যৌন উত্তেজক সিরাপে আসক্তি বাড়ছে শিক্ষার্থীদের

খোকসা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২২, ০৫:৪২ পিএম

কুষ্টিয়া, খোকসা শমসপুর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় অবাধে এবং প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনবিহীন যৌন উত্তেজক সিরাপ। নানা লোভনীয় নামে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এসব সিরাপের প্রতি আসক্তি বাড়ছে খোকসা শোমসপুরের বিভিন্ন বয়সী ছাত্র, যুব সমাজ এবং বৃদ্ধদের মধ্যে। অনেকে ইয়াবার বিকল্প হিসেবে শরীরের উত্তেজনা বাড়াতে এসব সিরাপ পাণে আসক্ত হচ্ছে।

খোকসা শমসপুর বাজার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং অনুসন্ধান করে জানা গেছে, বাজারের আনাচকানাচে, অলি-গলিতে যেকোনো দোকানে হাত বাড়ালেই মিলছে বিভিন্ন নামের কথিত যৌন উত্তেজক সিরাপ। প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে খোকসা শমসপুর বাজারের গড়ে ওঠা ছোট-বড় দোকানে চলছে এর ব্যাপক বিক্রি-ব্যবসা।

বি-জিনসিন, জিনসিন প্লাস, জিন্টার, হর্স ফিলিংস, জিনসা, রুচিতা, মুন পাওয়ার ফিলিংস, ভিগো-বি, ম্যান পাওয়ার  হর্স ফিলিংস, ব্ল্যাক হর্স  ইত্যাদি নামে কথিত যৌন উত্তেজক সিরাপ বাজারে মিলছে। ২০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে এসব সিরাপ যে কেউ কিনতে পারছে সহজেই।

দাম কম এবং সংগ্রহ সহজ হওয়ায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র বৃদ্ধ এবং যুব সমাজ অবাধে এসব সিরাপ পান করে আসক্ত হয়ে পড়ছে। স্কুল-কলেজের ছাত্র বৃদ্ধ এবং যুব সমাজদের আকৃষ্ট করতে এসব সিরাপে নামী-বেনামি নানা কোম্পানির নাম ও মনোগ্রাম ব্যবহার করে সিরাপের প্যাকেটের গায়ে আকর্ষণীয় চীনের জিনসিন গাছ, ঘোড়া, বাঘ, মাশরুমের ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে। আকর্ষণীয় স্টিকার এবং প্রদর্শনীতে ক্রেতারাও আকৃষ্ট হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,কুষ্টিয়া, খোকসা শমসপুর বাজারের ,বিভিন্ন  দোকানেও যৌন উত্তেজক সিরাপ হিসেবে খ্যাত নানা ব্র্যান্ডের এনার্জি ড্রিংকস বিক্রি হচ্ছে। শমোসপুর  বাজারের,রেলওয়ে স্টেশন এর সামনে কিছু কিছু মুদিখানার দোকানে থেকেই  স্কুল-কলেজের ছাত্র এবং বিভিন্ন বয়সের তরুণ- বৃদ্ধ এবং যুব সমাজ এসব ড্রিংকস পান করে নানা অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে।

খোকসা উপজেলার স্বাস্থকমপ্লেক্সের TOC কামরুজামান সোহেল বলেন, জিনসা নামে যেসব পানীয় বিক্রি হচ্ছে, তা হচ্ছে স্রেফ সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টিকারী পানীয়। এর মধ্যে রয়েছে অ্যালকোহল (মদ)। বোতলজাত বা টিনজাত উপাদানের তালিকায় এই অ্যালকোহলের আধুনিক নাম দেওয়া হয়েছে ‘জিনসা’।  এগুলো পান করার পর শরীরে সাময়িকভাবে ভিন্ন ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি করে।

যারা নিয়মিত খায় তারা ধীরে ধীরে এতে আসক্ত হয়ে পড়ে। এসব সিরাপ নিয়মিত পান করলে কিডনি, লিভার, ফুসফুসসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে নানা জটিল রোগ সৃষ্টি হয়। এসব সিরাপ মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

হাটবাজারের অধিকাংশ দোকানে এসব বিক্রি হচ্ছে। অনেকে জেনে না জেনে পান করছে এসব পানীয়। স্কুল-কলেজের ছাত্র,যুব সমাজ এবং বৃদ্ধরা এসবের প্রধান ক্রেতা।

প্রকৃত অর্থে এসব এনার্জি ড্রিংকসের বিএসটিআইয়ের অনুমোদন না থাকলে ড্রিংকসের মোড়কে বা বোতলে অবৈধভাবে বিএসটিআইয়ের সিল ব্যবহার করেছে উৎপাদনকারীরা।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কুষ্টিয়া, একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, বাজারে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এনার্জি ড্রিংকস নামের যৌন উত্তেজক সিরাপের রাসায়নিক পরীক্ষা করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে একটি প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী জিনসা ভিগো-বি, ম্যান পাওয়ার হর্স ফিলিংস, ব্ল্যাক হর্স ও পানীয়তে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। এর কিছু কিছুর মধ্যে ‘অপিয়াম অপিয়েট’ ও ‘সিলডেনাফিল সাইট্রেট’ নামের রাসায়নিক দ্রব্য পাওয়া গেছে। এ দুটি দ্রব্য ‘ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ, ১৯৮২’ অনুযায়ী নিষিদ্ধ। জিনসা পণ্যে পাওয়া গেছে উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ক্ষতিকর উপাদান মেশানো এসব পানীয় কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিনসা নামক এই সব যৌন উত্তেজক সিরাপ একধরনের নেশা সৃষ্টিকারী উপাদান।

এমন উপাদানমিশ্রিত পানীয় পান করলে শরীরের ভেতরে এমন অবস্থা তৈরি হয়, যা সেবন করলে ধীরে ধীরে যৌনশক্তি নিঃশেষ করে ফেলে, কিডনি, লিভার, ফুসফুসসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে নানা জটিল রোগ সৃষ্টি হয়।

বিএসটিআইয়ের খুলনা আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে অনুমোদনহীন এসব যৌন উত্তেজক সিরাপ উদ্ধার করে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করে থাকি। এ ছাড়া এর উৎপাদকদের বিরুদ্ধেও বিএসটিআই একাধিক মামলা করেছে।

আমারসংবাদ/এসএম