নাগরপুরে আখ চাষে কৃষকের মুখে হাসি

নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২২, ০৩:১৯ পিএম

নাগরপুরে কৃষকরা আখের জমিতে সাথী ফসল হিসেবে তেল-মসলা ও ডাল জাতীয় ফসল চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে আখের ফলন অনেক ভাল হয়েছে। বাজারে এর চাহিদা থাকায় কৃষকরা ভাল দাম পাচ্ছেন। সঙ্গে সাথী ফসল তো আছেই। সব মিলিয়ে আখ চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।

বেলে ও বেলে-দোআঁশ মাটি আখ চাষের জন্য উপযুক্ত। ৭-৮ মাসে আখের ফলন পাওয়া যায়। এক মৌসুমের আখ উৎপাদনে দুই মৌসুমের ধানের সময় লাগে- তারপরও সাথী ফসল হওয়ায় সার্বিকভাবে আখ চাষে কৃষরা লাভবান হচ্ছেন। আখ উঁচু-নিচু জমিতেও অনায়াসে চাষ করা যায়। আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণের কারণে আশানুরূপ ফলন ও বাজারে বেশ চাহিদা থাকায় দিন দিন আখ চাষের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। আখের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে তেল ফসলের মধ্যে তিল, তিসি, সরিষা, বাদাম, মিষ্টি কুমড়া, আলু ও মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে পেঁয়াজ, রসুন এবং ডাল জাতীয় ফসলের মধ্যে মটরশুঁটি, ছোলা, মসুর, মুগ ইত্যাদি চাষ করা যায়।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৬৫ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন আখ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের ইরতা, মামুদনগর ইউনিয়নের মেঘনা, সদর ইউনিয়নের কাশাদহ, দপ্তিয়র ইউনিয়নের চরাঞ্চল সূমহ ও ভাড়রা ইউনিয়নের শাহাজানিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে । গত মৌসুমে উপজেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ২৫৬ মেট্রিক টন আখ উৎপাদন হয়েছিল। আখ চাষিরা জানায়, আখের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে তেল, মসলা ও ডাল জাতীয় ফসলগুলো আলাদা জমি ছাড়াই বিনা সেচে শুধুমাত্র বৃষ্টির উপর নির্ভর করে চাষ করা যায়। ফলে এককভাবে আখ চাষের চেয়ে আখের সঙ্গে সাথী ফসল চাষ করলে অনেক বেশি লাভজনক হয়। সাথী ফসল হিসেবে ডাল জাতীয় ফসল চাষে জমির উর্বরতা শক্তি অনেকাংশে বেড়ে যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে আখ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সাথী ফসল থেকে আংশিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়। পেঁয়াজ ও রসুনের পাতায় তীব্র ঝাঁঝ থাকায় সাথী ফসল হিসেবে চাষ করলে আখ ক্ষেতে পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হয়। আখের সঙ্গে সাথী ফসল চাষ করলে জমিতে আগাছা কম হওয়ায় মূল ফসলের ফলন অনেকাংশে বেড়ে যায়। কৃষকরা মনে করেন- সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা অধিক হারে পতিত জমিতে আখ চাষ করে আবাদ আরও সম্প্রসারণ করা সম্ভব।

সরেজমিনে উপজেলার সহবতপুর, মামুদনগর, দপ্তিয়র ও ভাড়রা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, আখের প্রতিটি ক্ষেতেই হলুদ ও লাল রঙের আখ। দেখতে আকর্ষণীয় ও খেতে বেশ সুস্বাদু। আখের ওষধি গুণও রয়েছে। ৮-১২ ফুট উচ্চতার প্রতিটি আখ খুচরা ১০-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি টাঙ্গাইলসহ অন্য জেলায়ও এখানকার আখ সরবরাহ করা হচ্ছে। আখ চাষি মো. রাজন খান জানান, তিনি চলতি মৌসুমে ৪২ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করেছেন। এতে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে তিনি প্রায় এক মাস আগে ৭৫ হাজার টাকায় তার ক্ষেতের আখ বিক্রি করেছেন।এখন বিক্রি করলে লাখ টাকার উপরে বিক্রি করতে পারতেন। সঙ্গে সাথী ফসলের সুবিধা তো রয়েছেই। আখের ফাঁকে ফাঁকে আলু, মিষ্টি কুমড়া ও পেঁয়াজের চাষ করেছেন। তাদের গ্রামের সবারই আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভাল দাম পেয়ে তারা খুব খুশি।

ইরতা গ্রামের আখ চাষি বেল্লাল আলী মিয়া জানান, এক সময় এ মৌসুমে তিনি আমন ধান চাষ করতেন। তাতে কোন রকমে খরচ উঠতো। তিন বছর ধরে আমন ধানের আবাদ ছেড়ে আখ চাষ করছেন। এতে লভ্যাংশের পরিমাণ বাড়ছে। এ বছর ২৮ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করে তিনি খরচ বাদ দিয়ে ৩০ হাজার টাকার বেশি লাভ হয়েছে। তবে গত বছর বন্যায় তাদের গ্রামের অনেক আখ ক্ষেত বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পঁচে নষ্ট হয়েছিল।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আব্দুল মতিন বিশ্বাস জানান, নাগরপুরে স্থানীয় জাতের পাশাপাশি ঈশ্বরদী-৪১ ও ঈশ্বরদী-৪২ সহ নতুন কিছু উন্নত জাতের আখ চাষ করা হচ্ছে। গত বছর বন্যায় যেসব চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন তারা অনেকেই এবার আখ চাষ করেন নি। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় আখের ফলন অনেক ভাল হয়েছে। বাজরে দাম ভালো থাকায় অনেকেই আখ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এছাড়া আখের সঙ্গে সাথী ফসল অর্থাৎ তেল, মসলা ও ডাল জাতীয় ফসল উৎপাদন করলে কৃষকরা নিশ্চিত লাভবান হতে পারবে।

আমারসংবাদ/এসএম