ফরিদপুরের মধুখালীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, ফরিদপুর সুগার মিলের শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. হামিদুর রহমান ওরফে হামিদকে (৬৬) লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনের নাম উল্লেখসহ আরো ২ থেকে ৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে স্থানীয় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন মহলে তীব্র ক্ষোভের পাশাপাশি নিন্দার ঝড় উঠেছে।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) রাত ৯টার দিকে উপজেলা কমপ্লেক্সে সোনালী ব্যাংক শাখার সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই রাতেই অভিযুক্ত তিনজনকে আটকের পর বুধবার(২৯ জুন) সকালে আদালতে প্রেরণ করা হয়। ওইদিন বিকেলেই তারা জামিনে বেরিয়ে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলা সূত্রে জানা যায়, মধুখালী পৌরসভার পশ্চিম গাড়াখোলা বাসিন্দা,উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. হামিদুর রহমান ওরফে হামিদকে মঙ্গলবার রাতে উপজেলা কমপ্লেক্সে সোনালী ব্যাংকের নিচে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় মধুখালী সরকারি আইনউদ্দিন কলেজের ছাত্রদলের সাবেক ভিপি, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক,বর্তমানে পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. বাচ্চু শেখ (৪০),রবিউল ম্যোলা (৪৫) ও হাবিব শেখসহ (৩৫) কয়েকজন মিলে লাঞ্ছিত করে।
এসময় তার উপর হামলা চালিয়ে মারধর ও গায়ের পাঞ্জামী টেনে ছিড়ে ফেলে। এসময় তার কাছে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় হামলাকারীরা।
এ ব্যাপারে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, মধুখালী উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাই ও পৌর যুবলীগ নেতা মোঃ হামিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ন-আহবায়ক, মধুখালী সরকারি আইনউদ্দীন কলেজের সাবেক ছাত্রদল থেকে নির্বাচিত ভিপি (বর্তমান পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক) বাচ্চুর হাতে অপমান, নির্যাতিত হতে হলো উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ হামিদুর রহমানকে। যা খুবই দুঃখজনক। মেনে নেওয়া যায় না।
এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলার প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতা ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মির্জা প্রিন্স বলেন, হামিদুর রহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। দল ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েও লাঞ্ছিত-হামলার শিকার হতে হয়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। ঘটনার মুল অভিযুক্ত প্রধান আসামি একদিনেই জামিনে বেরিয়ে আসল, এই হলো রাজনৈতিক অবস্থা।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা কোথায় গেলে তার এই অপমানের বিচার পাবেন আওয়ামী লীগের নেতারা কি বলতে পারবেন?
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বীরমুক্তিযোদ্ধা হামিদুর রহমানের উপর হামলার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মো. বাচ্চু শেখের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ হামিদুর রহমান বলেন, এটা কোন ভাবেই মানতে পারছি না। সারাজীবন রাজনীতি করে শেষ বয়সে লাঞ্ছিত উপহার পেলাম। এটা শুধু আমার জন্যই লজ্জাকর নয়। আওয়ামী লীগের জন্য লজ্জাকর। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করেছি। আসামীরা বিএনপি ও হাইব্রিড। একদিনেই জামিনে বেরিয়ে এসেছে। আমি এর বিচার আর কার কাছে দিবো আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে রাখলাম।
মধুখালী পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খন্দকার মোরশেদ রহমান লিমন বলেন, আসলে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক, যা বলার ভাষা নেই।
এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক একটা ঘটনা। এ ঘটনায় সাংগঠনিকভাবে দলীয় সভায় আলোচনা করা হবে।
এ বিষয়ে মধুখালী থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো.শহিদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার পর পরই আমরা এজাহার নামীয় তিনজন আসামী মো. বাচ্চু শেখ, রবিউল ম্যোলা ও হাবিব শেখকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু আদালত থেকে জামিন মঞ্জুর করলে পুলিশের কিছুই করার থাকে না।
আমারসংবাদ/এআই