ফরিদপুরের সদরপুরের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে নদী ভাঙ্গনের শিকার একটি পরিবারের এক শিশুকে ডেকে নিয়ে হাত-পা বেঁধে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বেধড়ক মারপিট ও নির্যাতন করা হয়েছে। অসুস্থ অবস্থায় ওই শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেও বাধা দেয়া হয়। এছাড়া থানায় মামলা করতে গেলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। পরে শিশুটির মা আসমা বেগম (৪২) ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেছেন।
স্থানীয় ও আদালতে মামলা সূত্রে জানা গেছে, সদরপুর উপজেলার ভাসানচর ইউনিয়নের নতুন বাজারে গত ১৭ জুলাই (রোববার)রাতে এ ঘটনা ঘটে। টিলাডাঙ্গী গ্রামের সৌদি প্রবাসী জসিম মোল্লার ছেলে ১৪ বছরের রিয়াজকে ধরে নতুন বাজারে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে সবার সামনে মারপিট করা হয়। চুরির অপবাদ দিয়ে রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তার উপর চলে অমানুষিক এ নির্যাতন। এসময় তারা মোবাইলে ওই দৃশ্য ধারণ করে উল্লাস করে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১৭ জুলাই সন্ধ্যার পর রাত ৮টার দিকে নতুন বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে রিয়াজকে জোর করে তুলে নতুন বাজারে নিয়ে একটি গাছের সাথে বেঁধে উপর্যুপরি মারপিট করে। খবর পেয়ে ছেলেকে উদ্ধার করতে গেলে তার নিকট এক লাখ টাকা দাবি করে তারা। পরে রাত ১২ টার দিকে বাকিতে এই টাকা পরিশোধের অঙ্গীকার করার পর সেখান থেকে রিয়াজকে মুক্ত করতে সক্ষম হন তিনি।
শিশুটির মা আসমা বেগম জানান, আহত রিয়াজকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেও তার চিকিৎসায় বাধা দেয়া হয়। সদরপুর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি।
এ ঘটনায় উসমান মোল্যাডাঙ্গী গ্রামের আমজাদ মোল্যা (৪০), শাজাহান মোল্যা (৫০), ইউসুফ বেপারী (৬০), কাইয়ুম মোল্যা, নজরুল ইসলাম, মতিয়ার মোল্যা, ইউনুস মোল্যাসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫ থেকে সাতজনকে আসামি করে গত ২৭ জুলাই ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
শিশুটির মা আসমা বেগম আরও বলেন, প্রায় দশ বছর আগে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে তারা টিলাডাঙ্গী গ্রামে জমি কিনে নতুন বসত গড়েন। তার স্বামী ও বড় ছেলে বিদেশ প্রবাসী। টিলাডাঙ্গীতে জমি কিনে বাড়ি করার পর থেকেই স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী মহল তাদের উপর নানাভাবে নির্যাতন করে আসছে। কিন্তু লোকবল না থাকায় তারা প্রতিবাদ করতে পারেন না। শত্রুতামূলকভাবেই তার ছেলেকে এভাবে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন তারা গ্রামে বসবাস করতেই ভয় পাচ্ছেন। তার ছেলেতো ঘরের বাইরেই বের হতে পারছে না।
স্থানীয় যুবক হাসান বিশ্বাস বলেন, আমি রিয়াজ ওই রাতে দুজনে একসাথেই ছিলাম। আমার সামনেই ওকে তারা নিয়ে যায়। তারপর মারপিট করে ওর মায়ের কাছে এক লাখ টাকা চায় বলে জানতে পারি।
এ ব্যাপারে ভাসানচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাওসার শেখের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই গ্রামে মাঝেমধ্যে ছাগল-মুরগি সহ ছোটখাট চুরিচামারি হয়। ওই রাতে ছেলেটিকে আটক করার খবর পেয়ে আমি তাদের মারপিট করতে নিষেধ করেছিলাম। পাশাপাশি গ্রামের ব্যাপার। তাই পরে অবশ্য তার মাকে বিষয়টি মিমাংশার প্রস্তাবও দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা রাজি হননি।
এ ব্যাপারে সদরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) সুব্রত গোলদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এমন কোন ঘটনার খবর তিনি জানেন না। কেউ তার নিকট মামলা করার জন্য কোন অভিযোগ নিয়ে আসেনি।
কেএস