ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে তছনছ সেই ভাসমান সেতু, চলাচল বন্ধ

এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২২, ১২:২১ পিএম

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার ভাসমান সেতুটি ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। উপজেলার টগরবন্ধ ইউনিয়নে টিটা এলাকায় মধুমতি নদীর বাঁওড়ে ড্রামের ওপর নির্মাণ করা হয় ভাসমান সেতুটি।

ঝড়ে সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ায় প্রায় দশটি গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। পুনরায় সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করতে প্রায় দশ লাখ টাকা প্রয়োজন। তাৎক্ষণিক এতো টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয় বলে সেতুটি চালুর অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার(২৫ অক্টোবর) ভোর থেকে সেতু দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এর আগে সোমবার রাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সেতুটির রেলিং,পাটাতন ভেঙ্গে লন্ডভন্ড হয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার টগরবন্ধ ইউনিয়নের টিটা গ্রামে মধুমতি নদীর বাঁওড়ের ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি ছিলো দীর্ঘদিনের। স্থানীয় কয়েকটি গ্রামের মানুষের অর্থ সহায়তায় ২০২০ সালে সেতুটি নির্মান ও চালু করা হয়। পৌনে ৯ হাজার ফুট লম্বা ও ১২ ফুট চওড়া সেতুটি গ্রামের মানুষ নিজ উদ্যোগে তৈরি করেছেন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ টাকা।

উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়ন ছাড়াও আশপাশের ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের ভোগান্তি দূর করে সেতুটব। শুধু তাই নয়, ভাসমান সে সেতুটি দেখতে ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাগুরা, যশোর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ জেলা থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার শত-শত মানুষ এসে ভিড় জমাতো সেতুটি দেখতে।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ১০টি গ্রামের প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ প্রতিদিন মধুমতি নদীর বাঁওড়ে নির্মিত ভাসমান সেতুটি দিয়ে পারাপার হতেন। ঝড়ে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছে এসব এলাকার হাজারো মানুষ।

এ ব্যাপারে সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণের দ্বায়িত্বে থাকা মোঃ রেজওয়ান হোসেন জানান, বর্তমানে সেতুটি দিয়ে চলাচল একেবারে বন্ধ গেছে। ঝড়ে সেতুটির রেলিং ও পাটাতনের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটি মেরামতের পর চালু করতে কমপক্ষে দশ লাখ টাকা প্রয়োজন। টাকা জোগাড় হলে সেতুটি মেরামত করা সম্ভব। তবে টাকার অভাবে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে টগরবন্দ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইমাম হাসান শিপন বলেন, এ অঞ্চলে কলেজ, উচ্চবিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক ও পোস্ট অফিস রয়েছে। নানা প্রয়োজনে মানুষকে এখান দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। বহু আবেদন-নিবেদন করার পরও ওই স্থানে কোনো সেতু নির্মাণ না হওয়ায় আমরা টিটা খেয়াঘাট এলাকায় চার টন ক্ষমতাসম্পন্ন এ ভাসমান সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

গত সোমবার রাতে ঘুর্ণিঝড়ে সেতুটির রেলিং, পাটাতন সহ বিভিন্ন ক্ষতি হয়। বর্তমানে সেতুটি দিয়ে পারাপার একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন করে সেতুটি মেরামত ও চালু করতে প্রায় দশ লাখ টাকা প্রয়োজন। এই মুহূর্তে এতো টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করে টাকার জোগাড় করতে হবে। যতোদিন টাকার জোগাড় করা সম্ভব হবে না, ততোদিন সেতুটি বন্ধ রাখতে হবে। তবে কবে নাগাদ চালু হবে ঠিক নেই। এতে প্রায় দশটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ এ কে এম জাহিদুল হাসান বলেন, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে সেতুটি ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেছে। বর্তমানে চলাচল বন্ধ। মেরামতের জন্য অর্থ প্রয়োজন। স্থানীয় ও সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সাধ্য মতো সাহায্য সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।

এআই