বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির নিকট হতে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং অর্থ আত্মসাতের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মোঃ হাসান ছালামকে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গত রাতে (র্যাব-৩) এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর মতিঝিল এলাকা হতে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
মঙ্গলবার (৭) জানুয়ারি দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টার কাওরান বাজার থেকে এ ব্যপারে জানান, র্যাব-৩ এর অধিনায়ক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন জানান, ধৃত আসামি যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করত।যেমন, জেমস্ সুপার শপ লিমিটেড, জেমস্ এন্ড জুয়েলার্স, মতিঝিলে মা টেলিকম, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে উজির আলী ট্রাভেলস, কুমিল্লা কান্দিরপাড়ে ডায়মন্ড গ্যালারি লিমিটেড প্রভৃতি ।
র্যাব -৩ অধিনায়ক বলেন,এ আসামি দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিক মুনাফার আশায় সে একই সময় একাধিক প্রতিষ্ঠানে যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে থাকে। ফলশ্রুতিতে যখন সে দেখতে পায় সে ভালো মুনাফা করতে পারে তখন আরও অধিক বিনিয়োগের জন্য তৎপরতা চালায়। এসময় সে তার ব্যবসায়িক পার্টনারসহ আত্মীয় স্বজন এবং পরিচিত লোকজনের নিকট হতে উচ্চ হারে মাসিক লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে কোটি টাকার অধিক হাতিয়ে নেয়। কিছুদিন লভ্যাংশ দিলেও পরবর্তীতে সে লভ্যাংশ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। পাওনাদাররা টাকার জন্য নিয়মিত তাগিদ দিতে থাকলে সে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে চেক প্রদান করলেও নির্ধারিত তারিখে তার একাউন্টে কোন টাকা পাওয়া যায় না এবং ব্যাংক কর্তৃক চেক ডিজাইন করা হয়।
তিনি বলেন, এমনিভাবে সে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিত এবং টাকা ফেরত চাইলে পাওনাদারদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি ও প্রাণনাশের ভয়ভীতি প্রদর্শন করত। এর ফলে পাওনাদারগণ তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে চেক জালিয়াতির মামলা দায়ের করে।
আরিফ মহিউদ্দিন বলেন,এছাড়াও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে। প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠানসমূহের কয়েকটি মাসিক কিস্তি পরিশোধ করে পরবর্তীতে তা বন্ধ করে দেয়। নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও সেগুলো পরিশোধ না করায় এসকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তাকে বারবার চূড়ান্ত নোটিশ প্রদান করা হয়। এতেও কাজ না হলে তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে আর্থিক ঋণ খেলাপের দায়ে মামলা দায়ের করা হয়। এবং বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক তাকে বারবার টাকার বিষয়ে মিমাংসা আলোচনা করার সুযোগ প্রদান করা হলেও সে কখনই বিজ্ঞ আদালতে হাজির হয়নি।
তিনি বলেন, বিজ্ঞ আদালতে চলমান মামলা গুলোর শুনানিতেও সে কখনও হাজিরা দেয়নি। এমনকি কৌশলে এসব ঋণের দায় এড়ানোর জন্য সে তার বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং দোকান বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহে জমি ক্রয় করে।পরবর্তীতে, তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে সে পান্থপথে তার আলিশান ফ্ল্যাট বিক্রি করে ডেমরা এলাকায় বন্ধুর বাসায় গাঁ ঢাকা দেয় এবং পলাতক থাকা অবস্থায় মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেশ ছেড়ে ইউরোপে পালিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন ব্রিফিং থেকে আরও জানান, আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পারি, সে (হাসান ছালামকে) জেমস্ সুপারশপে (বসুন্ধরা সিটি) পার্টনারশীপে মাসিক ৫০ হাজার টাকা করে লভ্যাংশ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গিয়াস উদ্দিন নামক এক ব্যাক্তির নিকট হতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করে।
পরবর্তীতে গিয়াস উদ্দিন ধৃত আসামির নিকট হতে প্রতি মাসে তার লাভের টাকা চাইলে সে বিভিন্নভাবে তালবাহানা করতে থাকে। গিয়াস উদ্দিন সঠিকভাবে লাভের টাকা না পাওয়ায় নিরুপায় হয়ে তার মূলধন ফেরত চেয়ে না পেয়ে মামলা করতে বাধ্য হয়। উক্ত মামলায় ধৃত আসামির নামে ২০২২ সালে বিজ্ঞ আদালত যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন এবং উক্ত রায়ের গ্রেফতারি পরোয়ানার প্রেক্ষিতে র্যাব-৩ কর্তৃক তাকে গ্রেফতার করা হয়।গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
উল্লেখ্য, ব্যক্তিগত জীবনেও গ্রেপ্তারকৃত এ আসামি তার স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় ২০১৯ সাল থেকে সে এবং তার পরিবার আলাদা বসবাস করে। তার ০২ ছেলে ও ০২ কন্যা সন্তান রয়েছে।
এবি