বঙ্গবন্ধু সেতুর পিলারে ধাক্কা দিয়ে আবারও বাল্কহেড ডুবি, আটকে আছে আরেকটি

শুভ কুমার ঘোষ, সিরাজগঞ্জ: প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২, ০৯:৪৫ পিএম

সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতুর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে বালুবোঝাই একটি বাল্কহেড ডুবে গেছে। এ সময় বাল্কহেড থাকা ৫ শ্রমিক সাঁতরে তীরে উঠেন। এর ঘণ্টাখানেকের মাথায় আরেকটি বাল্কহেড সেতুর অপর একটি পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আটকে গেছে।

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার সেতুর ১০ নম্বর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় প্রথম বাল্কহেডটি। পরে সাড়ে ১২ টার দিকে ৯ নম্বর পিলারে ধাক্কা লেগে আটকে যায় আরকটি বাল্কহেড।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। ডুবে যাওয়া বাল্কহেডটি সিরাজগঞ্জ থেকে বালু নিয়ে নারায়নগঞ্জ ও আটকে থাকা বাল্কহেডটি সিরাজগঞ্জ থেকে বালু বোঝাই করে ফরিদপুর সিএনবি ঘাটের দিকে যাচ্ছিলো।

ডুবে যাওয়া বাল্কহেডের শ্রমিক আক্তার হোসেন জানান, মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আমরা সিরাজগঞ্জ হাজী সাত্তারের বালুর মহাল থেকে বালু ভর্তি করে বাল্কহেডটি নিয়ে নারায়নগঞ্জের দিকে রওনা দেই। নদীতে অতিরিক্ত স্রোতের কারনে পিলারের সাথে ধাক্কা লাগার পর আমাদের বাল্কহেডটি ডুবে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা ৫ জন  লাইভ জেকেট পরে সাঁতরে বেলকুচির রান্ধুনীবাড়ী চরে এসে উঠি। আমরা ৫ জনেই সুস্থ্য আছি।

ডুবে যাওয়া বাল্কহেডির বিষয়ে নৌ-পুলিশকে জানিয়েছেন কি না জানতে চাইলে আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নৌ- পুলিশকে জানাতে গেলে সমস্যা আছে। তারা আমাদের আটকে রেখে টাকা আদায় করবে তাই এখান থেকেই চলে যাবো। মহাজন তার বাল্কহেড অন্যভাবে উদ্ধার করবে।

প্রত্যক্ষদর্শী বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর প্রকৌশলী ফারুক হোসেন বলেন, নদীতে অনেক পানি বাড়ছে। নদীর প্রবল স্রোতর কারনে বাল্কহেডটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম পাড়ের ১০ নং পিলারের সাথে ধাক্কা লাগে এবং সেখানেই ডুবে যায়। তার কিছুক্ষন পর ৯ নং পিলারের সাথে আরেকটি বালু বোঝাই বাল্কহেড জোরে ধাক্কা দিয়ে আটকে যায়।

তিনি আরও বলেন, গত দুই দিন আগে একই স্থানে বালু বোঝাই একটি বাল্কহেড ডুবে গেছে। সে ঘটনায় একজন এখনো নিখোঁজ রয়েছে বলে জানতে পেরেছি।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম নৌ- ফাড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করে পরিচয় পাওয়ার পরেই খুব ব্যাস্ত বলে ফোন কেটে দেন।

বঙ্গবন্ধু সেতুর সাইড অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাসুদ বাপ্পী বলেন, আজ সকালে সেতু মন্ত্রনালয়ের সচিব মো. মনজুর হোসেন স্যার বঙ্গবন্ধু সেতু পরিদর্শনে এসেছেন। স্যার সব কিছু দেখছেন। ডুবে যাওয়া বাল্কহেড সম্পর্কে এখনো জানিনা তবে একটি বালু বোঝাই বাল্কহেড আটকে আছে বলে জানতে পেরেছি।

কঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, দুপুর ১২ টার দিকে জানতে পারি ১০ নং পিলারের সাথে বালু বোঝাই একটি বাল্কহেড ধাক্কা লেগে ডুবে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও নৌ-পুলিশকে জানিয়েছি। পরে কি হয়েছে তা জানিনা। তার ঘন্টা খানেক পরে আমাদের ফোর্স জানায় ৯ নং পিলারের সাথে বালু বোঝাই আরেকটি বাল্কহেড জোরে ধাক্কা দিয়ে মাঝামাঝি অবস্থায় আটকে আছে।

আমি সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গিয়ে দেখি নদীতে প্রচন্ড স্রোত। এর মাঝেই পিলারের সাথে আটকে আছে বাল্কহেডটি। এতে নদীর স্রোতের পুরো চাপ গিয়ে পরছে পিলারের সাথে। এটি বিআইডাব্লিউটিএ এর রেসকিউ নিয়ে এসে দ্রুত সরাতে হবে। তা না হলে যে কোন দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে বিআইডাব্লিউএকে খবর দেবে নৌ-পুলিশ।

প্রসঙ্গত, গত ১১ সেপ্টম্বর বঙ্গবন্ধু সেতুর ৯ নং পিলারের সাথে একটি বালু বোঝাই বাল্কহেড ধাক্কা দিয়ে ডুবে যায় এবং এ ঘটনায় একজন নিখোঁজ হয়। ঘটনার দুইদিন পার হলেও এখনো নিখোঁজ ব্যাক্তি উদ্ধার হয়নি।

ইএফ