রাজধানী ঢাকার খিলক্ষেতে গত ২৩ মে মেছের আলী নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ‘অজ্ঞাত’ কেউ একজন তাকে হত্যা করে খিলক্ষেত থানার আশিয়ান হাউজিং প্রজেক্টের বালুর চরে ফেলে যায়।
একটি ব্যাগের সূত্র ধরে মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই সেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রমজান আলী নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছেন আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদ্যস্যরা।
রোববার (৪ জুন) রাতে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার মাওনা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার (৫ জুন) গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রমজান আলী টাকা লুটের উদ্দেশ্যে মেছের আলীকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে খিলক্ষেতের বড়ুয়ার আসিয়ান হাউজিং প্রজেক্টের ভেতর ফেলে যান। সেখানেই মেছের আলীর মৃত্যু হয়।
ব্যাগের সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘটন সম্পর্কে ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেছেন, ‘গত ২৩ মে বিকালে মেছের আলীর লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়। মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলে একটি ব্যাগ পাওয়া যায়। সেই ব্যাগ থেকে লোহার কাঁচি, কম্বলসহ কিছু নতুন-পুরোনো কাপড় ও মিনা নামের এক নারীর জন্ম নিবন্ধন ও টিকা কার্ড পাওয়া যায়।’
‘প্রাপ্ত ব্যাগ ও ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। জন্ম সনদের প্রেক্ষিতে মিনাকে ও তার স্বামী শাহাবুদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এই জিজ্ঞাসাবাদে শাহাবুদ্দিন জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতরের কয়েক দিন আগে তিনি তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় যাওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ থেকে কমলাপুর রেল স্টেশনে উপস্থিত হন।
সে সময় রমজান আলী নামে এক বয়স্ক লোক তাকে এক সঙ্গে নেত্রকোনায় যাওয়ার কথা বলে। তবে রমজান আলী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা না করে কারওয়ান বাজার থেকে বাসে করে যাওয়া বিকল্প রাস্তার কথা বলেন। শাহাবুদ্দিন সরল বিশ্বাসে রমজান আলীর সাথে কারওয়ান বাজার যান।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘সেখানে গিয়ে শাহাবুদ্দিনকে চা পান করান রমজান আলী। চা পানের পর শাহাবুদ্দিনকে তার কাছে থাকা ব্যাগ ও টাকা তাকে দিতে বলেন রমজান। শাহাবুদ্দিন চারশত টাকা ও তার ব্যাগটি রমজান আলীর কাছে দেন। রমজান আলীর মোবাইল ফোন থেকে শাহাবুদ্দিন তার স্ত্রীকে জানান, সে রমজান আলীর সাথে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে, সে একই এলাকায় যাবে।
শাহাবুদ্দিন চা পান করার ফলে তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে রমজান আলী ব্যাগ ও টাকা নিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলে প্রাপ্ত ব্যাগটি শাহাবুদ্দিনকে দেখানো হলে সে তার ব্যাগটি শনাক্ত করে। এরপরই রমজান আলীকে শনাক্ত করা হয় এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
অপরদিকে মেছের আলীর সঙ্গে রমজান আলীর পরিচয় ও তার কাছ থেকে টাকা লুটের ব্যাপারে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘গত ২০ মে মেছের আলী বিমানবন্দর রেলস্টেশনে যান। সেখানে রমজান আলীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর অটো রিকশাযোগে রমজান ও মেছের আলী বড়ুয়া রেলগেট এলাকায় আসেন।
তখন রমজান আলীর পিছনে একটি ব্যাগ ঝোলানো ছিল। ঐ ব্যাগের ভেতরই শাহাবুদ্দিনের নিকট হতে নেওয়া ব্যাগটি ছিল। মেছের আলীকে নিয়ে রমজান আলী রেলগেটের সামনের এক দোকানে চা পান করেন। চা পান করার সময় মেছের আলীর নিকট ৪ হাজার টাকা দেখতে পান রমজান। ওই সময় তিনি কৌশলে মেছের আলীর চায়ের মধ্যে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে দেন।’
ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘নিহত মেছের আলীর কাছে থাকা ৪ হাজার টাকা নেয়াই রমজান আলীর মূল উদ্দেশ্য ছিল। মেছের আলী ও রমজান আলী চা পান করার পর বরুয়ার বোয়ালিয়া খাল সংলগ্ন আশিয়ান হাউজিং প্রজেক্টের বালুর চরে উপস্থিত হন। কিছুক্ষণ পর মেছের আলী অজ্ঞান হয়ে গেলে রমজান আলী মেছের আলীকে একটু দূরে বড় ঘাসযুক্ত জায়গায় রেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। রমজান আলী মনের অজান্তে ব্যাগটি ঘটনাস্থলে রেখে চলে যান। এই ব্যাগের সূত্র ধরেই অপরাধীকে সনাক্ত করা হয়।’
খিলক্ষেত থানায় রুজুকৃত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার রমজান আলীকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করলে তিনি দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এইচআর