রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই কর্মকর্তার নাম মো. ফজলুল হক। তিনি চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। গুরুত্বপূর্ণ এই দপ্তর প্রধানের অফিস না করার কারণে অন্যান্য স্টাফদের অনিয়ম নিয়মে পরিণত হয়েছে। এতে করে দুর দুরান্ত থেকে আসা খামারী, সেবাগ্রহিতারা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের তদারকিতে গাফিলতি রয়েছে বলে দাবী উপজেলার অন্যান্য কর্মকর্তাদের। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো: ফজলুল হক। তিনি বলেন, আমি ছুটি নিয়ে এবং উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই কর্মস্থল ত্যাগ করেছি।
বালিয়াকান্দিতে যোগদানের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে অফিস ফাঁকির বিস্তর অভিযোগ পাওয়া যায়। একাধিক সূত্রের পাওয়া তথ্য নিশ্চিত হতে দীর্ঘ অনুসন্ধান করেন এই প্রতিবেদক। নাম, পরিচয় গোপন রেখে ৮ মে থেকে ১০ আগষ্ট পর্যন্ত অনুসন্ধান করে পাওয়া যায় প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ফজলুল হক এর কর্মস্থলে না থাকাসহ অফিস ফাঁকির তথ্য। ৮ মে তার অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায় না, একাধারে ৮ মে পর্যন্ত তাকে পাওয়া যায় না। ৯ মে অপরাহ্নে তিনি অফিসে আসেন। ১২ মে অর্ধেক বেলা অফিস করে তিনি কর্মস্থল ত্যাগ করেন। এরপর তিনি ১৭ মে সকালে কর্মস্থলে আসেন এবং অফিস স্টাফদের ভাষ্যমতে ১৯ মে ৩টার দিকে বালিয়াকান্দি ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে ২৪ মে সকালে কর্মস্থল বালিয়াকান্দিতে আসেন এবং ২৬ মে দুপুরের দিকে কর্মস্থল ত্যাগ করেন বলে অফিসে তথ্য মেলে। ২৯ মে সকালে বালিয়াকান্দি কর্মস্থলে এসে তিনি ৩০ মে এবং ১লা জুন সকালে অফিস করেন।
১লা জুন দুপুরে একজন অফিস স্টাফ বলেন, এইমাত্র স্যার অফিস ত্যাগ করেছেন। পরবর্তীতে ০৫ জুন সকালে গিয়ে তাকে না পেলেও অপরাহ্নে তাকে অফিসে দেখা যায়। ৫ তারিখ থেকে ৮ তারিখে তিনি অফিসে ছিলেন।
এরপর ৯ জুন সকালে অফিসে গেলে একজন কর্মচারী জানান, বড় স্যার আজ অফিস করবেন না, তিনি মানিকগঞ্জ যাবেন, আপনি অন্যদিন আসুন। এ তথ্য নিশ্চিত হতে ১২টার সময়ে অফিসে গেলে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. ফজলুল হককে পাওয়া যায়নি।
চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারী জানান, স্যার আগামী সোমবার, ১৩ জুন আসবেন, আপনি ওই দিনে আসুন। এ তথ্য নিশ্চিত হতে ১০ থেকে ১২ তারিখের বিভিন্ন সময় অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। ১৩ জুন, সোমবার বিকেলে এবং ১৪ জুন সকালে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি অফিসেই আছেন।
১৬ জুন থেকে ১৮ জুন দুপুরে অফিসে গিয়ে জানা যায়, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শেরপুর আছেন এবং তিনি ১৯ জুন অফিসে আসবেন। ১৯ তারিখ সকালে খোঁজ নিয়ে তাঁকে না পেলেও বিকেলে মোবাইল ফোনে নিশ্চিত হওয়া যায় তিনি অফিসেই আছেন। ২০ জুন দুপুরে এবং ২১ তারিখ সকালে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানা যায় তিনি অফিসে আছেন। তবে বিকেলে অফিসে গিয়ে জানা যায়, তিনি ঢাকায় গেছেন।
এরপর ২৬ জুন দুপুরে অফিসে গেলে দুইজন কর্মচারী জানান, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ২১ তারিখে কর্মস্থল ত্যাগ করে ২৫ তারিখ পর্যন্ত কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। এরপর ৩০ জুন দুপুরে অফিসে গিয়ে জানা যায়, ২৬ তারিখের কোন এক সময় তিনি বালিয়াকান্দিতে আসেন এবং আজ বিকেলে তিনি চলে যাবেন।
