জেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে অবিরাম ছুটে চলেছেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। যেখানেই যাচ্ছেন, তার কর্ম ও পেশাদারিত্বের মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন সর্বত্র। দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, পথশিশু, কুলি, মুছি, কামার-কুমোর, ফুটপাতের ব্যবসায়ী সবার সাথে হাত মেলাচ্ছেন। মায়ের কোল থেকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে পরম স্নেহে আদর করছেন শিশুকে। হাসিমুখে সবার খোঁজখবর নিচ্ছেন। জিজ্ঞেস করেন, কোনো সমস্যা আছে কীনা? সমস্যা থাকলে সাধ্যের মধ্যে চেষ্টা করেন তাৎক্ষণিক সমাধানের। তিনি লক্ষ্মীপুরের এসপি মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ।
গত ২৩ আগস্ট তারিখে লক্ষ্মীপুরে পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে যোগদান করেন, মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ। যোগদানের পরদিন জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন তিনি। স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও খোলামেলা আলোচনা করেন। সাংবাদিকদের কাছ থেকে জেলার সার্বিক বিষয়ে ধারনা নেন। স্মৃতিচারণ করেন, নিজের মুক্তিযোদ্ধা পিতার কথা। স্মরণ করেন, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ দেশের জন্য আত্মাহুতি দেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। এসময় আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। একজন এসপি হিসেবে সাধারণ মানুষের সেবায় এবং লক্ষ্মীপুরবাসীর নিরাপত্তায় নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দেওয়ার অঙ্গিকার করেন জেলা পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় মোটরসাইকেল চুরি রোধে আন্তঃজেলা চোরচক্রের সক্রিয় সদস্যদের পাকড়াও করে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। এসময় বিভিন্ন থানায় অন্তত ১০টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার এবং চুরির ঘটনার সাথে জড়িত কমপক্ষে ১৫জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এতে গেল দুইমাসে মোটরসাইকেল চুরি হ্রাস পেয়েছে। অস্ত্রসহ ডাকাত দলের বেশ কয়েকজন সদস্যকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অপরদিকে ১১ অক্টোবর দিবাগত গভীর রাতে উত্তরজয়পুর ইউনিয়নে ঘুমন্ত পরিবারকে পুড়িয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এতে ১৭ বছর বয়সী অন্তঃস্বত্তা এক নারী নিহত ও তার মা এবং ভাই অগ্নিদ্বগ্ধ হয়। পরে রাতেই তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরদিন সকালেই এসপি মাহফুজ্জামান আশরাফ জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ’কে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এই ঘটনারও প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় কাজ করছে পুলিশ।
পুলিশ সুপারের ব্যতিক্রমী কাজের দৃষ্টান্ত:
বিগত দেড়মাসে পুলিশ লাইন্সের মেসে খাবারের মান যাচাই করতে কয়েক দফায় সেখানে পরিদর্শনে যান পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ। মেসে পুলিশ সদস্যের সাথে একসাথে বসেই খাবার খান তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, খাবারের মান যেন কোনোভাবে খারাপ না হয়। পুলিশ লাইন্সে যারা খাবার খান- তারা আমাদের ভাই, আমাদের সন্তান। তিনি বলেন, ধনী-গরিব, রিকশাচালকসহ সবাই আমরা মানুষ। আর মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই।
লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, আপনারা পুলিশকে নিজের বন্ধু ভাবুন। পুলিশ শুধু জনগণের বন্ধুই নয়, সেবকও। পুলিশ সবসময়ই জনগণের বন্ধু হিসেবে পাশে ছিল এবং আগামীতেও থাকবে। আপনাদের সহযোগিতায় আমরা লক্ষ্মীপুরকে সত্যিকারের লক্ষ্মী জেলায় রূপান্তর করতে চাই।
কেএস