সাভার-আশুলিয়ায় বারবার অভিযান পরিচালনা করেও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ গ্যাস সংযোগের রমরমা কারবার। গেল কয়েক বছরে দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে সাভার আশুলিয়ার কয়েক লাখ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেও কোনো লাভ হয়নি। তিতাসের অসাধু কিছু ঠিকাদার ও প্রভাবশালী মহল টাকার বিনিময়ে বিচ্ছিন্ন সংযোগে গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা করছে, তেমনি দিচ্ছে নতুন সংযোগও। এসব অবৈধ লাইন থেকে প্রতি মাসে আদায় করা হচ্ছে বিলও। এতে একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি বৈধ গ্রাহকরা ভুগছেন গ্যাস সংকটে। এ ছাড়া নিম্নমানের সংযোগ উপকরণের কারণে বাড়ছে বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।
এদিকে আশুলিয়া ইউনিয়নে জেল থেকে বেরিয়ে এসে ফের অবৈধ গ্যাস সংযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আশুলিয়ার ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন পালোয়ান। তার সাথে রয়েছেন স্থানীয় তারেক আহমেদ নামে আরেক ব্যক্তি।
শাহিন পালোয়ানকে এর আগে বিদেশি পিস্তল ও তিন রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করে আশুলিয়া পুলিশ।
শাহিন পালোয়ান আশুলিয়ার পালোয়ান পাড়ার বিল্লাল পালোয়ানের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ওই এলাকার অবৈধ গ্যাস সংযোগ, চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। কিছুদিন আগে জেল থেকে বেরিয়ে এসে পুনরায় আশুলিয়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডে কয়েকশো বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
শাহীন পালোয়ানের দেওয়া অবৈধ গ্যাস সংযোগ বেশ কয়েকবার তিতাস কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে বিচ্ছিন্ন করার পর রাতের আঁধারে পুনরায় সংযোগ দেন তিনি। এই কর্মকান্ডে তার সাথে সাভার তিতাস কর্তৃপক্ষের একাধিক ঠিকাদার জড়িত রয়েছে। ঠিকাদারদের মধ্যে অবৈধ গ্যাস সংযোগের মূল হোতা কায়সার আলী। তিনি সাভার ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক।
ঠিকাদারদের অবৈধ গ্যাস সংযোগে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) রাতে ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক কায়সার আলীসহ চারজনের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আবু সাদাৎ মোহাম্মদ সায়েম।
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এখানে প্রচুর শ্রমিক বসবাস করেন। যে সমস্ত বাড়িতে গ্যাস সংযোগ রয়েছে সেসকল বাড়ি ভাড়ার চাহিদা প্রচুর। তবে বাসাবাড়িতে গ্যাস না থাকলে আবার ভাড়াটের আগ্রহ থাকে না। তাই শ্রমিকদের জন্যই তৈরি বাসাবাড়িতেই এই অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারবার বেশি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর দীর্ঘদিন তারা সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করে আসছিলেন। শাহীন পালোয়ান জেল থেকে বেরিয়ে এসে তাদেরকে অবৈধ গ্যাস নিতে বাধ্য করে। বাধ্য হয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়েছেন তারা। বৈধ গ্যাসের মত দিতে হচ্ছে প্রতি মাসে বিলও ।
এ বিষয়ে একাধিকবার শাহীন পালোয়ানের মুঠো ফোনে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে তারেক আহমেদ কথা হলে তিনি অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। প্রশ্ন না করতেই বলেন শাহীন পালোয়ান এগুলো দেয়নি। তার তিন বাড়িতে কে দিয়েছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্যাস সংযোগ কে দিয়েছে তা বলতে পারব না।
সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আবু সাদাৎ মোহাম্মদ সায়েম বলেন, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরেও বারবার স্থানীয় প্রভাবশালীরা রাতের আঁধারে পুনরায় সংযোগ দিয়ে যাচ্ছেন। এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় সাভার ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ চার জনের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মামলার দায়ের করা হয়েছে। নতুন করে যে সমস্ত এলাকায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে দ্রুতই সেসব এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।
কেএস