সোমবার (২৪ অক্টোবর) ছিল তানজিলের বিয়ে। আজ সকালে আসার কথা ছিল বাড়িতে। বাড়িতে এলেন কিন্তু তা লাশ হয়ে। কে ভেবেছিল এমন টা হবে। এক মাত্র পরিবারের উপার্জনক্ষম ছিলেন তানজিল। এই কথা বলেই বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন তার মা।
রোববার (২৩ অক্টোবর) ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের সাইক্ষ্যা ব্রিজে লঞ্চের সাথে ধাক্কা লেগে লঞ্চের ছাদে থাকা পানির ট্যাংকের নিচে পড়ে তানজিল সহ তার দুই বন্ধু নিহত হয়েছে।
তানজিল (২৩) গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নের শাহ আলী মোল্লার ছেলে। তারা দুই ভাই। তিনি ঢাকার গাজিপুরে একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। পাশাপাশি তানজিল বিএ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার তিন বন্ধু হিরা (২৩), সাগর আলী (২৩) ও শাকিল আহমেদ (২৩) তার সাথেই দেশে আসছিলেন বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। এর মধ্যে সাগর আলী ও শাকিল আহমেদ মারা যান।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, তানজিল একজন শান্ত ছেলে। ছোট বেলা থেকেই পরিবারের পাশে থেকে পরিবারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। একটু বড়ো হতেই চলে যান বাবার সাথে গার্মেন্টসের কাজে। কিন্তু তিনি চালিয়ে গেছেন তার পড়াশোনা। আগামীকাল সোমবার (২৪ অক্টোবর) তার বিয়ের তারিখ ছিল। কিছু মার্কেট করে আগেই বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তিনি সাথেও এনেছিলেন অনেক কিছু। ঢাকা থেকে তিন বন্ধু মিলে দেশে আসছিল। আজ রোববার (২৩ অক্টোবর) ব্রিজের সাথে তাদের লঞ্চের ধাক্কায় লঞ্চের উপরে থাকা পানি ভর্তি ট্যাংক পড়ে তানজিল সহ দুই বন্ধুর মৃত্যু হয়। আরেক বন্ধু হিরার অবস্থা আশঙ্কা জনক হওয়ায় ঢাকায় পাঠানো হয়।
তানজিলের বাবা শাহ আলী মোল্লা বলেন, আমার ছেলে ছিল আমার রত্ন। কখনও ভাবিনি এভাবে আমাদের ছেলে চলে যাবে। সব সময় বলত আমাদের উন্নতি হবে একদিন। আমার ছেলে এখন আামাদের ছেড়ে চলে গেছে। কাল তার বিয়ে ছিল। আজ তার গায়ে হলুদ। কিভাবে মানাবো এই মনকে। যে ছেলে আমার চলে গেছে।
তানজিলের চাচা আলতাফ মোল্লা বলেন, কাল ভাতিজার বিয়ে ছিল। আমাদের বাড়িতে আনন্দের রব চলছিল। কাল রাতে লঞ্চে উঠেছে দেশে আসবে বলে। কিন্তু রাতে লঞ্চের পানির ট্যাংক পড়ে আমার ভাতিজা চলে গেল। তার সাথে তার দুই বন্ধুও। আমার ভাই এখন কথা বলতে পারছে না। আমাদের আনন্দের বাড়িতে এখন শোকের মাতল ছাড়া কিছুই নেই।
গোসাইরহাট থানা পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত মোঃ ওবায়েদুল হক মুঠোফোনে বলেন, কাল ছিল তানজিলের বিয়ে। বিয়েতে তার সাথে তার তিন বন্ধুও আসে। নিহতরা গাজীপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করত। তানজিল পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ ঘটনায় লঞ্চের সুপারভাইজার এমরান হোসেন নান্নু ব্যাপারী ও মাস্টার মো. নুরুজ্জামানকে থানা হাজতে রাখা হয়েছে।
কেএস