স্যার কোথায় যাবেন প্রশ্ন করলেও ওই কর্মচারী ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, স্যার যেদিন অফিসে থাকে সেদিন আসতে পারেন না? বালিয়াকান্দি থাকবেন না শুধু এতটুকু বলতে পারবো। আপনি পারলে ঈদের পর আইসেন।
এরপর ৫ জুলাই দুপুরে অফিসে গেলে ৩০ জুন দেখা হওয়া সেই একই কর্মচারী বলেন, আপনাকে বলছিলাম ঈদের পর আসতে আপনি আগেই চলে আসলেন। স্যার এ সপ্তাহে আসবেন না আপনি ঈদের কয়েকদিন পর আসুন। ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবস ৩.১৪ মিনিটের সময় অফিসে গেলে দুইজন অফিস স্টাফকে পাওয়া যায়, তারা বলেন, সামনের সপ্তাহে খোঁজ নিয়েন। তারা ১৭ তারিখে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ৩১ জুলাই দুপুরে অফিসে গেলে কথা হয় ৩ জনের সাথে। তারা খোসগল্প করতে ছিলেন।
বড় স্যারের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, গত বুধবারে তিনি অফিস করে বাড়ি গেছেন। স্যারকে কখন পাওয়া যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, আপনি আগামী সপ্তাহে আসুন।
এরপর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো: ফজলুল হক এর মোবাইল ফোনে ফোন দিলে তিনি জানান, এ সপ্তাহে আমি আসছিনা, আপনি আগামী সপ্তাহে অর্থাৎ ৭ আগষ্ট আসুন।
গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার আসছিলাম আপনি ছিলেন না এমনটি জানালে তিনি বলেন, বুধবার (২৭ জুলাই) আসছি, আপনি আগামী সপ্তাহে আসুন। এরপর বিভিন্ন সময়ে অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।
৮ আগস্ট, ৩টা ১০ মিনিটের সময় ফোন দিলে তিনি বলেন, এ সপ্তাহে আসছিনা, ইনশাআল্লাহ আগামী সপ্তাহে রোববার, ১৪ আগষ্ট বালিয়াকান্দিতে আসবো। তবে তিনি প্রতিনিধির যাতায়াতের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে বুধবার (১০ আগস্ট) কর্মস্থলে আসেন।
সেবাগ্রহিতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রাণি সম্পদের তদারকি না থাকায় খামারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এদিকে প্রাণিসম্পদ দপ্তরে ভেটরিনারী ডাক্তারের পদ শূণ্য থাকার কারণে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে করে মাংস, দুধ, ডিম ও জৈব সার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া দপ্তরটিতে এসে দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে পাওয়া যায়না বলেও অভিযোগ তাদের।
জানতে চাইলে ফজলুল হক বলেন, আমি উল্লেখিত সময়ের মধ্যে ১২দিন ছুটিতে ছিলাম। এছাড়া ছয় অথবা নয়দিন প্রশিক্ষণে ছিলাম। আমি একজন মাষ্টার ট্রেইনার। বাকী দিনগুলো আমি কর্মস্থলে ছিলাম না। তবে তা জেলা কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি। আমি নিয়ম মেনে আমার পেশাগত দায়িত্ব পালন করছি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফজলুল হক সরদার বলেন, কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে থাকার বিধান রয়েছে, তার স্ত্রীর শারীরিক সমস্যার কারণে বিভিন্নসময় কর্মস্থল ত্যাগের অনুমতি নিয়েছেন। এছাড়া প্রয়োজনেও ছুটিও নিয়েছেন। বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছেন। দীর্ঘ দিন কর্মস্থলে না থাকার অভিযোগ সঠিক নাও হতে পারে।
কেএস