পদ্মা সেতু নয় যেন সে স্বপ্নের আলোর ছোঁয়া। আর সেই আলোয় আলোকিত হয়েছে মাদারীপুরের কৃষকরা। স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সোনালি দিনের স্বপ্ন বুনছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। তাদের এসেছে সুদিন। আর দুদিনের দিকে ফিরে তাকাতে হবে না।
ফেরি ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় করে নষ্ট হতো উৎপাদিত কৃষকদের ফসল। মারা যেত গরু, ছাগল, হাস, মুরগী। নষ্ট হওয়া কিংবা মরে যাওয়ার আর কোন শঙ্কা নেই। এজন্য নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার জন্য অধিক বিপণন উৎপাদন শুরু করেছে কৃষকেরা।
মাদারীপুর সদর উপজেলার হোগলপাতিয়ার গ্রামের কৃষক আবদুল লতিব আকন বলেন, আগে শাক সবজি শ্রমের ফসল উৎপাদন করে স্থানীয় কালীগঞ্জ ও ফাসিয়াতলা বাজারে বিক্রি করতো। তিনি এই বছর ২ একর জমি লিজ নিয়েছে। এতে ঢেড়স ও পুই শাক, লাউ, মিষ্টি কুমড়া রোপণ করেছেন। তার এই শ্রমের ফসল ঢাকার বাজারে বিক্রি করবেন।
তিনি আরো বলেন, আগে উৎপাদিত ফসল ঢাকার বাজারে নেওয়ার পথেই নষ্ট হয়ে যাইতো, কারণ দীর্ঘ সময় ধরে ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হতো। এখন আর অপেক্ষা করতে হবে না।
মাদারীপুর সদর উপজেলার বাংলাবাজার গ্রামের কৃষক সাদ্দাম হাওলাদার, ইন্টার পাশ করে শুরু করেছিলেন গবাদি পশু ও হাঁস পালনের খামার। স্থানীয় বাজারসহ আশেপাশের বিভিন্ন বাজেরে বিক্রি করতেন। আগামীতে ঢাকার বাজারে তার খামারের গরু-ছাগল বিক্রি করার চিন্তা নিয়েছেন। তাই তিনি তার খামারের গরু ছাগল দ্বিগুণ লালন পালনের পরিকল্পনা নিয়েছে। পশুর দাম তুলনামূলক স্থানীয় বাজারে কম। তেমন চাহিদাও নেই। তবে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে গরুও ছাগলের চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও ঢাকার বাজারে মাছের চাহিদা রয়েছে। এ কারণেই তিনি নতুন করে একটি পুকুর খননের পরিকল্পনা করেছেন।
তিনি জানান, রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৯০ কিলোমিটার দূরের জেলা হলেও এতদিন ফেরিঘাটের ভোগান্তির কারণে গরু-ছাগল মাছ, মাংস ও দুধ ঢাকায় বিক্রি করতে পারেননি। তুলনামূলক কম দামে এসব দুধ ও মাংস স্থানীয় বাজার ও আশপাশের জেলায় বিক্রি করতে হয়েছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এখন থেকে দুই ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছে যাবে। এই ভাবনার পরিহার থেকে নতুন নতুন উদ্যোক্তারা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের।
আরেক গরুর খামারি তোয়াব হাওলাদার বলেন, `গত বছর কোরবানির সময় একটি বড় ষাঁড় গরুর ঢাকা নেওয়ার পথে ফেরিঘাটে ট্রাকে মারা গেছে। এতে আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আর আমার কোন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না। এখন আমি ঢাকার বাজারে গরু বিক্রি করে আশাকরি লাভবান হব।
মাদ্রাসা-স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো. ফিরোজ হাওলাদার `আমার সংবাদ`কে বলেন, কৃষকরা যদি ঢাকামুখী পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে তাহলে তাদের বিষয়টা ইতিবাচক হবে। এবং তারা লাভবান হবে এটাই চাচ্ছি আমরা। কৃষকরা গ্রাম থেকে শহরে ব্যবসার প্রসার করলে তাদের ব্যবসার প্রতি একটা আগ্রহ সৃষ্টি হবে বলে আমি আশা করি।
আমারসংবাদ/এসএম