গভীর সমুদ্রে নিম্নচাপের কারণে গত ১৮ থেকে ২১ আগস্ট ট্রলার ডুবে ৩৬ ঘণ্টা ভাসতে ভাসতে জলসীমা অতিক্রম করে ভারতে ঢুকে পরা জেলেদের ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে বরগুনার পাথরঘাটায় উপজেলার ১৭ জেলে পরিবার।
শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টার সময় পাথরঘাটা উপজেলা প্রেসক্লাবে ওই সকল জেলে পরিবার গুলো উপস্থিত হয়ে এই হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
নিখোঁজ জেলেদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্ট মাসের ১৮ তারিখ হঠাৎ করে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ শুরু হয়। এর কয়েকদিন আগে এই উপকূলের জেলেরা তাদের ট্রলারে রসদ নিয়ে মাছ ধরার জন্য গভীর সমুদ্রে যায়। এদিকে নিম্নচাপ শুরু হলে সাগর উত্তাল হয়ে পড়ায় কয়েকটি ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। তখন ডুবে যাওয়া ট্রলার গুলোর অধিকাংশ জেলেরা সমুদ্রে ভাসতে থাকে। তারা ৩৬ ঘণ্টা ভাসার পরে বাংলাদেশী জলসীমা থেকে ভারতীয় কোস্টগর্ডের একটি জাহাজ তাদেরেকে উদ্ধার করে ভারতের কাকদ্বীপের বুদ্ধপুর এলাকার কৃষ্ণ আশ্রয়ন কেন্দ্র অস্থান করছেন। সেখানে উদ্ধার হওয়া জেলেদের ৩ বেলা খাবার চিকিৎসা ঠিকমতো না দেয়ায় আরো অসুস্থ্য হয়ে পরেছেন। তাদেরকে সরকারের মাধ্যমে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য অনুরোধ করেন।
জেলে ফিরোজ ও হাসানের মা ফিরোজা বেগম, রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হাফিজা বেগম জানান, তাদের পরিবার গুলোর উপার্জন করা ব্যাক্তিরা সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ফিরে আসেননি, প্রচন্ড ঝড়ে তাদের ট্রলার ডুবে যায়। প্রথমে মনে করছিলাম তারা আর বেচে নেই, অনেকদিন পরে জানতে পেরেছি তারা ভারতে আছে। প্রধানমন্ত্রী আপনিতো একজন মা, সেই মা হিসেবে আপনি আপনার ছেলেদের ফিরিয়ে এনে দিন। তাদের সন্তানদের নিয়ে আমরা খুব কস্টে দিন পার করছি। বর্তমানে আমরা নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি তার পরেও ট্রলার মালিককে টাকা দিয়েছি তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য। ট্রলার মালিকের সাথে কথা বলতে চাইলেও তেমন কোন কথা বলা যায় না। শুনেছি তারা নাকি ভারতের দুতাবাসে কাগজ জমা দিয়েছে। এখন আপনি চাইলেই তারা দেশে আসতে পরেন। আপনি আপনার ছেলেদের এনে দিন। ভারতে থাকা জেলেদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে সংসার চলছে। টাকার অভাবে তাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
ভারতে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি মো. নাসির উদ্দিন মূঠোফোনে জানান, হঠাৎ ঝড়ের কবলে পরে তাদের ট্রলারটি ডুবে যায়। এর পরে তারা ৩৬ ঘণ্টা সাগরে ভাসমান থাকার পরে বাংলাদেশী জলসীমার মধ্যে থেকে ভারতীয় কোস্টগার্ডের একটি জাহাজ তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। বর্তমানে যেখানে তাদেরকে রাখা হয়েছে সেখানে ৩ বেলা খাবার ঠিকমতো দেয়া হয় এবং ভাল করে চিকিৎসাও দেয়া হয় না। এরকম যদি হয় তবে তারা আরো সবাই অসুস্থ হয়ে যাবে। তিনি বাংলাদেশী সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন যাতে তাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবি ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, এসব জেলেদের ফিরিয়ে আনতে জেলে এবং ট্রলার মালিকদের পক্ষ থেকে সকল রকমের খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে এবং জেলেদের কাগজপত্র ভারতীয় দুতাবাসে জমা দেয়া হয়েছে। তাছারা ভারতে গিয়ে জেলেদের খোঁজ খবর নিয়েছি। আমরাও সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি যাতে ভারতে অশ্রয় নেয়া জেলেরা দ্রুত দেশে ফিরে আসতে পারে।
কেএস