কয়েক যুগ আগেও গ্রাম বাংলার কৃষকদের বাড়িতে দেখা মিলত ধান রাখার ‘গোলাঘর’ বা ধানের গোলা। আধুনিক সভ্যতায় ইমারতের তৈরি গুদাম ঘরের যুগে হারিয়ে গেছে এই ঘর। তবে বাপ-দাদার ঐতিহ্যকে স্মৃতির ফলক হিসেবে ধরে রাখতে এখনো কেউ কেউ বাড়িতে এই গোলা ঘর রেখে দিয়েছেন।
এমনই ধান রাখার জরাজীর্ণ পৃথক দুটি আয়তাকার গোলা ঘরের দেখা মিলবে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার পালশা ইউপির চৌধুরী বাড়িতে। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ্ মোহাম্মদ শামীম হোসেন চৌধুরীর বাড়িতে ঐতিহ্যের বাহক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে এই দুটি আয়তাকার গোলা ঘর। তার দাদা এই ‘গোলাঘর’ তৈরি করেছিলেন।
পুরোটাই বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই ‘গোলাঘর’। ভিতরের অংশের পুরো দেয়াল মাটি আস্তরণ দেওয়া। বাহিরের অর্ধেকের বেশি অংশ জুড়ে মাটির আস্তরণ লাগানো আছে। কয়েক জোড়া গাছের খুঁটি এবং ইটের উপর দাঁড়িয়ে আছে এই গোলা ঘর। মাটি থেকে প্রায় দুই ফুট উপরে এই ঘরের মেঝে। সেখানেও ব্যবহারিত হয়েছে বাশেঁর উপরে মাটির মোটা আস্তরণ। উপরে রয়েছে টিনের চালা। চালার ঠিক নিচেই রয়েছে ছোট্ট একটি দরজা। সেই ছোট্ট দরজা দিয়েই এক সময় সোনালী ধানের বস্তা উঠানামা করানো হতো।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ্ মোহাম্মদ শামীম হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এই ধান রাখার গোলা ঘর আমার দাদার আমলে তৈরি করা হয়েছিল। সেটি আমার বাবাও ব্যবহার করে গেছেন। আমিও ২০০৭ সাল পর্যন্ত এটি ব্যবহার করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখন আর গোলা ঘরের তেমন প্রয়োজন হয়না। জমি থেকে ধান কাঁটার সাথে সাথেই ব্যবসায়ীরা ধান কিনে নিয়ে যায়। শুধু বাড়িতে খাওয়ার জন্য যে পরিমান চালের প্রয়োজন, সেই পরিমান ধান বাড়িতে রাখা হয়। এই ধানের গোলা আমার পরিবারের স্মৃতি বহন করে। তাই এটি না ভেঙ্গে এভাবেই রেখে দিয়েছি।’
পালশা ইউপির বিলপাড়া গ্রামের ৮৩ বছর বয়সী বৃদ্ধ আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, ‘এই বড় বড় ধানের গোলা আগে সোব বাড়িত দেখা যাওছিল না। বড়লোক গৃহস্থের বাড়ির খালি আছিল। এগলা বানাতে সেই আমলেত ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হওছিল। এখনকার যুগের ছোটপোল তো গোলা কি জিনিস জানেই না।’
গোলা ঘর নিয়ে ঘোড়াঘাট কে.সি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ লুৎফর রহমান বলেন, ‘আধুনিকতার যুগে প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্যর অনেক নিদর্শন হারিয়ে গিয়েছে। তারমধ্যে ধান রাখার ‘গোলাঘর’ একটি। এক সময় গ্রামীন জনপদের ধনী কৃষকদের বাড়িতে ‘গোলাঘর’ এর দেখা মিলত। এই ঘরে রাখা ধান হতো বেশ শক্ত এবং সেই ধানের চাল হতো বেশ সুস্বাদু। আগামী প্রজন্মের জানান জন্যে হলেও এসব গ্রামীন বিলুপ্তপ্রায় ঐহিত্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।’
কেএস