২৬ ঘণ্টা পর নদীতে ঝাঁপ দেয়া টোকনের লাশ উদ্ধার

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২, ০৮:২১ পিএম

চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়িয়ায় পুলিশের দাবড় খেয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে এক সবজি ব্যবসায়ী নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে ডুবুরিরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে মাথাভাঙা নদী থেকে উদ্ধার করে।

জানাগেছে গতকাল বুধবার তাস খেলার সময় স্থানীয় হাটবোয়ালিয়া ফাঁড়ি পুলিশ তাদের দাবড় দেয়। দুজনকে হাতেনাতে আটক করা হলেও অন্য দুজন মাথাভাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দেয়। একজন নদী থেকে সাঁতরে ডাঙায় উঠলেও অন্যজন নদীর স্রোতে ভেসে যান।

আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়ীয়া গ্রামে গতকাল বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। সংবাদ পেয়ে বিকেলে আলমডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের একটা টিম ঘটনাস্থলে যায়। খুলনা থেকে আগত ডুবুরিরা লাশ উদ্ধারে অভিযান চালিয়ে দীর্ঘ ২৬ ঘণ্টা পর মাথাভাঙ্গা নদীর অনুপনগর- আঠারোখাদা থেকে থেকে টোকেনর লাশ উদ্ধার করে। নিহত টোকন আলী (৩৮) ওই গ্রামের ওদুছদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় একজন সবজিব্যবসায়ী।

বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন, আলমডাঙ্গা থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত মোহাম্মদ আব্দুল আলিম, পুলিশ পরিদর্শক অপারেশন একরামুল হোসাইন।

স্থানীয়দের অভিযোগ গ্রামের নিরীহ চারজন বাঁশবাগানের নিচে বসে তাস খেলছিলেন। পুলিশ টাকা আদায় করার জন্যই তাদেরকে দাবড় দেয়। পুলিশের দাবি ওই চারজন জুয়া খেলছিলো। পুলিশের ভয়ে দুজন পাশের নদীতে ঝাঁপ দেন।

এলাকা সূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়ীয়া ফেরিঘাটপাড়ার আব্দুর রহমানের ছেলে আকছেদ আলী, ইয়াদুল হকের ছেলে কবিরুল ইসলাম, ছুন্নত আলীর ছেলে নাজিম উদ্দিন ও ওদুছদ্দিনের ছেলে টোকন আলী গ্রামের পার্শ্ববর্তী মাথাভাঙ্গা নদীর তীরবর্তী বাঁশবাগানের নিচে বসে তাস খেলছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় হাটবোয়ালিয়া ক্যাম্প পুলিশের টুআইসি এএসআই জাহিদুল ইসলাম দুজন কনস্টেবলকে সঙ্গে নিয়ে ওই চারজনকে ধাওয়া দেন। এ সময় কবিরুল ইসলাম ও আকছেদ আলীকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশ। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে অপর দুজন নাজিম উদ্দিন ও টোকন আলী মাথাভাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দেন। কিছুক্ষণ পর নাজিম উদ্দিন সাঁতরে ওপারে চলে গেলেও সাঁতার না জানার কারণে টোকন আলী স্রোতের তোড়ে তলিয়ে যান।

নিখোঁজ টোকনের বড় ভাই আকালী গণমাধ্যমকে জানান, পুলিশের তাড়া  খেয়ে আমার ভাই সাঁতার না জানার পরও নদীতে ঝাপ দিতে বাধ্য হয়েছে। আমার ভাই তাস খেলছিলো, জুয়া খেলেনি। পুলিশ আমার নির্দোষ ভাইকে নদীতে ঝাপ দিতে বাধ্য করেছে। পুলিশের কারণে সে মারা গেছে। আমি এর বিচার চাই। আমি আদালতে যাবো। গ্রামের লোকজনসহ স্বজনরা আলমডাঙ্গা-চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহের মহেশপুর পর্যন্ত ভাগ ভাগ হয়ে ভাইয়ের জন্য নদীর পাশে বসে আছি আমরা।

গ্রামের কয়েকজন জানান, পরবর্তীতে আটক দুজনের কাছ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা নিয়ে আটক দুজনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে উদ্ধার করে আলমডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও খুলনা ফায়ার সার্ভিসের ডুমুরিয়া দল।

আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে জানান নিহতের পরিবারের কোন অভিযোগ মামলা না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়।

ঘটনায় এলাকাবাসীও স্বজনদের অসন্তোষটি এবং ক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশ।

এসএম