ফরিদপুরের নগরকান্দায় আদালতের স্থিতাবস্থা অমান্য করে সন্ত্রাসী কায়দায় এক অসহায় পরিবারের বসত বাড়ি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় প্রতিবাদ করায় লাঠিয়াল প্রতিপক্ষের মারধরের শিকার হয়েছেন ওই পরিবার।
এদিকে আদালতের স্থিতাবস্থা উপেক্ষা করেই ভুক্তভোগীর বাড়ির পথ আটকিয়ে গাছের চারা রোপন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বাড়ি থেকে বের হতে না পেরে চরম মানবেতন জীবন পার করছেন ওই পরিবার। তবে এ ঘটনায় আদালতের আদেশের কপি সংযুক্ত করে থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চরযশোরদী ইউনিয়নের আশফরদী গ্রামে ২৩৪ নং আশফরদী মৌজায় আর.এস-২০২ নং খতিয়ানে ৪৫ শতাংশ জমি ৬০ বছর ধরে ভোগদখল করে আসছেন বাবলু শরিফ নামে এক ব্যক্তি। বছর খানেক আগে হঠাৎ ওই জায়গার মধ্যে ৫ শতাংশ ভুমির মালিকানা দাবি করেন প্রতিবেশী বক্কার শেখ। স্থানীয়রা বক্কার শেখকে কাগজপত্র দেখাতে বললেও তিনি গুরুত্ব দেননি। পরে জোরপূর্বক জমি দখলের পায়তারা চালান। এ নিয়ে বাবলু শরিফের সাথে বক্কার শেখের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। ওই বিরোধের জেরে বাবলু শরিফের পরিবারের উপর বক্কার শেখ, মনির শেখ ও তাদের সহযোগীরা একাধিকবার হামলা করে গুরুতর জখম করেন। এ ঘটনায় নগরকান্দা থানায় একাধিক মামলাও হয়েছে। যা আদালতে বিচারাধিন রয়েছে।
এদিকে বিরোধপূর্ণ ওই জমি নিয়ে নগরকান্দা সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে দেওয়ানী মোকদ্দমা নং ১০৩/২০২১ বিচারাধীন আছে। পরে গত ১৯ সেপ্টেম্বর এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৩৪ নং আশফরদী মৌজায় আর.এস-২০২ নং খতিয়ানের ৪৫ শতাংশ জমির উপর আদালত স্থিতাবস্থা জারি করেন। আদেশে আদালত উক্ত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত, ওই সম্পত্তিতে বিবাদীগণের কোন প্রকার প্রবেশাধিকার ও নির্মাণ কাজ এবং জমি হস্তান্তর না করার নির্দেশ দেন। তবে আদালতের নির্দেশের ৪ দিন পরেই আদেশ অমান্য করে ওই জায়গা গাছ লাগানো ও বেড়া দিয়ে পথ আটকিয়ে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা বলেছেন, বক্কার শেখকে অনেক বলা হয়েছে। তবে তিনি কারো কথাই শোনেনি। গ্রামবাসী কাগজপত্র দেখে আপোষের চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তারা তা মানেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। পরে বাবলু শরিফ আদালতের দ্বারস্থ হলে আদালত নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন। তবে তাও অমান্য করে একজনের ভোগ দখলকৃত জমিতে পেশি শক্তি খাটিয়ে জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। দেখেছি দুই তিনটি গাছের চারা রোপন করেছেন। প্রতিবাদ করতে গেলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করেছেন। এবং আদালতের আদেশ মানি না বলে প্রকাশ্যে জাহির করিতেছেন। আইন আদালত গোনার সময় নেই বলেও হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। এগুলো গায়েল জোর খামখেলালিপনা ছাড়া কিছু নয়।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী বাবলু শরিফ জানান, এখানে আমাদের মোট জমির পরিমাণ ৪৫ শতাংশ। পৈতৃক সূত্রে এই জমি আমরা ৬০ বছর যাবৎ ভোগদখল করছি। কিন্তু কিছুদিন যাবৎ আমাদের জমিতে এসে স্থানীয় বক্কার শেখ নামের এক ব্যক্তিসহ কয়েকজন বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। এ ব্যাপারে আদালত থেকে আমাধের ৪৫ শতাংশের মধ্যে ঢুকতে নিষেধ করেছেন। এবং এই মর্মে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। আদালত থেকে এ বিষয়ে বিবাদীকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আইন অমান্য করে তারা অবৈধভাবে আমাদের জমি জবর দখলের চেষ্টা করছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় আমি তাদের নামে ফের নগরকান্দা থানায় অভিযোগ করছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বক্কারের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।
আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে কি পদক্ষেপ নিয়েছেন, এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নগরকান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাবিল হোসেন বলেন, আমি নিষেধাজ্ঞার কাগজপত্র দেখেছি। আদালত আমাকে কোন আদেশ দেননি। আদালত যদি আমাকে কোন আদেশ দেন তাহলে আমি ব্যবস্থা নিবো। তাছাড়া আমার কিছু করার নেই।
এ বিষয়ে আইন কি বলে জানতে চাওয়া হলে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল বলেন, ওসি যেটা বলেছে সেটা দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য। তিনি হয়তো আইন বোঝেন না, এজন্য এমন কথা বলেছেন। কারণ দেওয়ানী আদালত কখনো সরাসরি থানা পুলিশকে আদেশ দেন না। এমন কোন বিধানও নেই। যেকোন নিষেধাজ্ঞা, স্থিতাবস্থা যাই বলেন না কেনো, আদালত আদেশ দিলে সেটা বাস্তবায়ন করা সকল বিভাগের দায়িত্ব । যদি কোন বিভাগ গাফিলতি করে তার দায়ভার তাদেরই। তবে এক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা যাবে। আইনে বলা আছে, আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে সহায়যোগীতা করা রাষ্ট্রের সকল বিভাগ বাধ্য। তাই ওসির এই বক্তব্য সংবিধানের ১১১,১১২ ও ১৫২ অনুচ্ছেদের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইমাম রাজি টুলু বলেন, আদালতে কপিসহ ভুক্তভোগিকে আমারে কাছে আসতে বলেন। কাজগপত্র দেখে বলতে পারবো কি করা যায়।
কেএস