সাংবাদিক ও গীতিকার সায়ীদ আবদুল মালিকের (মোহাম্মদ আবু সায়ীদ) ৪৯তম জন্মদিন আজ (১৫ নভেম্বর)।
এ উপলক্ষ্যে দৈনিক আমার সংবাদ ও দ্যা ডেইলি পোস্টের পক্ষ থেকে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা।
জন্মদিন উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি নিজেও ধন্যবাদ প্রকাশ করেছেন।
সায়ীদ আবদুল মালিক বর্তমানে দৈনিক নয়া দিগন্তে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত আছেন।
সাংবাদিক সায়ীদ ১৯৭৫ সালের এইদিনে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বারাইশ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আবদুল মালেক ওরফে আবুল হাশেম মেম্বার ও মা উলফাতুন নিসার ছয় ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে ষষ্ঠ তিনি।
জীবন সম্পর্কে ধারণা আসার পর থেকেই লেখা লেখিতে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখেন। রাজধানী ঢাকায় উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় জড়িয়ে পড়েন লেখালেখিতে। ১৯৯৫ সনে ঢাকা থেকে প্রকাশিত সুকন্যা ম্যাগাজিনের মাধ্যমে লেখালেখির প্রথম হাতে খড়ি। সেই সময় শাহাবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে ‘বিষ্যুদবারের আড্ডা’ ও ‘টরেনচত্ত্বর’ নামের দুটি আড্ডায় তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল।
কবি ফাহিম ফিরোজ, সরকার আমিন, সাজ্জাদ কাদির, টোকন ঠাকুর ও ইশারফ হোসেনসহ বহু কবি সাহিত্যিক সে আড্ডায় অংশ নিতেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি ছোটগল্প, ছড়া, কবিতা ও গীতিকবিতা লেখেন তিনি। বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত এই গীতিকারের রচিত গান বেশ আগেই দেশের স্বনামধন্য সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালকদের সুরে প্রচার হয়ে আসছে।
এরমধ্যে ‘দলছুট’ এর খ্যাতিমান গায়ক বাপ্পা মজুমদার, ন্যান্সি, আরমান আলিফ, প্রতীক হাসান, ক্লোজআপ ওয়ানের নোলক বাবু, রাজীব, পুলক, নওরীন, টুম্পা খান, কর্ণিয়া, ইসমত আরা ইভা, ও লুৎফর হাসানসহ স্বনামধন্য শিল্পীদের কণ্ঠে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রচার মাধ্যমে নিয়মিত প্রচার হচ্ছে।
বাপ্পা মজুমদারের গাওয়া বায়ান্নর ভাষা শহীদদের স্মরণে লেখা গান ‘প্রাণের বর্ণমালা’ বাংলা ভাষা ও মাতৃভাষার জয়গান গেয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত সগৌববে।
আমীরুল মোমেনীন মানিকের সুরে শারমিন রিনভীসহ পাঁচ তারকা সাংবাদিকের কণ্ঠে সাংবাদিকদের নিয়ে লেখা ‘খবরের ফেরিওয়ালা’ গানটি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই গানটির মিউজিক ভিডিওতেও অভিনয় করেছেন একঝাঁক মেধাবী সাংবাদিক।
নোলক বাবুর ‘পোড়া লাশের সারি’ ও মাকে নিয়ে লেখা গান ‘আমার মা’ শিশুশিল্পী সিফাত রিজওয়ান নাফির মিষ্টি কণ্ঠে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে এই গীতিকারের লেখা ‘ক্রিকেটের উন্মাদনায়’ গানটিও ক্রিকেটপ্রেমীদের মন জয় করেছে।
এছাড়া ইসমত আরা ইভার চোখ `পড়িলে চোখে`, জি সিরিজ ইউটিউব চ্যানেলে। ন্যান্সি ও এস এ কিরণের ‘প্রিয়জন’, সাংবাদিক ও কণ্ঠশিল্পী রেজা করিমের ‘একটি পাখি’ ও আরাফাত আকাশের গাওয়া `ময়না পাখি যাস না দূরে` গানসহ বেশ কিছু গান রিলিজের অপেক্ষায় রয়েছে। এর বাইরে বর্তমান সময়ের টিনএজ হার্টথ্রোব ‘মাইয়ারে তুই অপরাধীরে’ গানের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আরমান আলিফের ‘নষ্ট প্রেম’, প্রতীক হাসানের ‘পরকাল’ শিরোনামের গান দুটি ইউটিউবে এখন সুপার হিট তালিকায়। এছাড়া করোনাভাইরাসের মহা দুর্যোগে বিপদগ্রস্ত মানুষের আর্তি যখন চারিদিকের বাতাস ভারি হয়ে উঠছে, তখন এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার আশায় মহান রবের কাছে প্রার্থনামূলক ‘ফরিয়াদ’ শিরোনামের গানটি এখন ইউটিউব মাতাচ্ছে।
