জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান সংস্কারে যুক্ত হল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৪, ১০:৪৭ এএম

দেশব্যাপী সংস্কার কাজে ছাত্র জনতার ব্যাপক কর্মযজ্ঞের অংশ হিসেবে গত ১৫ আগস্ট ছাত্র জনতা উপস্থিত হয়েছিল জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের পরিচালকের দপ্তরে। এ সময় তারা পরিচালকের কাছে ৫ দফা দাবি পেশ করেন। 

ছাত্র জনতার ৫ দফা দাবিগুলো হলো- জাতীয় প্রতিটি বিষয়/প্রতিষ্ঠানের কোন লোগো থাকে, স্লোগান থাকে, আলাদা মিশন ভিশন থাকে। এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানটি উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণীর হওয়ায় এটি বৈষম্যের শিকার হয়ে এসব কিছু নির্ধারণের প্রয়োজন কেউ বোধ করেনি। বর্তমান ছাত্র সমাজ এই বৈষম্য মানবে না। টেকসই ঢাকা নগর গড়তে উদ্যানটির এসব উপাদান আমরা প্রস্তাব করছি তা কালক্ষেপণ ছাড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে হবে।

সপ্তাহে অন্তত একদিন সাপ্তাহিক বন্ধ রাখা এখানকার বন্যপ্রাণীর ন্যূনতম অধিকার রক্ষা করে যেটাকে মানুষের ক্ষেত্রে মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকার বলা হয়। অনতিবিলম্বে সাপ্তাহিক ১/২ দিন বন্ধ রাখার প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

প্রবেশমূল্য বৃদ্ধির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত বাতিল করে জাতীয় চিড়িয়াখানার মত করা হোক।

বিশ্বমানে উন্নীতকরণের জন্য শীঘ্রই ছাত্র জনতাকে অংশীদার রেখে বড় প্রকল্প নেয়া হোক।

ছাত্র ছাত্রীদের ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্ত করে সর্বক্ষেত্রে আমাদের মতামত কে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত দিতে হবে।

শনিবার সাপ্তাহিক সরকারি ছুটির দিন সকাল ৮টায় জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে যেকোনো ধরনের শিষ্টাচার বহির্ভূত কার্যক্রম মনিটরিং ও দমন এবং উদ্যানের উন্নয়নের সমন্বিত ও অংশগ্রহণমূলক কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের উদ্দেশ্যে কর্মরত সকল কর্মচারী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রতিনিধি ও সদস্যরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান আয়োজন করেন।

এতে অংশগ্রহণকারীরা একটি লংমার্চ পরিচালনা করেন তার নেতৃত্ব দেন জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের পরিচালক শওকত ইমরান আরাফাত। লংমার্চটি উদ্যানের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে গিয়ে শেষ হয়। 

ছাত্র প্রতিনিধিরা জানায়, তারা বাংলাদেশে বৈষম্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও সোচ্চার হয়েছেন। বাংলাদেশে সংগঠিত মানুষে মানুষে বৈষম্যের বিরুদ্ধে অনেকে আন্দোলন করলেও মানুষ নিজের স্বার্থে এতদিন প্রকৃতি, পরিবেশ, বন, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের প্রতি চরম বৈষম্য করেছে। এমনকি মানুষ নিজের প্রয়োজন মিটানোর পর নিজে অনুধাবন করতেও ব্যর্থ হয়েছে যে তারা প্রকৃতির সাথে বৈষম্য করে নিজের অধিকার ও স্বার্থ আদায় করতেই ব্যস্ত থেকেছে কেবল। 

এ প্রসঙ্গে পরিচালক মতামত দেন, এই জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান কেবল ঢাকা শহরের নয়, বরং বাংলাদেশের অমূল্য, অপ্রতিস্থাপনযোগ্য ও অপরিহার্য সম্পদ। এর উন্নয়নে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অংশগ্রহণ ও সচেতনতাসৃষ্টি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে। 

প্রতিটি উন্নত রাষ্ট্রে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাসেবী কমিউনিটি গ্রুপ থাকে। বাংলাদেশে ছাত্র-ছাত্রীরা যেভাবে দেশ সংস্কারের কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেছে তেমনি যদি প্রকৃতি পরিবেশ ও অন্যান্য প্রাণীগোষ্ঠীর অধিকার এর সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে নিজেদের নিবেদিত করতে পারে তবেই কেবল বাংলাদেশ ও এদেশের মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা করা সম্ভব হবে। এসব কিছুর অধিকারকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করা মানে নিজেরটা দিয়ে দেয়া নয়, বরং নিজের ভবিষ্যৎকে সুনিশ্চিত করে নিজের অর্জনের চেষ্টা করা। 

ছাত্র-ছাত্রীরা বলেন, এখন থেকে আমরা ‘Green Generation’ হওয়ার চেষ্টায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করব। আমরা মানুষের পাশে যেমন দাঁড়িয়েছি তেমনি মানুষের অস্তিত্বের প্রয়োজনেই প্রকৃতির জন্য অকাতরে কাজ করব। আর ‘Green Generation’ সমগ্র বিশ্বের তরুণদের জন্য একটি অনুসরণীয় রোল মডেল হবে।

ইএইচ