চুয়াডাঙ্গায় হঠাৎ করে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সদর হাসপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত) ভর্তি হয়েছে ৩০ জন নতুন রোগী। এছাড়া এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ১৪৫ রোগী।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) রাত ১২ টা পর্যন্ত ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি আছে ৬৩ রোগী। এছাড়া এইদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে দুই শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ আছে।
এদিকে, সদর হাসপাতালের নির্ধারিত ডায়রিয়ার ওয়ার্ডে রোগীর স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে অনেককেই বারান্দা কিংবা করিডোরের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। অন্যান্য রোগীর পাশাপাশি ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের। চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে দেড় বছরের শিশু তাসনিম তিশা। শিশুটির মা জানান, গত দুদিন থেকে পাতলা পায়খানা আর বমি হচ্ছিল মেয়ের। গতকাল সকালে শরীর দুর্বল হয়ে পড়লে দুপুরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করে।
রিজিয়া খাতুন নামে এক নারী বলেন, তিনদিন আগে তার আড়াই বছরের ছেলের হঠাৎ করেই পাতলা পায়খানা শুরু হয়। স্যালাইন খাওয়ানোর পরও কোনো কাজে আসেনি। অবশেষে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর এতটাই চাপ জায়গা না হওয়ায় বারান্দায় বিছানা পাততে হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা যায়।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনজনীত কারণে কয়েক দিন ধরে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। মূলত এই সময়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয়, অনিরাপদ পানি পান করায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। বাইরের খাবার ও বাসি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। শিশুরা বাইরের খাবার বেশি খায়। এসব খাবারে ধুলাবালি থেকে যায়। গরমে খাবার, বিশেষ করে ফাস্টফুড পচে যায়। এছাড়া অনিরাপদ পানি পানের জন্যও ডায়রিয়া হচ্ছে। ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে হলে নিরাপদ পানি পান করা সবচেয়ে জরুরি। বাইরের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. এএসএম ফাতেহ আকরাম বলেন, বর্তমানে সদর হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। জনবল সংকট হলেও চিকিৎসক ও সেবিকারা আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাসিমুখে সেবা দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুদ আছে বলে জানান তিনি।
এসএম