৩০ বিড়াল নিয়ে জাহাঙ্গীর-তাহমিনার সংসার

মোঃনেছার খান, আশুলিয়া প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২২, ০৫:০১ পিএম

স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়ালের কদর সবচেয়ে বেশি। বিড়াল শান্তশিষ্ট প্রাণী, তার মেজাজ-মর্জি অন্যসব পোষা প্রাণীর থেকে আলাদা। বিড়ালের প্রতি মানুষের মহত্ববোধ যুগ যুগ ধরে অব্যাহত। ঠিক কবে থেকে বিড়ালকে পোষা প্রাণী হিসেবে রাখার প্রচলন শুরু হয় তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।

তেমনি মহত্ববোধ দেখিয়ে ৩০ টি বিড়াল নিজের কাছে পালছেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার মৃত পিতা বারেক পীরের ছেলে।

জীবনের তাগিদে ২০১৭ সালে পশ্চিমাদের দেশ সৌদি আরবে পাড়ি জমালেও তিন মাসের বেশি থাকা হয়নি তার। তবে এর মধ্যে ওমরা করতে মক্কা গেলে সেখানে কাবা শরিফের চার পাশে অনেক বিড়াল দেখতে পান এবং যানতে পারেন বিড়াল পালনে ইসলামে কোন বাধা নেই।

২০১৭ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুত এলাকায় একটি ভারা বাসায় বসবাস শুরু করেন। হটাৎ একদিন রাস্তার মধ্যে একটি বিড়াল ছানাকে কুড়িয়ে পান তিনি।

সেটাকে বাসায় নিয়ে আসেন জাহাঙ্গীর। সবে মাত্র চোখ ফুটা বিড়াল ছানাটির নাম দেওয়া হলো ‍‍`টুন টুনি‍‍`। সেই থেকে জাহাঙ্গীর বিড়াল ছানা টিকে টুনি মা বলে ডাকতো। জাহাঙ্গীরের টুনি মাসহ তার সংসারে এখন মোট ৩০ টি বিড়াল রয়েছে।

তার এই বিড়ালের জন্য এখন বরাদ্দ করা হয়েছে দোতলা ফ্লাটের একটি রুম। তাদের জন্য রুমে আছে সারি সারি খাচা, ফ্রিজ ভরা মাছ ও খেলা করার জন্য বল, পুতুল ইত্যাদি।

জাহাঙ্গীর ও তার স্থী তাহমিনা একমাত্র ছেলে তানজিম হাসান তিন জন মিলেই বিড়াল গুলোর দেখাশুনা করেন। নতুন বাচ্চা জন্ম নিলে নামকরণও করেন তারাই। জাহাঙ্গীরের বিড়াল গুলোর নামের মধ্যে রয়েছে-বাড়ির মুরুব্বি বিড়াল টুন টুনি মা, ঢুগি, হিরা মনি, টাইগার, কুটি জমিদার ও হিরো আলম সহ আর অনেক নাম।

এই বিড়ালগুলির ভেতর হিরামনিকে নিয়ে এসেছেন মিরপুর থেকে। ফেসবুক দেখতে পান মিরপুরের একটি পাঁচতলা বাড়ির ছানছেটে আটকা পড়ে আছে একটি বিড়াল।

সেখানে গিয়ে বিড়াল টিকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে আসে জাহাঙ্গীর এবং তার নাম করণ করেন হিরা মনি। হিরা মনির মত আর অনেক বিড়াল এখন জাহাঙ্গীর-তাহমিনা দম্পতির সংসারে।

জাহাঙ্গীর বলেন, প্রথমে একটি বিড়াল দিয়ে শুরু করলেও এখন আমার বিড়াল ছোট-বড়ো মিলিয়ে ৩০ টি। হটাৎ কেন যানি বিড়ালের জন্য আমার মনে মায়া হয়ে গেছিলো। বিড়াল আমার মনে এমন ভাবে যায়গা করে নিয়েছে এখন আর এগুলো বাদ দিয়ে কিছু করা সম্ভব না। খুব কষ্ট করে এখন আমি ওদের নিয়ে চলতে হয়। ওদের পিছনে প্রতি মাসে আমার ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ওদের জন্য আলাদা একটি ঘর বরাদ্দ আছে। এমনও দিন গেছে দেখা গেল ঘরে এক বেলার চাল আছে তখন নিজেরা না খেয়ে ওদের খাবার দেই।

তিনি আর বলেন, আমি যত দিন বেচে থাকবো এদের নিয়ে থাকতে চাই। কিন্তু ঢাকা শহরে বাড়া বাসায় থেকে এদের পালা খুব কষ্ট হয়ে যায়। বিড়াল ছাড়াও আমি প্রতিদিন রাস্তার ১০টা কুকুরকে খাবার দেই। যায়গা সংকট থাকার কারনে বিড়াল বাসায় আনলেও কুকুর বাসায় আনতে পারি না। গ্রামের বাড়িতেও আমার যায়গা জমি যা ছিল পদ্মার চারবার ভাঙ্গনে সব বিলিন হয়ে গেছে। তাই সরকারের কাছে চাওয়া আমারে আমার বিড়াল ও কুকুর গুলোকে নিয়ে যেন থাকতে পারি সে জন্য সরকার একটা জায়গার ব্যবস্তা করে দেয়।

সাহায্যের জন্য কারো কাছে গেছেন কিনা জিজ্ঞেসা করলে তিনি বলেন, ফেসবুকে নিউজে দেখলাম ধামরাই ইউএনও মহোদয় বানোরের জন্য প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। সেটা দেখে আমি ধামরাই ইউএনও মহোদয় এর কাছে গেলে আমার বাসা কোথায় জিঙ্গেস করেন। আমি আশুলিয়া বললে তখন তিনি আমাকে সাভারে যেতে বলে। আমি সাভার উপজেলাই গিয়ে ইউএনও মহোদয় এর সাথে দেখা করলে তিনি বলেন, আমাদের এখানে পশুপাখির জন্য তেমন কোন বাজেট নেই। পরে চলে আশি আর কোথাও যাওয়া হয় নাই।

তিনি কান্নজড়িত কন্ঠে বলেন, আমি এই নিশপাপ প্রাণীদের জন্য নিজের জীবন দিতেও রাজি আছে। শুধু কষ্ট হয় একটা বিষয় ভাবলে আমি মরে গেলে এদের কি হবে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপাকে যদি একবার আমার কথা জানাতে পারতাম তাহলে হয়তো আমি মরে গেলেও এই প্রানীগুলো একটি ব্যবস্থা হয়ে যেতো। আমি আরও বড় করে এই প্রানীদের সাথে রাখতে চাই। রাস্তায় যেনো কোনো অসহায় প্রাণী না থাকে সেটার ব্যবস্থা করে যেতে চাই৷

এআই