সাধারণত শীত মৌসুমে বায়ুদূষণের পরিমাণ বেশি থাকে। শীত শেষে তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে কিন্তু চলতি বছর বেড়েই চলেছে বায়ুদূষণ। এর ফলে রাজধানীবাসীর জীবনে পড়ছে বিরূপ প্রভাব। যেমনি কমছে জীবন মান তেমনি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে সবাই।
বিগত কয়েক দিনের মতো রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিশ্বের ১০০টি শহরের মধ্যে বায়ুদূষণে ঢাকা সবার শীর্ষে অবস্থান করে।
রোববার সকাল সাড়ে আটটায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (আইকিউ এয়ার) বাতাসের মানসূচকে ঢাকার স্কোর ছিল ৩৯৪। এ স্কোরকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বলে ধরা হয়। যা দূষণের মাত্রার মধ্যে সর্বোচ্চ। বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (আইকিউ এয়ার) সূচক থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
বায়ুদূষণের দ্বিতীয় অবস্থানে থাকে ভারতের শহর দিল্লি। এই শহরটির স্কোর ছিল ২৪৪ অর্থাৎ সেখানকার বায়ুর মান ছিল ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’। এছাড়া তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতের মুম্বাই শহরের স্কোর ছিল ২৩৩। যার বায়ুর মানকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে ধরা হয়। ১৯২ স্কোর নিয়ে পরের অবস্থানে রয়েছে কিরগিজস্তানের বিশকেক শহর এবং ১৮৮ স্কোর নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ভারতের শহর কলকাতা।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়; আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলে মনে করা হয়। ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়া ৩০১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়, যা নগরের বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
সাধারণত একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি ধরনকে ভিত্তি করে; যেমন : বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন (ও৩)। আইকিউএয়ারের দেওয়া গতকালের তালিকায় দেখা যায়, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই (পিএম ২.৫) দূষণের প্রধান উৎস। ঢাকার বাতাসে যতটা এই বস্তুকণা আছে, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ডের চেয়ে ৬৮ গুণের বেশি।
বায়ুমণ্ডলীয় বিষয়ক সংস্থা বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) গবেষণা মতে, সাধারণত এ সময়টায় বায়ুদূষণ কমার দিকে থাকে। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে উল্টোটা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতির অনেক অদ্ভুত আচরণ দেখা যায়, ঢাকার বায়ুর অবস্থাও তেমন হয়ে গেছে। কখন এটি বেশি বা কম হচ্ছে, কেন হচ্ছে, তা নির্ণয় করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার বায়ুদূষণের স্থানীয় উৎসগুলোর মধ্যে আছে যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়া, নির্মাণকাজের দূষণ, আশপাশের ইটভাটার ধোয়া। এখন ঢাকার দূষণে স্থানীয় উৎসগুলোই বেশি সক্রিয়। সেগুলো না কমাতে পারলে দূষণ কমবে না।
ঢাকার বায়ুদূষণ থেকে বাঁচতে বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। বাইরের দূষণ থেকে বাঁচতে জানালা বন্ধ রাখা উচিত। বাইরে গিয়ে শরীরচর্চা না করারও পরামর্শ দিয়েছে তারা। বায়ুদূষণ বেশি হলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন সংবেদনশীল গোষ্ঠীর ব্যক্তিরা। তাদের মধ্যে আছেন বয়স্ক, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও জটিল রোগে ভোগা মানুষেরা। তাদের বিষয়ে বিশেষ যত্নবান হওয়া দরকার।
এআরএস