ফের বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি

নীলফামারী প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২২, ০৬:৩৯ পিএম

ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি ফের বেড়েছে। বর্তমানে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সোমবার (১ আগস্ট)) দুপুর ৩টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেমি) প্রবাহিত হচ্ছে। পানির চাপ মোকাবিলায় ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে হঠাৎ নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। নদীর চর ও তীরবর্তী আমনসহ অন্য  ফসলের জমি পানিতে প্লাবিত হেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন।। সেই সঙ্গে তাদের মধ্যে নদী ভাঙনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পূর্ব খড়িবাড়ী, কিছামত, ছোটখাতা, হরিশের চরসহ ৮টি চরের বসতবাড়িতে পানি উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে দুপুর ৩টার পর থেকে পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

এদিকে ডিমলা টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের তিস্তা নদীর বাম তীরের চরখড়িবাড়ি এলাকার দেড় কিলোমিটার বালুর বাঁধের ১০০ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ওই বাঁধের ভেতর দিয়ে নদীর পানি চরে প্রবেশ করায় সেখানকার প্রায় দেড়শতাধিক বিঘা আমন ধানের জমি তলিয়ে গেছে। এছাড়া নদীর ডান তীরের প্রধান বাঁধ ঘেষে নদীর পানি প্রবাহিত হওয়ায় সেখানকার আমন ধানের ৫০ বিঘা জমিও তলিয়ে গেছে।

উপজেলার চরখড়িবাড়ি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নদীর বাম তীরে যে বালির বাঁধ রয়েছে তা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল পাঁচ বছর আগে। ওই বাঁধ টিকিয়ে রাখার জন্য চেষ্টাও করা হয়। তবে বাঁধের পওর বোমা মেশিন বসিয়ে এলাকার কিছু প্রভাবশালী মানুষ পাথর ভাঙার কাজ করে। এতে বাঁধের ক্ষতি হয়।

ভেন্ডাবাড়ি এলাকার জলিল মিয়া (৪৮) বলেন, ভাঙনে ভিটেমাটি সব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে নদীর পানির স্রোত সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেলেও কিছুই করার নাই।

একই এলাকার ভিটেমাটি আর ঘরবাড়ি হারিয়ে মনজিলা বেগম বলেন, আমার একটা ঘর ছাড়া আর কিছুই নিয়া আসতে পারি নাই। স্রোতে সব ভেসে গেছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ গত কয়েকদিন ধরে প্রভাবশালীরা ওই বালির বাঁধ ঘিরে বোমা মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করায় উজানের ঢলে আজ বাঁধটির ১০০ মিটার বিলীন হলো। এ ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে বোমা মেশিন জব্দ ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।

টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মঈনুল হক বলেন, উজানের ঢল ও নদীর পানি বামতী রে চাপ বেশি থাকায় বাঁধটির ক্ষতি হয়েছে। অপরদিকে, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমলার ২২টি চরও প্লাবিত হতে শুরু করেছে।

পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খাঁন বলেন, আমাদের এলাকার প্রায় ৭০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। টেপাখড়িবাড়ি এলাকায় সাড়ে তিনশ’ পরিবার, খালিশাচাঁপানি এলাকায় চারশ’, ঝুনাগাছ চাপানি এলাকার সাড়ে তিনশ’ পরিবারের বসতভিটা তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে খালিশাচাঁপানি এলাকায় ব্যাপক ভাঙনও দেখা দিয়েছে। মানুষজনও আতঙ্কে রয়েছেন।

নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, সকাল থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার (৫২.৬০) দুই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যা বেলা তিনটায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আমারসংবাদ/এসএম