবে আমরা না খেয়ে আছি।

মেহেদীর বাসার মালিক ছায়েদুর রহমান বলেন, সে আমাদের এখানে ভাড়া থাকে ছেলেটি অভাবগ্রস্ত কিন্তু অনেক ভালো। সে ঠিকমত আমার বাসার ভাড়াও দিতে পারে না।

মেহেদীর কাছে তার মা তার পৃথিবী নিজের জীবন দিয়ে হলেও সে চায় তার মা ভালো থাকুক। তাই দিনভর এই শহরে ঘুরে ঘুরে চাকরি খুঁজে বেড়ায় মেহেদী। কারন ওষুধ ছাড়া মাকে বাঁচানো যাবে না।

মিহেদী বলেন, মাদরাসার লাইনে দাখিল, আলিম শেষ করে ইংরেজীতে অনার্সে ভর্তি হয় ফাস্ট ইয়ারে পরীক্ষার ফর্ম পুরনে যে টাকা আমাকে দেওয়া হয়ছিলো তা দিয়ে মায়ের ওষুধ কিনেছিলাম। এখন সবাই আমাকে জিজ্ঞাসা করে তোমার পড়ালেখা ঠিক আছে তো আমি বলি ঠিক আছে, কিন্তু আমি তো জানি যে আমি পরীক্ষা দিতে পারি নাই।

টিএইচ