এবারও ক্রেতা মেলেনি দক্ষিণাঞ্চলে কুরবানির পশুর চামড়ার

বরিশাল ব্যুরো  প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২২, ০১:২৫ পিএম

দক্ষিণাঞ্চলে এবারো কুরবানির পাশুর চামড়ার মূল্য অসহায় দুস্থ গরীবের ভাগ্যে জুটল না। এ অঞ্চলের বেশীরভাগ কুরবানি দাতাই পশুর চামড়া বিক্রি করতে না পেরে যাদের কাছে পেয়েছেন, তাদের হাতেই তুলে দিয়ে সমস্যা মুক্ত হয়েছেন। বেশীরভাগ মাদ্রাসা বা লিল্লাহ বোর্ডিং এবারো কুরবানির পশুর চামড়া কেনেনি গত কয়েক বছরের লোকসান ও দেনার ভয়ে। এমনকি অনেক কুরবানি দাতা বিভিন্ন মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিং-এ পশুর চামড়া দান করলেও তা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। 

প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের হিসেবে, চলতি বছর বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় প্রায় পৌনে ৫ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে। গত বছরও এ অঞ্চলে প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার। তার আগের বছর ৪.৯৫ লাখ পশু কোরবানি হয়। স্থানীয় খামারীদের কাছে কুরবানির প্রয়োজনীয় পশু মজুদ থাকার পাশাপাশি গৃহস্থ পর্যায়েও আরো লক্ষাধিক গবাদি পশু ছিল। কুরবানিকৃত প্রায় পৌনে ৫ লাখ পশুর মধ্যে অন্তত সাড়ে ৩ লাখ গরু ও ষাড়। অবশিষ্টগুলোর মধ্যে ছাগল ও মহিষ রয়েছে। গড়ে ৫শ টাকা করে বিক্রি হলেও এবার কুরবানির সময় অন্তত ২৪ কোটি টাকার চামড়া বিক্রি হবার কথা ছিল। যার পুরোটাই বিভিন্ন লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানা সহ গরীব দুস্থদের মাঝে বিতরণের কথা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও এবার দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও মাঠ পর্যায়ে কুরবানির কোন পশুর চমড়া ক্রয় বিক্রয় হয়নি। কুরবানি দাতাগন যে যেভাবে পেরেছেন, সামনে যাকে পেয়েছেন তার কাছেই পশুর চামড়া গছিয়ে দিয়ে দায় মূক্ত হবার চেষ্টা করেছেন। এমনকি অনেক মাদ্রসাই দাতাদের চাপিয়ে দেয়া পশুর চামড়া নিয়ে এখনো মহা সংকটে আছেন। 

স্থানীয় আড়তদারগন এখন পর্যন্ত কিনতে অনিহা প্রকাশ করায় মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিং সহ দান হিসেবে পাওয়া বিভিন্ন গরীব ও দুঃস্থ মানুষগুলো কাঁচা চামড়া নিয়ে চরম সংকটেই আছেন। অনেকের কাছে লবন কিনে চামড়া সংরক্ষণের মত অর্থ পর্যন্ত নেই। এসব বিষেয়ে স্থানীয় একাধিক আড়তদারদের দাবি ঢাকায় ট্যানারী মালিক এবং পাইকারগন গত কয়েক বছর ধরে কোরবানির সময় কাঁচা চামড়া কিনতে অনিহা প্রকাশ করায় তারাও ঝুকি নিচ্ছেন না। দক্ষিণাঞ্চলের ৪২টি উপজেলায় সারা বছর যে পরিমান পশু জবাই হয়, তার অর্ধেকেরও বেশী ঈদ উল আজহায় কুরবানি হয়। ফলে এসময়ে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ থেকে পৌনে ৫ লাখ পশুর চামড়ার একটি বড় বাজার তৈরী হলেও গত কয়েক বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে যে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। তা থেকে বেরিয়ে আসার কোন প্রশাসনিক উদ্যোগ এখনো অনুপস্থিত। 

ফলে এর একটি বিরূপ প্রভাব পড়ছে প্রাণি সম্পদ খাতেও। প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গোশত, ডিম ও দুধে উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলে খামার ও গৃহস্থ পর্যায়ে প্রায় পৌনে ৩ লাখ শংকর জাতের গাভী সহ ৩২ লাখ গবাদি পশু রয়েছে। এর বাইরে বিপুল সংখ্যক ছাগল, ভেড়া, মহিষ সহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণি রয়েছে খামার ও গৃহস্থ পর্যায়ে। এসব গবাদি পশুর একটি বড় অংশই কোরবানি হয়ে থাকে।

কেএস