মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডে চারটি পরিবারের সাতটি ঘর পুড়ে গেছে। এ ঘটনার শোক সইতে না পেরে ছালেহা বেগম (৭০) নামের এক বৃদ্ধা স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে জানা গেছে।
শনিবার (৬ আগস্ট) সকাল সাতটার দিকে গোপীনাথপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর মধ্যপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগুনে বসত ঘর, রান্না ঘর, আসবাবপত্র ও অন্যান্য মালামাল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে চারটি পরিবার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. আজিম খান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মানিকুজ্জামানসহ পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
ফায়ার সার্ভিস, এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল সাতটার দিকে গোপীনাথপুর মধ্যপাড়া গ্রামের শহীদুল ইসলামের রান্নাঘরের মাটির চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন চুলার পাশে থাকা বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে এসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় একজন ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করলে পরবর্তীতে হরিরামপুর ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এর মধ্যে আগুনে চারটি পরিবারের সাতটি ঘর, ঘরে থাকা ফ্রিজ, টিভি, খাট, চেয়ার-টেবিল, পোশাক, ধান, চাল, নগদ টাকা পুড়ে যায়। এ ঘটনায় শহীদুল ইসলাম, জামাল মল্লিক, নুর ইসলাম ও রাবেয়া বেগমের পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। অগ্নিকাণ্ডে চারটি পরিবারের আনুমানিক ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তারা। ঘটনার শোক সইতে না পেরে জামাল ও রহিমের মা ছালেহা বেগম (৭০) স্ট্রোক করে মারা গেছেন।
ভুক্তভোগী শহীদুল ইসলামের পিতা রহিম জানান, অগ্নিকান্ডে তাদের একটি চারচালা এবং একটি বড় ছাপড়া ঘর পুড়ে গেছে। ঘরে থাকা টিভি, ফ্রিজ, খাটসহ সকল আসবাবপত্র এবং একটি ছাগলও পুড়ে গেছে। এতে তাদের প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জামাল মল্লিক বলেন, তার ঘরে থাকা প্রায় ৭০ মন ধান এবং ১০০ মন পিয়াজ পুড়ে গেছে। ঘরের অন্যান্য আসবাবপত্র পুড়ে গেছে।
নুর ইসলাম (৩৩) বলেন, তারও একটি চারচালা এবং একটি ছাপড়া ঘর পুড়ে গেছে। ঘরে থাকা সকল আসবাবপত্র, চাল, নগদ ৫৫০০০ টাকা পুড়ে গেছে। সব মিলিয়ে তার সাড়ে তিন লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, পরনের লুঙ্গি ছাড়া আর অন্য কোন কিছু ঘর থেকে বের করতে পারিনি। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আমার স্ত্রী ফিরোজা বেগমের কপালে কেটে গেছে।
গোপীনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান আ. মতিন মোল্লা (লাভলু) বলেন, অগ্নিকাণ্ডে চারটি পরিবারের প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব হারানোর শোকে ছালেহা বেগম (৭০) নামের এক নারী স্ট্রোক করেন। তাকে দ্রুত ঝিটকা আবির মেডিকেলে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স লিডার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, আমরা জরুরী সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পেয়েই তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে যাই এবং ৯.০৩ মিনিটে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি। চারটি পরিবারের সাতটি ঘর এবং অন্যান্য মালামাল পুড়ে গেছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা চারটি পরিবারের খাবারের জন্য প্রাথমিক অবস্থায় নগদ পাঁচ হাজার টাকা প্রদান করেছি। আগামীকাল উপজেলা পরিষদ থেকে চারটি পরিবারকে এক লক্ষ টাকা প্রদান করা হবে।
এছাড়া, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে চারটি পরিবারকে খুব দ্রুত সহায়তা করা হবে বলে জানান তিনি।
কেএস