বরিশালের বাকেরগঞ্জের কবাই-লক্ষীপাশা ও পান্ডব নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। কবাই ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল হক বাদল তালুকদারের নেতৃত্বে কয়েকজন ড্রেজার মালিক অবৈধভাবে এ বালু উত্তোলন করছে।
এতে বাঁধ, ফসলি জমি এবং ঘরবাড়ি হুমকিতে পড়েছে। ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এসব ড্রেজার ব্যবসায়ীরা উপজেলার কবাই ইউনিয়নের কবাই চর, লক্ষীপাশা, সুনিল ফকিরের পুল, ডিসি রোড, দুধলের শতরাজ বাজারসহ অন্তত ৭-৮টি স্থানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু তুলছেন। এতে নদীর তীরে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বালু উত্তোলনের কারণে বিভিন্ন স্থানে ধসের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যেকোনও সময় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা অনুরোধ সত্ত্বেও বালু কাটা অব্যাহত রেখেছেন। এসব বালুখোকোদের নেতৃত্বে রয়েছেন কবাই ইউপি চেয়ারম্যান বাদল তালুকদার। কবাই, ডিসি রোড, দুধলের নদীতে ইজারা না থাকা সত্বেও কবাই ইউপি চেয়ারম্যান বাদল তালুকদার এসব অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ফুট প্রতি ১ টাকা ৪০ পয়সা করে উত্তোলন করছেন। সারা দিনরাত বালু তোলার কারণে নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি ও বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়েছে।
তারা আরও বলেন, প্রভাবশালী এসব অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ করে প্রতিকার মেলেনি। মাঝে মাঝে প্রশাসন থেকে লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে দু'চার জন ড্রেজার শ্রমিকে কারাদণ্ড দিলেও কয়েকদিন পর আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। এ অবস্থা বিরাজ করলে আগামী দু’তিন বছরের মধ্যে কবাই, নলুয়া, দুধল ও ফরিদপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন নদীর পাশের ফসলি জমি, ভিটে ও বাড়িঘর ধসে নদগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ বালু উত্তোলনকারী যখন যেখানে খুশি নদীর সেখান থেকেই বালু উঠাচ্ছে। এর ফলে তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একাধিকবার স্থানান্তর করার পর সেগুলো এখনও হুমকির মুখে রয়েছে। একইভাবে ভাঙনের কারণে কয়েক দফা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন অনেকে। এলাকাবাসী মনে করছেন, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধ হলে হয়তো ভাঙনের তীব্রতা কিছুটা কমবে।
এ প্রসঙ্গে বালু উত্তোলনকারী আনলোড ড্রেজারের শ্রমিক আব্দুর রহিম জানান, কবাই চর থেকে ড্রেজার লোড দিয়ে নিয়ে আসলে তারা আনলোড ড্রেজার দিয়ে বালু ফালান। ওই স্পটের ইজারা আছে কিনা তা তিনি জানেন না।
অভিযুক্ত কবাই ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল হক বাদল তালুকদার তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি নয় অনেকেই এসব নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।
এ ব্যাপারে বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীল বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের ছাড় দেয়া হবে না। অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমারসংবাদ/এআই