পাঁচ লাখ টাকা চুক্তিতে পিতাকে হত্যা করান ছেলে

আবু ছালেহ আতিফ প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩, ০৩:১৮ পিএম
  • ভাড়াটিয়া হত্যাকারী গেপ্তার,আলামত উদ্ধার
  • আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান
  • নেপথ্যে বোনদের ঠকিয়ে একাই বাবার সম্পত্তি গ্রাস

 

ডাকাতির নাটক সাজিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চুক্তিতে শ্বাস রোধ করে পিতাকে হত্যা করান পলাতক মূল পরিকল্পনাকারী মাসুদ (৪২)। (ভিকটিমের ছেলে)বাবার সম্পত্তি একাই ভোগ করার জন্য এ পরিকল্পনা করেন মাসুদ হাসান। গত (৩১) জানুয়ারি রাত আনুমানিক ১১টায় নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় এ হত্যাকান্ড ঘটিত হয়।মুক্তিযোদ্ধা বাবা আ: হালিম (৭২) হত্যার পেছনে সম্পত্তি একাই ভোগ করার চেষ্টা।গ্রেপ্তারকৃত আসামি (রুবেলের) জবানবন্দি থেকে এ তথ্য জানান নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম পিপিএম।

রবিবার (১২) ফেব্রুয়ারি দুপুরে  পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স, ধানমন্ডি থেকে প্রেস ব্রিফিং থেকে এসব তথ্য জানান তিনি।

মনিরুল ইসলাম পিপিএম জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামি (রুবেলকে) আমাদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এবং আদালতে প্রদত্ত আসামীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনা এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় প্রকাশ পায় যে; আসামী রুবেল ভিকটিমের পরিবার আসামীর সাথে বিশ্বস্ততার সম্পর্ক। সে ভিকটিমের পরিবারের বিভিন্ন কাজকর্ম করে বিশ্বস্ততা অর্জন করেন। মৃত ভিকটিমের ছেলে এইচ এম মাসুদ সম্পত্তি ভাগাভাগি এবং বাসায় রক্ষিত নগদ টাকা একাই গ্রাস করার  উদ্দেশ্যে  তাকে (পাঁচ লক্ষ) টাকার চুক্তিতে  মুক্তিযোদ্ধা আঃ হালিম (৭২) কে হত্যা করার পরিকল্পনা করে তার ছেলে মাসুদ।

মনিরুল ইসলাম পিপিএম আরো জানান, ধারাবাহিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দিন জানুয়ারি ৩১ তারিখ রান্না অনুমান ১০টায় মৃতভিকটিমের ছেলে এইচ এম মাসুদ আসামী রুবেলকে ফোন দিয়ে দ্রুত তাদের বাড়িতে যেতে বলে। ফোন পেয়ে আসামী রুবেল পূর্ব হতে ভিকটিমের ছেলে এইচ এম মাসুদ কর্তৃক খুলে রাখা কলাপসিবল গেইট, রুমের দরজা খোলা পেয়ে পেরিয়ে দ্রুত ভিকটিমের বাসায় প্রবেশ করে।

এবং ভিকটিমের বাসার ২য় তলায় যেখানে মাসুদ এবং তার বাবা বসবাস করে সেখানে গিয়ে পূর্ব হতেই অবস্থান নেয়। রাত্রে অনুমান ১১.০০ টায় মৃত ভিকটিম আঃ হালিম (৭২) ঘুমিয়ে পড়লে তারা  উভয়ই (ভিকটিমের) রুমে প্রবেশ করে।

নারায়নগঞ্জ পুলিশ সুপার আরও জানান, তারা প্রথমে  বিছানার মশারী খুলে, ভিকটিমের ছেলে মাসুদ তার বাবার হাত পা চেপে ধরে এবং আসামী রুবেল তার দুই হাত দিয়ে ভিকটিমের গলা চেপে ধরে। ভিকটিম চিৎকার দিলে আসামী রুবেল বালিশ দিয়ে ভিকটিমের মুখ চেপে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। ভিকটিম মারা যাওয়ার পর তার ছেলে আসামী এইচ এম মাসুদ তার ঘরে থাকা ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মাপার যন্ত্র দ্বারা ভিকটিমের ব্লাড প্রেসার মেপে মৃত্যু নিশ্চিত হন।

পরবর্তীতে ভিকটিমের ছেলে আসামী এইচ এম মাসুদ পরিকল্পনা মাফিক তাদের আলমারি হতে (পাঁচ) লাখ টাকা এবং তাদের বাসার সিসি টিভি ক্যামেরার ডিবিআর বক্স বাহিরে ফেলে দেয়ার জন্য আসামী রুবেলকে প্রদান করে এবং তারা পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য ডাকাতির নাটক সাজাতে আসামী রুবেন ভিকটিমের ছেলে আসামী এইচ এম মাসুদাকে পাটের রশি দ্বারা হাত-পা বেঁধে এবং গামছা দ্বারা মুখ বেধে ফ্লোরে ফেলে রাখে এবং তিনি(রুবেল) বাসা হতে টাকা এবং সিসি টিভি ক্যামেরার ডিবিআর বক্স নিয়ে বাড়ীর পিছনের দিক দিয়ে সুকৌশলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

তিনি আরও জানান, আলামত হিসেবে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত পাটের রশি গামছা এবং বালিশ, ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মাপার মেশিন জব্দ করা হয় এবং সন্দেহ ভাজন আসামী রুবেল গত ১১ ফেব্রুয়ারি  হত্যাকান্ডের ঘটনার সাথে নিজের সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে  জুডিসিয়াল আদালতে ।

হত্যার রহস্য উন্মোচন কিভাবে হলো প্রশ্নের জবাবে নারায়নগঞ্জ পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম পিপিএম বলেন, মূলত হত্যাকারী মাসুদ  তার পিতা ভিক্টিম মৃত (আব্দুল হালিম) কে হত্যার পরেও বাসায় ছিলো। তাই তাকে সন্দেহ করা অস্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু ;পরবর্তীতে যখন অন্য আসামি রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং হত্যার সময়ে তাদের ফোন একই জায়গায় ছিলো যেটা আমাদের প্রযুক্তি দিয়ে সনাক্ত করতে পেরেছি। এ ছাড়াও রুবেলের জবানবন্দির ও অপর আসামি মাসুদের হত্যা পরিকল্পনার কথা জানা গেছে।মূলত এর মাধ্যমেই বোঝা যায় যে মাসুদ এখানে যুক্ত। এবং তিনি তাবলীগের (চেল্লা) নাম দিয়ে এখনো পলাতক রয়েছেন।

পিতাকে হত্যাকারী মাসুদকে গ্রেপ্তারের পদক্ষেপ কতদূর জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম পিপিএম বলেন, আমরা এ ব্যাপারে জোড়ালো অভিযান চালাচ্ছি এবং তিনি যদি দেশের বাইরে কোথাও জান তাহলে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নিবো।

এবি