হারিয়ে যাচ্ছে শীতল পাটির শিল্প

কামারখন্দ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২২, ১২:৩৪ পিএম

সিরাজগঞ্জ কামারখন্দ উপজেলা সদর হতে ঝাঐল ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। গ্রামটির বেশির ভাগ মানুষই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এই গ্রামে নারী-পুরুষেরা বাপ-দাদার আমলের পেশা শীতল পাটি তৈরি কাজের সাথে সম্পৃক্ত। শীতল পাটি তৈরি ও বিক্রি করেই তাদের চলে সংসার। বর্তমানে প্লাস্টিকের পণ্যের উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে শীতল পাটির শিল্পটি। কারিগরেরা পাচ্ছে না তৈরি অনুযায়ী ন্যায্য পারিশ্রমিক মূল্য। এরপরেও থেমে থাকেনি আদি পুরুষদের প্রাচীন এই পেশা। নারী-পুরুষরা শত কষ্টে মধ্যেও তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ গ্রামের প্রায় ২২০টি পরিবারের ৭৫০-৮০০ নারী-পুরুষ তাদের জাত পেশা হওয়ায় এখনো টিকিয়ে রেখেছে এই শিল্পকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নারী-পুরুষেরা জমি থেকে পাটি বেত কেটে নিয়ে আসছে। পরে সেগুলো বিশেষ ধারালো দা দিয়ে এক ধরনের বেতী সুতা বানিয়ে সিদ্ধ করে রোদে শুকানো হচ্ছে। বেতী সুতাগুলো রোদে শুকানোর পর তাতে নানা বাহারী রং দেওয়ার পর আবার রোদে শুকানো হচ্ছে। বেতী সুতা রোদে শুকানোর পর নারী (শ্রমিক) শিল্পীরা নিপূণ হাতে তৈরি করছে শীতল পাটি। প্রকারভেদে বিক্রি হয় প্রায় ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

সোহাগী (৬৫), বেলী (৩৫), বুলবুলি (২৮) ও সীমা (৩০) এই নারী কারিগরেরা “দৈনিক আমার সংবাদ” কে জানান, তাদের শীতল পাটির টাকায় চলে সংসার। শীতল পাটির কদর অনেকটা কমে গেছে। শীতল পাটির দাম কিছুটা বাড়লেও তাঁদের মজুরি বাড়েনি। পাটি আকার অনুযায়ী কারিগরেরা পান ১৬০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০ টাকা পর্যন্ত । তাদের একটি পাটি বুনতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে। একটা পাটি বুনতে যে পরিশ্রম আর সময় লাগে সে অনুযায়ী ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে না।

দূর্গা রানী (৩৬) নামে এক নারী শ্রমিক আমার সংবাদকে বলেন, পূর্ব পুরুষেরা এ পেশাই করতেন। তাই ছোটবেলা থেকেই তিনি এ পেশায় জড়িত। শীতল পাটি আগের মতো ব্যবহার না হওয়ায় ক্রেতার সংখ্যাও অনেকাংশে কমে গেছে।কারণ শীতল পাটি তৈরির প্রধান কাঁচামাল বেতের দাম বাজারে অন্যান্য ফসলের তুলনায় দাম কম হওয়ায় অনেকে পাটি বেতের ক্ষেত ভেঙে অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকেছেন।এজন্য বেতের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে এদিকে পরিশ্রম অনুযায়ী ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে বিকল্প পেশায় চলে যাচ্ছে। তাদের এ শিল্প বাঁচানের জন্য তারা সরকারি সুবিধা চান৷  

দুলাল চন্দ্র ভৌমিক (৬০) বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই শীতল পাটির সাথে জড়িত। শীতল পাটি বুনিয়ে ও বিক্রি করেও তার সংসার চলে। বর্তমানে প্লাস্টিকের পাটি ও মোটা পলিথিন কাগজসহ নানা প্লাস্টিক পণ্যের জন্য শীতল পাটির কদর কমে গেছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে আধুনিক মানের শীতল পাটি তৈরীর প্রশিক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। তা’না হলে আমাদের এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।  

এ বিষয়ে কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেরিনা সুলতানা বলেন, পাটি তৈরির শিল্পীদের দুইবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে শিল্পীটি বাঁচানের জন্য উন্নমানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কীভাবে শীতল পাটির বাজারজাত বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা হবেও তিনি জানান।

কেএস