রাজধানীর জেনেভা ক্যাম্পে বসছে সিসি ক্যামেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২৪, ১২:১১ পিএম

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্প (বিহারি ক্যাম্প)। বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে আটকে পড়া ১১৫টি উর্দুভাষী ক্যাম্পের মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত জেনেভা ক্যাম্প। মাত্র ১৫ একর জায়গার জেনেভা ক্যাম্পে বাসিন্দার সংখ্যা ৫৫ হাজারের বেশি। যাদের মধ্যে আবার বেশিরভাগ মাদকসহ নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। মোহাম্মদপুর ও আশেপাশের এলাকার নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্পের বাসিন্দারা হুমকির কারণ হয়ে ওঠেছেন। জেনেভা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারসহ নানা কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে প্রায়ই।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মাদক ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্রে করে সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে শিশুসহ ৭ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া চলতি বছরে মাদক কারবারিদের সংঘর্ষে দুই শিশুসহ ৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক।

অভিযোগ রয়েছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের খবরে প্রাণ ভয়ে থানা ছেড়ে পুলিশের পালিয়ে যাওয়ার পর মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানা লুট করেছেন জেনেভা ক্যাম্পের মাদক কারবারিরা। ফলে পুলিশের অস্ত্র ও গুলি দিয়ে তারা এখন আধিপত্য বিস্তারে প্রায়ই সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। এতে শিশুসহ নিরীহ বাসিন্দাদের প্রাণ যাচ্ছে।

বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেনেভা ক্যাম্পের মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িয়ে আলোচনায় দুইটি গ্রুপ। একটি নেতৃত্ব দিচ্ছেন চুয়া সেলিম ও অপরটির ভূঁইয়া সোহেল। অন্তত ৬০টি মামলার আসামি ঢাকা শীর্ষ ইয়াবা কারবারি চুয়া সেলিম। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আরেক ইয়াবা কারবারি পারমনু, শাহ আলম। সেনাবাহিনীর অভিযানে সহযোগীসহ ভূঁইয়া সোহেল গ্রেফতার হয়েছেন। তার অবর্তমানে মাদকের কারবার ও গ্রুপ চালাচ্ছেন সোহেলের দুই ভাই রানা ও কুমকুম। এছাড়াও সোহেলের হয়ে কাজ করে ক্যাম্পে সৈয়দপুরীয়া হিসেবে পরিচিত অন্তত ৩০টি পরিবার। যাদের মধ্যে বম, বাবু ও নওশাদ অন্যতম।

সেলিম ও সোহেল ছাড়াও জেনেভা ক্যাম্পে আরও চারটি শীর্ষ গ্রুপ মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করে। ছয়টি গ্রুপের সদস্য সংখ্যা অন্তত তিন শতাধিক।

অন্য গ্রুপগুলো হলো- আরশাদ, পিচ্চি রাজা, শাহজাদা, বড় রাজা, পেলু আরমান ও মুন্নাদের গ্রুপ। তাদের সদস্য সংখ্যা ৬০ জনের বেশি। ভাঙ্গারি আরজু, তোতে, কামরান, সাজু, আদিল ও ফাইজানদের গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৪৫। গালকাটা মনু, শাহ আলম, ইমতিয়াজ, আকরাম চোরওয়া জানু, বিল্লু, সাবু, বাসির ও ইরফানদের গ্রুপে ৫৫ জনের বেশি সদস্য রয়েছেন। আরেক গ্রুপের নেতৃত্বে দেন বাবু, সাদ্দাম, মনু, মোফিজ, সুমন, রাজু, নাদিম ও জাম্বু। তাদেরও রয়েছে অর্ধশত সদস্য। আর এই সকল মাদক গ্রুপের সদস্যদের বেশিরভাগই তরুণ ও কিশোর।

গত তিন মাসে জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবারিদের অস্ত্রের মহড়া ও হত্যার ঘটনায় টনক নড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। সাড়াশি অভিযান চালিয়ে শীর্ষ মাদক কারবারিসহ দেড় শতাধিক অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ৫০টিরও বেশি মামলা দেওয়া হয়। উদ্ধার করা হয় অস্ত্র ও গুলি। অভিযানের কারণে বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও বাসিন্দারা এখনো শঙ্কিত।

মোহাম্মদপুরের বিষফোঁড়া হয়ে ওঠা জেনেভা ক্যাম্পে শান্তি ফেরাতে এবার বিশেষ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবার ও অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বন্ধে জেনেভা ক্যাম্পের চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। ক্যাম্পের প্রতিটি প্রবেশ পথ ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নজরদারির আওতায় আনা হবে। যাতে করে মাদক কারবারি বা অপরাধীরা তৎপরতা চালাতে না পারে।

এদিকে জেনেভা ক্যাম্পে অপরাধীদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাম্পে অস্ত্রের মহড়া বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। চিহ্নিত শীর্ষ মাদক কারবারিদের ধরতে অভিযান চলমান রয়েছে। পাশাপাশি মাদক উদ্ধারে তল্লাশির পাশাপাশি ডগ স্কোয়াড ব্যবহার করা হচ্ছে।

জেনেভা ক্যাম্পে মাদক বিক্রি ও অস্ত্রের মহড়া বন্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ জিয়াউল হক বলেন, জেনেভা ক্যাম্পে অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বন্ধে দুটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি জেনেভা ক্যাম্পে প্রবেশ ও বাহিরের সময় সন্দেহজনক ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হচ্ছে। বহিরাগত কেউ ক্যাম্পে প্রবেশ করতে চাইলে প্রশ্নের মুখে পড়ছেন। এখন চাইলেই কেউ এসে অবৈধ জিনিস কিনে নিতে পারবেন না। সব মিলিয়ে আমাদের কার্যক্রমের কারণে বর্তমানে জেনেভা ক্যাম্পে আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে।

সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, ডিএমপি থেকে জেনেভা ক্যাম্পে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পের প্রতিটি প্রবেশ ও বাহিরের পথ সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে যাচাই-বাছাই কাজ শুরু হয়েছে। কোন কোন পয়েন্টে কতটি ক্যামেরা বসবে সেই কাজ চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হবে।

জেনেভা ক্যাম্পে নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান বলেন, জেনেভা ক্যাম্পে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। জড়িতদের গ্রেফতার করে মামলা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের ৪০ জন সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। ক্যাম্পে এখন কোনো সমস্যা নেই।

বিআরইউ