সময় যতো বাড়ছে ততো দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের ৮ কর্মীসহ মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ জনে।
রোববার (৫ জুন) বিকেল ৪টার পর চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের প্রাণ নিভে যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহতের মধ্যে ৪৯ জনের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ১ জন পার্ক ভিউ হাসপাতাল, অন্য ১ জনের মরদেহ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে, চমেক হাসপাতাল বার্ন ইউনিটে ৫২ জন এবং অর্থোপেডিক বিভাগে ১০ ভর্তি রয়েছে। চমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ৫২ জন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। তাদের বেশিরভাগেরই শ্বাসনালী পোড়া। তাদের বাঁচাতে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।
চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতদের প্রত্যেকের ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ টেস্ট করা হবে বলে জানিয়েছেন নগরের চকবাজার জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের অনেকে হাসপাতালে মরদেহ শনাক্তের পর নিয়ে যেতে চাইছেন। তবে নিহতদের সবার ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ টেস্ট করা হবে। যাবতীয় নিয়ম অনুসরণ করে পরিবার ও স্বজনদের মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
রোববার (৫ জুন) সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর চট্টগ্রামের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন বলেন, আগুন লাগার খবর পাওয়ার পর রাত থেকেে আমরা এখানে কাজ করছি। লাশের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে মালিকপক্ষ কাউকে পাচ্ছি না। মালিকদের কাউকে পেলে আমরা জানতে পারতার কোন কনটেইনারে কী আছে। এটা আমাদের জানা নেই। এ জন্য উদ্ধার কাজে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে।
মহাপরিচালক বলেন, আমরা এখনো ভেতরে পুরোপুরি ঘুরতে পারছি না। এ ঘটনায় ফায়ারের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যে কমিটি করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার সেকশনের বিশেষ টিম কাজ করছে। কনটেইনারগুলোতে যেহেতু কেমিক্যাল সেজন্য ঢাকা থেকে ফায়ারের ২০ সদস্যের হেজবোর্ড টিম আনা হচ্ছে। তারা বিদেশ থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
ফায়ার ফাইটারসহ যারা হতাহত হয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, আমি মাত্র দশদিন আগে এখানে দায়িত্ব নিয়েছি। এরকম একটি ঘটনায় আমি খুবই মর্তাহত।
প্রসঙ্গত, স্মার্ট গ্রুপের এই বেসরকারি কনটেইনার ডিপো চালু হয় ২০১১ সালে। বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডস যৌথ বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত এই বেসরকারি কনটেইনার ডিপো পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিলো না বলে শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনের পর ভয়াবহ বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচজন কর্মী রয়েছেন। সীতাকুণ্ড ইউএনও মো. শাহাদাত হোসেন বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তবে নিহতদের নাম পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
এ ছাড়া আহত হয়েছেন তিন শতাধিক। তাদের মধ্যে ডিপোর শ্রমিক, স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও আছেন।
এই ভয়াবহ ঘটনায় শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার এক শোকবার্তায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। সেইসঙ্গে তিনি আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ আশপাশের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে অনেককে ওয়ার্ড ছাড়াও হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এ অবস্থায় আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার তৎপরতায় সহযোগিতার কাজে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল।
ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করেছে।
ঘটনাস্থলে থাকা চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ইঞ্জিনিয়ারিং কোর–১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনিরা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘কনটেইনার ডিপোটিতে হাইড্রোজেন পারক্সাইড রয়েছে। আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। আমাদের কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞরা ফায়ার সার্ভিস সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।’
বিএম কন্টেইনার ডিপো মালিকপক্ষের প্রতিনিধি নির্বাহী পরিচালক শহীদ উদ্দিন বলেন, আমাদের কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন ও হতাহতের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। এই মুহূর্তে নিহতের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আহত যারা হয়েছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে সর্বোচ্চ ও যারা আহত হয়েছেন তাদেও সম্পূর্ণ চিকিৎসা ব্যয়ভার গ্রহণ করা হবে। একইসাথে নিহত ও আহত পরিবারের সদস্যদের দায়িত্ব গ্রহণের ঘোষনা দিচ্ছি। আমাদের কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনসহ সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটিকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার ঘোষণা দিয়েছে। এটি দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা বা কোন প্রতিপক্ষ দ্বারা ইচ্ছাকৃত অনিষ্টসাধন (সাবোটাজ) ঘটিয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
এমএইচ/ইএফ