সাংবাদিকতা ও সংগীত চার্চার বাইরে সায়ীদ আবদুল মালিক অষ্টম শ্রেণীর বাংলা সহপাঠ ২০০৩, ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ ও রচনা ২০০৩, সপ্তম শ্রেণীর ব্যবহারিক মাতৃভাষার ব্যাকরণ ও রচনা ২০০৫, নিম্ন মাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ ও রচনা ২০০৫ ছাড়াও বেশ কিছু বই রচনা ও সম্পাদনা করেন।
মাদরাসা বোর্ড থেকে দাখিল ও আলিম পাশ করার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলায় অনার্স ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ১৯৯৮ সালে অনার্সে পড়াবস্থায় দৈনিক ইনকিলাবে কন্ট্রিবিউটর হিসেবে সাংবাদিকতার শুরু।
২০০৫ সালে দৈনিক দেশবাংলায় সহ-সম্পাদক হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন। ২০০৬ সালে দৈনিক আমাদের সময়ে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করেন।
২০০৭ সালের ১ নভেম্বর দৈনিক ইনকিলাবে যোগ দেন সহ-সম্পাদক হিসেবে। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ৩১ মে পর্যন্ত রিপোর্টিং বিভাগে কাজ করেন।
এছাড়া তিনি দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন দৈনিক পত্রিকা দৈনিক বাংলায় সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে ১১ নভেম্বর ২০২০ থেকে ২০২১ সালের ৩১ জুলাই কর্মরত ছিলেন।
বর্তমানে তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত আছেন।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সাংবাদিক সায়ীদ ২০০৬ সালের ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রামের মেয়ে বিলকিস আক্তারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহিত জীবনে তাদের ইসপিতা জাহান প্রভা, রাদিতা জাহান নুভা, সানদিহা জাহান দিবা নামের তিন কন্যা সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রী চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ থেকে বি.কম পাশ করেন।
সায়ীদ আবদুল মালিক জানান, সাংবাদিকতার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৮ সালে সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ স্মৃতি অ্যাওয়ার্ড ও একই বছর আটই ফাল্গুন সাংস্কৃতিক সম্মাননা, ২০০৯ সালে জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটি কর্তৃক মানবাধিকার স্বর্ণপদক-২০০৯, ২০১২ সালে গাঙচিল সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ সম্মাননা, ২০১৪ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ড ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) লেখক সম্মাননা-২০১৯ পুরস্কার পান।
সদালাপী মিশুক এই সাংবাদিক বাংলা ভাষাভাষীদের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বাংলা অ্যাকাডেমির একজন সম্মানিত সদস্য, বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার ও সমতট সাহিত্য প্রয়াসের সমন্বয়কারী।
এছাড়া তিনি জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সদস্য। নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের অর্থ সম্পাদক, ও কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরাম ঢাকা’র সহ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
রজনীগন্ধা প্রেমী এই গীতিকারের প্রিয় রং হালকা গোলাপি ও টিয়া। রুচিশীল সব ধরনের খাবারের পাশাপাশি গরুর গোশত আর সাদাভাত বেশি পছন্দ তার।
ইএইচ