ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে মুষলধারে মৌসুমের সর্বোচ্চ রেকর্ড সংখ্যক বৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে প্লাবিত হয়েছে বরিশাল সহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের নিন্মাঞ্চল। যে কারণে অনেকস্থানেই প্লাবনের পানিতে পুকুর, ঘের, দিঘী তলিয়ে চাষের মাছ বের হয়ে গেছে। এতে করে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন মৎস্য চাষীরা।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) সকালে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে ক্ষয়ক্ষতিরপ্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, গোটা বিভাগের ছয় জেলায় ১ হাজার ৫৭৩ হেক্টরের ১২ হাজার ১২টি পুকুর, দিঘী, খামার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এরফল ১১ হাজার ১৮৯জন মৎস্য চাষী ও খামার মালিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
সূত্রমতে, ক্ষতির ধরন ও পরিমাণের মধ্যে ১৭শ’ ৩০ মেট্রিক টন মাছ ও ৭১ লাখ পোনা রয়েছে। সবমিলিয়ে ২৬ কোটি ৬২ লাখ ২১ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। তবে এ হিসেব প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যানুযায়ী তাই সঠিকভাবে তথ্য নিরুপন করলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় মৎস্য অফিসের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন।
৩১শ’ ৪১ টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত: সিত্রাং এর প্রভাবে বরিশালে ৩১শ’ ৪১টি ঘর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এরমধ্যে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মেঘনা নদী তীরের হিজলা উপজেলায়। ক্ষতিগ্রস্থ ঘরবাড়ির মধ্যে ২৫শ’ আটটি আংশিক ও ৬৩৩টি ঘর বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মোঃ জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলায় ৩৫টি, গৌরনদীতে ১১৫টি, উজিরপুরে ১৫০টি, বানারীপাড়ায় একশ’টি, বাবুগঞ্জে ১০৫টি, মুলাদীতে ৬০টি, হিজলায় দুই হাজার দুইশ’টি, মেহেন্দিগঞ্জে ১৩২টি, বরিশাল সদর ও মহানগরে ৬০টি এবং বাকেরগঞ্জে ১৮১টি ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুতের ক্ষয়ক্ষতি তিন কোটি টাকা: নেটওয়ার্ক সমস্যা ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মধ্যদিয়েই বরিশালের মানুষ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাব মোকাবেলা করেছেন। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কেটে যাওয়ার পর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বরিশাল জোন প্রাথমিকভাবে তাদের ক্ষয়ক্ষতির একটি হিসেব তুলে ধরেছেন। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বরিশাল জোনের তত্ত্বাধায়ক প্রকৌশলী দীপঙ্কর মন্ডল জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে বরিশাল জোনের আওতায় ছয়টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (বরিশাল-১, বরিশাল-২, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখাল ও ভোলা) এর প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী ক্ষয়ক্ষতির পরিমান দুই কোটি ৯৫ লাখ ৬৭ হাজার ১৩০ টাকা। ঘূর্ণিঝড়ে বিভাগের ছয়টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন এলাকায় মোট ৩৩২টি বৈদ্যুতিক পোল ভেঙ্গে গেছে, ৫৮২টি ক্রম আর্ম ভেঙ্গেছে, ১১৯টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে, ৩ হাজার ৮৩ স্পটে তার ছিড়ে গেছে, ১ হাজার ৭১৪টি মিটার নষ্ট হয়েছে এবং ৪৯৫টি ইনসুলেটর ক্রাক হয়েছে।
এআই