যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলেন স্বামী

গাইবান্ধা প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২২, ০১:০৭ পিএম

যৌতুক না পেয়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা সেতুকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন পুলিশ সদস্য স্বামী রাসেল আকন্দ তুষার। স্বামী রাসেলের পরকীয়ার ব্যাপারে জানার পর থেকেই যৌতুকসহ সামান্য ব্যাপার নিয়েই করা হতো অমানুষিক নির্যাতন। এসব বিষয়ে কয়েক দফায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও মেলেনি কোনো সমাধান। ফলে ন্যায় বিচার পাওয়ার স্বার্থে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে রোববার (২ অক্টোবর) সকালে গাইবান্ধায় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন আয়েশা সিদ্দিকা সেতু। নির্যাতিতা সেতু গাইবান্ধার পলাশবাড়ি  উপজেলার ঝালিঙ্গী (ঢোলভাঙ্গা) গ্রামের আহাদুল সরকারের মেয়ে।

সংবাদ সম্মেলনে সেতু লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম এলাকার দেলোয়ার আকন্দের ছেলে পুলিশ সদস্য রাসেল আকন্দ তুষারের সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয় তাদের। বিয়ের পর বেশ কিছুদিন তাদের দাম্পত্য জীবন ভালোই কাটছিল। পরবর্তীতে ২০২০ সালের মাঝামঝি সময়ে সেতুর স্বামী রাসেল পরকীয়ার জড়িয়ে পড়েন। এর পর থেকেই স্বামী রাসেল আকন্দ তার উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করতে থাকে। বিষয়গুলো সেতু তার শ্বশুরের পরিবারকে অবহিত করলেও আশানুরুপ ফল পায়নি সেতু। সেতুর উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের এক পর্যায়ে সেতুর কাছে দুই লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করে স্বামী। তার দাবীকৃত টাকা না দিতে পাড়ায় একই বছরের ৭ অক্টোবর রংপুরের ভাড়া বাসায় সেতুকে লোহার রড দিয়ে এলোপাথাড়ি মারধর করে, গুরুত্বর আহত করে বাসায় ফেলে রাখে। সেতু মৃতপ্রায় অবস্থায় বাসায় পড়ে থাকলেও কোন অবস্থাতেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। পরে রংপুরের ভাড়া বাসার পাশের ভাড়াটিয়ার মাধ্যমে খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন গুরুত্বর আহত অবস্থায় সেতুকে উদ্ধার করে পলাশবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর কিছুটা সুস্থ হলে সেতুর পরিবারের লোকজন আবারো রংপুরের ভাড়া বাসায় আমার স্বামীর কাছে রেখে আসে।

পরে পদোন্নতি জনিত কারণে স্বামী রাসেলের রংপুর থেকে পঞ্চগড়ে বদলি হয়। সেতু থাকে শ্বশুর বাড়িতে। পঞ্চগড়ে যাওয়ার পর থেকেই স্বামী রাসেল স্ত্রী সেতুর সাথে সবধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। কিছুদিন পর বাড়িতে এসে আবারো যৌতুকের ওই দুই লাখ টাকার জন্য মারধর করে সেতুকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এরপর দীর্ঘ চার মাস পর সেতু স্বামী রাসেল ও তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হলে রংপুর ডিআইজি অফিসে সশরীরে উপস্থিত হয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে ডিআইজি তার কর্মস্থল পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন। পরে সেখান থেকে সেতুকে ডেকে নির্যাতনের বিষয়গুলো শোনা হয়। কিন্তু তার পর থেকে আজ অবধি পঞ্চগড়ের পুলিশ অফিস থেকে সেতুর সাথে আর কোন যোগাযোগ করা হয়নি।

এর কিছুদিন পর সেতুকে আবারো শ্বশুর বাড়িতে রেখে আসে তার পরিবার। পরে স্বামী রাসেল আকন্দ ছুটিতে এসে ২০২১ সালে ১১ ডিসেম্বর যৌতুকের ওই দুই লক্ষ টাকার দাবিতে মারধর করে সেতুকে আবারো তার বাবার বাড়িতে এক কাপড়ে পাঠিয়ে দেয় এবং দুলক্ষ টাকা না দেওয়া হলে সংসার করবেনা বলে জানায়। তখন বাধ্য হয়ে গাইবান্ধার আদালতে যৌতুক আইনে মামলা করেন সেতু। এর কিছুদিন পর মামলা চলাকালীন সময়ে রাসেলের পক্ষ থেকে  তালাকনামা পাঠিয়ে দেয় স্বামী রাসেল।

সেতু আরো উল্লেখ করেন, তাদের দুই বছরের বেশি সময় সংসারের পরেও কোনও সন্তান না হওয়ায় তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়েই ডাক্তারি রংপুরে পরীক্ষা করান। পরীক্ষার রিপোর্টে সেতুর গর্ভধারণে কোন সমস্যা না থাকলেও স্বামী রাসেলের সেক্সচ্যুয়াল ত্রুটি ধরা পড়ে। কিন্তু স্বামী রাসেল পরীক্ষার ওই রিপোর্টকে মিথ্যা দাবি করেও সেতুর উপর বিভিন্ন সময়ে নির্যাতন চালায়। এছাড়া স্বামীর এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়গুলো বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দারস্ত হয়ে বিচার চেয়েও বারবার ব্যর্থ হয়েছে সেতু। রাসেলের সহকারী পুলিশ সুপার জ্যাঠাতো ভাই সুমন অনেক ক্ষমতাধর ও রাসেলের পরিবার অনেক অর্থ বিত্তের মালিক হওয়ায় সব জায়গায় টাকা ব্যবহারের কারণে সেতু বারবার ন্যায় বিচার পেতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।

এসএম