১১ মাসের সফলতা কালীগঞ্জের ওসি গোলাম রসুলের

মো. সাজু মিয়া, কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২২, ০৬:২৬ পিএম

এটিএম গোলাম রসুল ওসি হিসেবে ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ থানায় যোগদানের পর  মাদক, জুয়া, সন্ত্রাস, চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি ও জুলুমবাজের বিরুদ্ধে গ্রহণ করেছেন চ্যালেঞ্জ। প্রথমে তিনি মাদকের আখড়া হিসেবে থানার বিভিন্ন এলাকা চিহ্নিত করে মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় জেলা পুলিশের মাসিক আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে তিনি ৬ষ্ঠ বারের মত জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

এর আগে তিনি ২০০১ সালের ১৯ মে সাব ইন্সপেক্টর হিসেবে রংপুর বিভাগে মেধা তালিকায় ২য় স্থান অধিকার করে পুলিশ একাডেমি, সারদা, রাজশাহীতে ১ বছরের ট্রেনিংয়ের জন্য যোগদান করেন এবং সফলভাবে ট্রেনিং শেষ করে ২০০২ সালে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর থানায় যোগদান করেন।

সৈয়দপুর রেলওয়ে থানায় এসআই হিসেবে যোগদান করে পদোন্নতি পেয়ে অফিসার ইনচার্জের দায়িত্ব পান। ২০০৪ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত র‍্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), উত্তরা, ঢাকায় কর্মরত থাকাকালে শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নান, কালা জাহাঙ্গীর, ডেভিড, প্রকাশ, বিকাশদের সাথে অস্ত্র উদ্ধারে বন্দুক যুদ্ধে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা নিহত হন। এছাড়াও বাংলা ভাইকে গ্রেপ্তারের অভিযানেও তিনি অংশগ্রহণ করেন। জঙ্গিদের গ্রেপ্তারের ঘটনাতে তিনি মূল ভূমিকায় ছিলেন। একাধিক অস্ত্র ও উদ্ধার করে পুরস্কার ও লাভ করেন তিনি।

এটিএম গোলাম রসুল পিবিআইতে থাকাকালে ক্লুলেস হত্যাকাণ্ড মামলায় রহস্য উদঘাটন করাসহ মামলা তদন্তে বাংলাদেশের সেরা তদন্তকারী অফিসার হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।

তিনি দিনাজপুর ডিবির ওসি থাকাকালীন মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করতে যেয়ে উদ্ভূত বন্দুক যুদ্ধে ৩ জন কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়। সেই অভিযানে তিনসহ আরও ২ জন পুলিশ অফিসার আহত হন এবং বিরল থানায় ওসি হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন বেশ সুনাম অর্জন করেন তিনি। তার প্রশংসনীয় ও সাহসিকতা পূর্ণ কাজের জন্য প্রাক্তন আইজিপি ডক্টর জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম তাকে পুরস্কার স্বরূপ পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ পদক আইজিপি ব্যাজ প্রদান করেন।

ওসি এটিএম গোলাম রসুল কালীগঞ্জ থানায় যোগদানের ১১ মাসের মধ্যেই সৎ চিন্তা ও আধুনিক রুচিশীলতার কারণে পুলিশের আচরণ যেমন পাল্টেছে তেমনি বদলে গেছে থানার চিত্র। সহজেই মানুষকে সেবা দিতে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তিনি। ৯৯৯ ফোন কল পাওয়া মাত্রই তার নেতৃত্বে ভিকটিমের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে পুলিশ।

সৃজনশীল ও যুগোপযোগী পরিকল্পনার ফলে থানা ও পুলিশ হয়ে উঠেছে এ উপজেলার মানুষের আস্থার ঠিকানা। তিনি এ থানায় যোগদানের পর থেকেই সাধারণ মানুষকে মানবিক ও জনবান্ধব পুলিশ প্রশাসন হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন করে চমক দেখাতে সক্ষম হয়েছেন।

শুধু তাই নয় তিনি একজন দানশীল ব্যক্তিও বটে। সহজেই মানুষকে সেবা দিতে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তিনি। তার নেতৃত্বে থাকা অত্র থানায় কর্মরত এস.আই, এ.এস.আই ও নারী পুলিশ সদস্যরাসহ থানা এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ শান্তিপূর্ণ বজায় রাখতে লিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।  

সীমান্ত উপজেলা হিসেবে থানা এলাকাকে রেখেছেন যেকোন সময়ের চেয়ে নিরাপদ। রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতেও কঠোর হাতে আইন-শৃঙ্খলা রেখেছেন স্বাভাবিক। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মত-পার্থক্যের ঊর্ধ্বে থেকে সরকারের উন্নয়নমূলক সাফল্যগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে পুলিশি কার্যক্রমকে রেখেছেন বেগবান।

কালীগঞ্জ থানায় যোগদানের ১১ মাসেই তিনি পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জিআর/সিআর ওয়ারেন্টভূক্ত ১০০০ জন, বিভিন্ন মাদক মামলায় ১৮৯ জন, খুনের মামলায় ১৫ জন, সাজা প্রাপ্ত ১০০ জন, জাল টাকা সংক্রান্তে ২ জন এবং নিয়মিত মামলায় ১৮ জন, হত্যা মামলা ৫টি, মাদক মামলা ১৬০টি, সরকারি ভাবমূর্তি নষ্ট করে ষড়যন্ত্র লিপ্ত থাকার ঘটনায় মামলা ৩টি এবং অন্যান্য ধারায় মামলা হয়েছে ১২০টি এবং এ শ্রেণি ও বি শ্রেণির কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ২৮ জনকেসহ মামলার প্রধান আসামিদের গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করতে সক্ষম হয়েছেন। পাশাপাশি ৯৯৯ ফোন পেয়ে ভিকটিম উদ্ধার করেছেন ৮২ জন। ক্লুলেস হত্যা মামলায় ৫ দিনের ব্যবধানে মামলার মুল রহস্য উদঘাটন ও প্রধান আসামি গ্রেপ্তার।

এছাড়া মাদক পরিবহনের মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার মাদকসহ উদ্ধার ১৭৫টি যানবাহন, ৪০০ কেজি গাঁজা, ১১ হাজার ফেন্সিডিল, ৪ হাজার ইয়াবা এবং বিদেশি মদ ২৯ বোতল মাদক উদ্ধার করেছেন তিনি।  

তার সু-কৌশলী দক্ষতায় জনগণের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলে ‘পুলিশ জনগণের সেবক, সেবাই পুলিশের ধর্ম’, পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’ এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

একান্ত আলাপচারিতায় ওসি এটিএম গোলাম রসুল ‘দৈনিক আমার সংবাদকে’ বলেন, জেলা পুলিশ সুপার মহোদয়ের দিক নির্দেশনা মোতাবেক ও স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সহযোগিতায় এ থানায় যোগদানের ১১ মাসে আমি আমার সাধ্যমত দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছি। আগামী দিনে যেন তিনি তার দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেন এজন্য তিনি উপজেলাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।

তিনি উপজেলাবাসীর উদ্দেশ্যে আরও বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের বন্ধু। এ থানায় টাউট ও দালালদের কোনো স্থান নেই। যখনি কোন ঘটনা অনুমান করতে পারবেন আপনারা থানায় খবর দিবেন। কালীগঞ্জ থানা পুলিশ সর্বদা আপনাদের সেবায় নিয়োজিত আছে।

এসএম