নোয়াখালীতে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা

প্রাইভেট শিক্ষকসহ ৩জন গ্রেপ্তার

নোয়াখালী প্রতিনিধি:  প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২, ০৩:৩২ পিএম

নোয়াখালী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকায় স্কুলছাত্রী তাসনিয়া হোসেন অদিতা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আবদুর রহিম রনি নামের সাবেক কোচিং শিক্ষকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

প্রাথমিক আলামতে কোচিং শিক্ষক রনির শরীর থেকে ভিকটিম কর্তৃক নখের কিছু আঁচড়ের চিহ্ন পাওয়া যায়।

শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর পৌনে ১টার দিকে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম। গ্রেপ্তারকৃত রনি লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার খলিল মিয়ার ছেলে।

পুলিশ সুপার জানান, নিহত শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধারের পরপর পুলিশের একাধিক দল পৃথক অভিযান চালিয়ে ইসরাফিল (১৪), তার ভাই সাঈদ (২০) ও আবদুর রহিম রনিকে (২০) গ্রেপ্তার করে। 

এ চাঞ্চল্যকর  হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রনি প্রাথমিকভাবে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে, রনির মাথা, ঘাড়, গলাসহ শরীরের একাধিক স্থানে নখের আঁচড় রয়েছে। 

ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত একটি ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনায় একটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ ঘটনায় ইসরাফিল ও সাঈদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

তিনি আরও জানান, রনির কোচিং থেকে কিছুদিন আগে পড়া বন্ধ করে দিয়ে অন্যস্থানে প্রাইভেট শুরু করে অদিতা। এতে ক্ষিপ্ত হয় রনি, যদিও পরে অদিতাদের বাসায় বিভিন্ন সময় আসা যাওয়া করতো সে। 

অদিতার মা ঘরে না থাকার সুযোগ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টা থেকে ২টার মধ্যে কোন একসময় বাসায় গিয়ে অদিতাকে জোর পূর্বক ধর্ষণ ও পরে ঘটনা দামাচাপা দেওয়ার জন্য ঘরে থাকা ছোরা দিয়ে হাত ও গলা কেটে অদিতাকে হত্যা করে এবং ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য ঘরে আলমেরিতে থাকা মালামাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে। কিন্তু কোন মূল্যবান জিনিস খোয়া যায়নি।

এদিকে শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মুজিব চত্বরে সচেতন নোয়াখালীবাসীর ব্যানারে শত শত তরুণ, বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা তাসফিয়া হত‍্যার সাথে জড়িতদের দুত গ্রেপ্তারসহ বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভে অংশ নেন। 

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে, তাসনিয়া হত্যাকান্ডের সঠিক তদন্ত ও দোষীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানানো হয়। 

একই সাথে নোয়াখালীতে ক্রমাগত আইন শৃঙ্খলার অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মেয়েদের নিরাপত্তা, কিশোর গ্যাং বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানানো হয়। 

এসময় বক্তব্য রাখেন উন্নয়ন সংগঠক আবদুল আউয়াল, নারী অধিকার জোটের সভাপতি লায়লা পারভীন, সংগঠক মুনীম ফয়সল, সার্ভিস ফর হিউম্যান বিয়িং অর্গানাইজেশনের সভাপতি ফাহিদা সুলতানা, আলোকিত মানবিক অর্গানাইজেশনের সভাপতি পারভেজ মোল্লা প্রমুখ। 

এছাড়া নোয়াখালী নাগরিক অধিকার আন্দোলন, নোয়াখালী সাইবার ওয়ারিয়র্স, নিরাপদ নোয়াখালী চাই, ড্রিম লাইট অব হেল্প সেন্টার, রয়েল ড্রিস্টিক্ট নোয়াখালীসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেন।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাহান মঞ্জিলের একটি কক্ষ থেকে স্কুলছাত্রী অদিতার মৃতদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। সে নোয়াখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। 

মৃতদেহটি অর্ধনগ্ন, গলা ও দুই হাতের রগ কাটা অবস্থায় বিছানায় পড়ে ছিলো। ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে পুলিশ তাৎক্ষনিক অভিযানে বিভিন্ন স্হান হতে  ৩জনকে আটক করে।

টিএইচ