চট্টগ্রামের চন্দনাইশে শিশু রুনাকে পাশবিক নির্যাতনের পর পুড়িয়ে হত্যা মামলার স্বাক্ষী অপহৃত ব্যাসায়ীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার নাম গোলাম আজাদ(৫৫)। রবিবার দিবাগত গভীর রাতে চন্দনাইশ এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চন্দনাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ৯৯৯ এ কল পেয়ে আমরা গোলাম আজাদকে উদ্ধারের জন্য কাজ শুরু করি। রাতেই আমরা তাকে উদ্ধার করি। ‘তিনি আমাদের থানায় লিখিত এজহার দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি।’
উদ্ধার হওয়া গোলাম আজাদ বলেন, রবিবার রাত নয়টার দিকে আমি আমার ব্যক্তিগত গাড়ী নিয়ে চট্টগ্রাম শহর থেকে নিজ বাড়ীতে আসার পথে শাহ আমানত (নতুন ব্রীজ) টোল প্লাজা সংলগ্ন রাস্তার উপরে আমিন আহমদ রোকনের নেতৃত্বে কিছু লোক আমাকে মারধর করার পর ধরে নিয়ে যায়। এসময় আমার গাড়ীর ড্রাইভারকেও তারা মারধর করে।
তিনি বলেন, মারধরের পর আমাকে তারা অপহরণ করে আমিন আহমদ রোকনের বাড়িতে নিয়ে রাখে। সেখানে নিয়ে আমাকে বিভিন্ন হুমকি দেয়। এই আমিন আহমদ রোকনকে আমি দশ লক্ষ টাকা হাওলাত দিয়েছিলাম, সেটা আজও ফেরত দেয়নি। এছাড়া শিশু রুনাকে পাশবিক নির্যাতনের পর পুড়িয়ে হত্যার মামলার আসামি আমিন আহমদ রোকন, আর আমি এই মামলার স্বাক্ষী।
গোলাম আজাদ আর জানান, তারপর আমার আত্মীয় স্বজনরা ৯৯৯ এ কল দিলে পুলিশ আমাকে উদ্ধার করতে আসে। পুলিশ আসার কিছু সময় আগে তারা আমাকে ছেড়ে দেয়। তখন আমি আমার বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম।
এদিকে ২০১৪ সালে শিশু রুনাকে পাশবিক নির্যাতনের পর পুড়িয়ে হত্যার মামলা পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়েছে ছয়টি মানবাধিকার সংগঠন। সম্প্রতি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে রোববার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনগুলো।
ওই মামলার স্বাক্ষী অপহরণ হওয়া গোলাম আজাদ।
ওই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘটনা ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বরের। ঘটনাস্থল নগরীর ১৩ নং আইস ফ্যাক্টরির টিএম টাওয়ারের ৪র্থ তলা। সেখানে আমিন আহমেদ রোকনের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করত রুনা (১৪)। গৃহকর্তা রোকন রুনার ওপর বিভিন্ন সময়ে পাশবিক নির্যাতন চালাত। রুনার মা ২৯ নভেম্বর, ২০১৪ মেয়েকে দেখতে আসলে মেয়ে রুনা তার সঙ্গে রোকনের অন্যায় আচরণের কথা জানালে আসামি রোকন ক্ষিপ্ত হয়ে রুনাকে লাথি মারে। মায়ের সামনে মেয়েকে নির্যাতনের পর রান্না ঘরে নিয়ে গিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিলে রুনার শরীরের অধিকাংশই পুড়ে যায়। পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুই দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সে মারা যায়। রুনার মা রোকেয়া বেগম সদরঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ২৬(১১)২০১৪।
মামলার একমাত্র আসামি চন্দনাইশের আবদুল জব্বারের ছেলে আমিন উদ্দিন আহমেদ রোকন। বর্তমানে সে চন্দনাইশের জোয়ারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকারকর্মীরা বলেন, একটি হত্যা মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় না এনে বাদীকে গুম করে মিথ্যা বাদী দিয়ে মামলা তুলে নেওয়া হয়। একটি অসহায় শিশুর হত্যাকাণ্ড এভাবে ধামাচাপা দিলে ন্যায়বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। নারী ও শিশু নির্যাতনের ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী কোনো পরিকল্পিত হত্যা মামলা প্রত্যাহার করা যায় না। এমনকি এই মামলায় ঘটনার কোনো সাক্ষীকে আদালতে আনা হয়নি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মানবাধিকারকর্মীরা মামলার ডকেটের কপি উপস্থাপন করে পুলিশি তদন্তের বিভিন্ন আইনগত অসঙ্গতি তুলে ধরেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান তারা। বক্তারা উপস্থিত সাংবাদিকদের আন্তরিক সহায়তা কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ছয়টি মানবিকার সংস্থার পক্ষ থেকে সেলিম হোসেন চৌধুরী, মো. রফিকুল ইসলাম, মনসুর উল আলম প্রমুখ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
মানবাধিকার বাস্তবায়ন কমিশন, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, বাংলাদেশ আইন ও শালিস কেন্দ্র, লিগ্যাল এইড কমিটি, কাশফুল সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, নারী ও শিশু কল্যাণ ফাউন্ডেশন এ সংবাদ সম্মেলনে ওই মামলার পুনঃতদন্ত ও সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে আসামি রোকনের যথোপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন।