নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান মহিলা পরিষদের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৩, ০৩:৩৫ পিএম

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডাক্তার ফওজিয়া মোসলেম।

শনিবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে এগিয়ে আসুন, সহিংসতা প্রতিরোধে বিনিয়োগ করুন’ (Unite to End Violence against Women and Girls, Invest to Prevent Violence) এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ (২৫ নভেম্বর - ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩) ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে  তিনি এ আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের প্রোগ্রাম অফিসার(কাউন্সেলিং) সাবিকুন নাহার।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার, উন্নয়ন সংগঠন, নারী ও মানবাধিকার সংগঠন, নারী আন্দোলন বহুমাত্রিক কাজ করলেও  নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার মাত্রা ক্রমাগতই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সাথে বাড়ছে বর্বরতার ধরণ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১৩টি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবর বিশ্লেষণ করে দেখা যায় মোট ২৫৭৫ টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৪৩৩টি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩৯৭ টি। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ উদ্বেগের সাথে আরও লক্ষ্য করছে যে, বর্তমানে সময়ে অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমে ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক অভিঘাতের কারণে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতাও বাড়ছে। এ সকল পরিস্থিতির উত্তরণে  নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ‘সমন্বিত বিনিয়োগ’ অপরিহার্য বলে মনে করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আইন-নীতিমালা-কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা এবং সংবেদনশীলতা বৃদ্ধিতে জেন্ডার বাজেটে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ, সহিংসতার কারণ নির্ণয় এবং এর আলোকে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে গবেষণায় বিনিয়োগ করতে হবে।

আরও বলা হয়, ‘জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এডভোকেসি শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে নারীর মানবাধিকার সংগঠন, নারী আন্দোলনে আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ভূমিকা পালনের উপর জোর দিতে হবে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মনে করে, গণমাধ্যমসহ নাগরিক সমাজের ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ এই ক্ষেত্রে একটি বড় বিনিয়োগ। এছাড়াও ব্যক্তি/পরিবার ও নাগরিক সমাজের করণীয়; রাষ্ট্র/সরকারের করণীয় এবং নারী আন্দোলনের করণীয় বিষয়ে সুপারিশসমূহ তুলে ধরা হয়।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মডারেটরের বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম  সাম্প্রতিককালে ধর্ষকের সাথে ধর্ষণের শিকার নারীর বিয়ে বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আইনের বিধানে এ ধরণের বিয়ে দিয়ে সমাধানের কথা বলা নেই। এতে নারীর আত্মমর্যাদার উপরেও আঘাত আসে। তার নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হয়। নারীর মর্যাদা ও মানবাধিকার রক্ষায় ধর্ষকের সাথে বিয়ে কোনভাবেই কাম্য নয়। অন্যদিকে ধর্ষণের ঘটনাসহ বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনাও নানা হতাশাজনক অবস্থার কারণে কিশোর কিশোরী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’

আত্মহত্যার ঘটনা প্রতিরোধে মানসিক সহায়তা, কাউন্সেলিং সেবার পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ অন্যতম একটি কারণ হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। শুধু দরিদ্র পরিবারেই নয় বরং মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারেও বাল্য বিয়ে হচ্ছে। বিয়েতে যৌতুক নেয়া বন্ধে ও যৌতুকের কারণে সৃষ্ট সহিংসতা প্রতিরোধে ১৯৮৭ সালে যৌতুন নিরোধ আইন প্রণয়ন করা হলেও আইনের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না।

যৌতুকের কারণে হত্যা ও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে; একই সাথে ডিভোর্সের সংখ্যা ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসকল ঘটনায় কেবল নারীকে দোষারোপ না করে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে তিনি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, কর্মক্ষেত্রে নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, গণপরিবহন ও গণপরিসর যৌন হয়রানিমুক্ত করে গড়ে তোলা, সম্পদ-সম্পত্তিতে নারীদের সমঅধিকার দেয়া, নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে বিনিয়োগের ক্ষেত্রকে আরো বিস্তৃত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের মধ্যে সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী ও শাহানা কবির, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগমসহ সম্পাদকমন্ডলী, কর্মকর্তা এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এআরএস